অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
পদত্যাগী মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ শানাতে এ বার আসরে নেমে পড়লেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সরাসরি নাম না-করলেও অভিষেককে তৃণমূলে ‘প্যারাশুটে নামা ও লিফ্টে ওঠা’ নেতা হিসেবে খোঁচা দিয়েছিলেন শুভেন্দু। সেই অভিযোগ গায়ে মেখে রবিবার অভিষেকের জবাব, ‘‘প্যারাশুটে নামলে নিজের এলাকা দক্ষিণ কলকাতার সাংসদ হতাম। আর লিফ্টে উঠলে ৩৫টা পদের অধিকারী হতাম।’’
উল্লেখ্য, শুভেন্দু সাংসদ ও বিধায়ক হয়েছেন তাঁর নিজের জেলা পূর্ব মেদিনীপুর থেকে। আর মন্ত্রী হিসেবে তাঁর হাতে ছিল অনেকগুলি দফতর। তিনি উন্নয়ন পর্ষদ-সহ একাধিক সংস্থার মাথায় ছিলেন। তা ছাড়া তৃণমূলে পর্যবেক্ষক পদ থাকাকালীন অন্তত পাঁচটি জেলার দায়িত্ব ছিল তাঁর হাতে।
তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে শুভেন্দুর দূরত্ব তৈরি হওয়ার নেপথ্যে বার বার ভেসে উঠেছে অভিষেকের নাম। যদিও শুভেন্দুর ঘনিষ্ঠ মহলের মতে, অভিষেক ও তাঁর হাত ধরে আসা তৃণমূলের ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের জন্য দলে নানা রকম সমস্যা তৈরি হচ্ছে। অনেকেই কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন। শুভেন্দু তাঁদের অন্যতম।
আরও পড়ুন: লড়াইয়ের বার্তা নিয়েও নীল-সাদা সাজে শুভেন্দু
প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে বিজেপির শীর্ষ নেতারা বার বার ‘ভাইপো’ বলে আক্রমণের নিশানা করেছেন সাংসদ অভিষেককে। নিজের লোকসভা কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারে এ দিন জনসভায় সেই প্রসঙ্গ টেনে তাঁদেরও চ্যালেঞ্জ করে অভিষেক বলেন, ‘‘সরাসরি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম নেওয়ার বুকের পাটা নেই প্রধানমন্ত্রীর। বিজেপির ছোট, বড়, মেজো নেতাদেরও নেই। যাঁরা নিয়েছিলেন, আদালতে তাঁদের জবাব দিয়েছি। আবার নিলে আদালতে জবাব দেব।’’ এই সূত্রেই নাম করেই যুব তৃণমূল সভাপতি বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে ‘গুন্ডা’, ‘মাফিয়া’ ও অমিত শাহ, কৈলাস বিজয়বর্গীয়দের ‘বহিরাগত’ বলে আক্রমণ করেন। কড়া বিশেষণে অভিযুক্ত করেন কৈলাসের ছেলে আকাশকেও।
আরও পড়ুন: নাগরিকত্বের জন্য মতুয়াদের ভিক্ষা চাইতে হচ্ছে কেন, হুঙ্কার সাংসদ শান্তনুর
শুভেন্দু মন্ত্রিত্ব ছাড়ার পরে রাজ্য রাজনীতি, বিশেষ করে তৃণমূলে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে অভিষেকের এ দিনের সভা ছিল কার্যত তারই মোকাবিলা। শুভেন্দুর নাম না করলেও তাঁর মন্ত্রিত্ব ছাড়ার দিকে ইঙ্গিত করে অভিষেক বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূলকর্মীদের কাছে জন্মদাত্রী মায়ের মতোই। রাজনৈতিক জীবনে বড় হওয়ার সুযোগ তিনিই দিয়েছেন। মায়ের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা তৃণমূল কর্মীরা সহ্য করবেন না। উচ্চাকাঙ্ক্ষার জন্য অন্য দলের তাঁবেদারি করলে তাঁরা কড়ায়-গণ্ডায় জবাব দেবেন।’’ পাশাপাশি, ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রে তিনি কী ভাবে ‘পরিশ্রম’ করে নিজের জমি তৈরি করেছেন, তা-ও ব্যাখ্যা করেন অভিষেক।
শুভেন্দু অবশ্য এ দিনও দল ও সরকার সম্পর্কে মন্তব্য করেননি। অভিষেকের অভিযোগের কড়া জবাব দিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘তোমরা অনেক গুন্ডামি করেছ। এ বার আমার গুন্ডামি দেখ। এখন আমাদের সময়। আমরা গুন্ডামি করব।’’ নাম করা নিয়ে অভিষেকের চ্যালেঞ্জের জবাবে দিলীপ বলেন, ‘‘নাম নেওয়ার দম আছে কি না, ডিসেম্বর মাসেই দেখিয়ে দেব।’’