দক্ষিণেশ্বরে অমিত শাহ। পিটিআই।
শুধু রাজনীতি নয়, করোনা-আবহে মাস্ক ছাড়া সফর নিয়েও বিতর্কের মুখে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। শুক্রবার প্রথমে দক্ষিণেশ্বর মন্দির এবং পরে সঙ্গীতশিল্পী পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর বাড়িতে একাধিকবার মাস্ক ছাড়াই দেখা গিয়েছে অমিতকে। সঙ্গত কারণেই তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। সেই প্রশ্ন আরও জোরাল হয়েছে অমিত নিজে এর আগে করোনায় আক্রান্ত হওয়ায়। তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় যেমন বলেছেন, ‘‘এটা অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ।’’ তবে শুধু তৃণমূলই নয়, গোটা ঘটনাপ্রবাহে অমিতের ‘দায়িত্বজ্ঞান’-এর অভাব দেখছেন চিকিৎসকরাও।
গোটা দেশে ধর্মীয় স্থান খোলার অনুমতি দিলেও অমিতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকই গাইডলাইন প্রকাশ করে জানায়, সর্বত্র মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। একইসঙ্গে, সামাজিক দূরত্ববিধি মেনে একসঙ্গে অনেকর ভিড় করার উপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। সেই নিয়ম এখনও চলছে। কিন্তু সেই বিধি যে এ দিন খোদ অমিতই মানেননি, তা তাঁর সফরের বিভিন্ন ছবিতেই স্পষ্ট। সদ্য করোনা থেকে সেরে ওঠা রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ-সহ অমিতের অন্যান্য সঙ্গী মাস্ক পরে থাকলেও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখ বেশিরভাগ সময়েই ছিল নিরাবরণ। মাস্কহীন অবস্থাতেই তিনি দক্ষিণেশ্বরে পুজো দেন, আরতি করেন। পরে সাংবাদিক সম্মেলনেও তাঁর মুখে ছিল না মাস্ক।
একই ছবি দেখা গিয়েছিল বৃহস্পতিবারও। বাঁকুড়ায় দলীয় বৈঠকে তো বটেই, শহরে বিরসা মুণ্ডার মূর্তিতে মালা দেওয়ার সময়েও অমিতের মুখে মাস্ক ছিল না। তাঁকে ঘিরে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের ভিড়েও করোনাকালের নিয়ম মানা হয়নি। এ নিয়ে সরব হন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাঁকুড়ায় অমিত কেন মাস্ক পরেননি, তা নিয়ে নির্দিষ্ট কোনও প্রশ্ন না তুলে বা কোনও দলের নাম নির্দিষ্ট করে না-বললেও করোনা পরিস্থিতিতে রাজ্যে কয়েকটি দল ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ’ করছে বলে মন্তব্য করেন মমতা। নবান্নে প্রশাসনিক বৈঠকে তিনি সরাসরিই বলেন, ‘‘দু’একটা রাজনৈতিক দল মহামারির নিয়ম মানছে না দেখা যাচ্ছে। তাদের উদ্দেশে বলব, কোভিড স্প্রে করবেন না প্লিজ!’’ যারা মহামারির নিয়ম মানছে না, তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ যাতে ব্যবস্থা নেয়, সেই নির্দেশও দেবেন বলে জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
কলকাতায় পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর গানের স্কুলে অমিত শাহ।
গত অগস্টে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন অমিত। ২ অগস্ট রিপোর্ট পজিটিভ আসার পরে ভর্তি হন দিল্লির কাছে গুরুগ্রামের মেদান্ত সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে। এর পরে ১৪ অগস্ট রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরলেও রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ায় ১৮ অগস্ট ফের তাঁকে দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্স (এমস)-এ ভর্তি করানো হয়। ছিলেন ৩১ অগস্ট পর্যন্ত। এর পরে ফের শ্বাসকষ্টজনিত কষ্ট নিয়ে এমসে তাঁকে ভর্তি হতে হয়েছিল ১৩ সেপ্টেম্বর রাতে। চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একবার করোন আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হওয়ার পরেও সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে। অ্যান্টবডি তৈরি হলেও তা কতদিন কার্যকর থাকে, তা-ও নিশ্চিত করে বলা যায় না। ফলে সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনা থেকেই যায়। এই পরিস্থিতিতে অমিত রাজ্যসফরে এসে কী ভাবে মাস্ক ছাড়াই বিভিন্ন কর্মসূচিতে যোগ দিচ্ছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সমালোচনাও হয়েছে। যেমন আনন্দবাজার ডিজিটালকে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেছেন, ‘‘অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞাহীন কাজ। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মাস্ক না পরে ঘোরাটা সাধারণ মানুষকে ভুল বার্তা দেবে।’’
আরও পড়ুন: অমিতের মুখে ‘তোষণ-অভিযোগ’ দক্ষিণেশ্বরে, সৌগত শেখালেন ‘যত মত তত পথ’
আরও পড়ুন: লাদাখে শুরু সেনা স্তরের বৈঠক, বৃহত্তর সঙ্ঘাতের ইঙ্গিত জেনারেল রাওয়তের
‘দাযিত্বজ্ঞান’-এর অভাব দেখছেন চিকিৎসকরাও। চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামীর বক্তব্য, ‘‘একদমই ঠিক কাজ করেননি অমিত শাহ। উনি একবার করোনা আক্রান্ত হয়েছেন মানে ওঁকে আর মাস্ক পরতে হবে না, এটা ভাবা ঠিক নয়। ওঁর অ্যান্টিবডি লেভেল কতটা, তা তিনি নিশ্চিয়ই জানেন না। সেটা নির্দিষ্ট ভাবে জানা সম্ভবও নয়। আর একবার আক্রান্ত হলে দ্বিতীয়বার সংক্রমণের ভয় নেই— এমন কোনও তথ্য এখনও বিজ্ঞানী বা চিকিৎসকদের কাছে নেই। অনেকেই পরে আক্রান্ত হচ্ছেন। কেউ কেউ আংশিক আক্রান্ত হচ্ছেন।’’ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে অমিতের আরও বেশি করে মাস্ক পরে থাকা উচিত বলেও মন্তব্য ওই চিকিৎসকের। তাঁর কথায়, ‘‘করোনাভাইরাস ভিআইপি বা সাধারণ মানুষ দেখে না। সে শুধু মানুষ দেখে। প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী— সকলে তার কাছে সমান। বিপদ সকলের জন্যই সমান। বরং যাঁরা দায়িত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন, তাঁদের বেশি করে দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকা উচিত। সেটা বাকিদের শেখাবে।’’ তবে অমিত কেন টানা মাস্ক ব্যবহার করেননি, তা নিয়ে বিজেপি-র তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। সম্ভবত অমিতের সফর নিয়ে ব্যস্ততার কারণে রাজ্যনেতৃত্বের কেউই ফোন ধরেননি।