বছরের প্রথম আড়াই মাসেই ৩১!
গোটা শীতকালটা বৃষ্টি হয়নি। কালবৈশাখী এখনও মুখ ফিরিয়ে রয়েছে। তাতেই কিছুটা নিশ্চিত ছিল প্রশাসন। কিন্তু সেই নিশ্চিন্তে থাকাটাই বোধ হয় কাল হল।
স্বাস্থ্য ভবনের তৈরি মার্কশিটে দেখা যাচ্ছে, ২০১৮-র ১ জানুয়ারি থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ৩১। এর মধ্যে বিধাননগর পুর এলাকায় আক্রান্ত ১২ জন।
গত বছরের ভয়াবহ পরিস্থিতি যাতে এ বার না হয়, সে জন্য বছরের গোড়া থেকেই মশা নিয়ন্ত্রণে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তাতে যে কাজ হয়নি, স্বাস্থ্য ভবনের পরিসংখ্যানই তা স্পষ্ট করে দিল। সোমবার বারাসতে পুরসভা, পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক ডেকে স্বাস্থ্য কর্তাদের উপস্থিতিতে ডেঙ্গির পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়। আক্রান্তদের মধ্যে দু’বছরের শিশুও রয়েছে।
বিধাননগর পুরসভার যে সব এলাকায় ডেঙ্গি ছড়িয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে রাজারহাট-গোপালপুরের গৌরাঙ্গনগর ও সিদ্ধার্থনগর কলোনি। সল্টলেকের অরুণাচল ভবন, সেচ ভবন এবং সেন্ট্রাল পার্ক সংলগ্ন এলাকাতেও ডেঙ্গি ছড়িয়েছে বলে স্বাস্থ্য ভবনের রিপোর্টে বলা হয়েছে।
স্বাস্থ্য ভবনের তথ্য নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন তুলেছে বিধাননগর পুরসভা। এক পুর কর্তার বক্তব্য, ‘‘স্বাস্থ্য ভবন এই তথ্য কী ভাবে পেল, বুঝতে পারছি না।’’ বিধাননগর পুরনিগমের মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) প্রণয় রায় বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য ভবনের ই-মেল পেয়েছি। তালিকায় নাম থাকা এক জনের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, তাঁর রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গি ধরা পড়েনি। বাকিদের সঙ্গেও কথা বলব। সব রকম ব্যবস্থা নিচ্ছি।’’
তাঁদের দেওয়া তথ্য যে ঠিক, তা দাবি করে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানান, সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের রিপোর্টের ভিত্তিতে স্বাস্থ্য ভবন এই তথ্যপঞ্জি তৈরি করেছে। কিছু ক্ষেত্রে ঠিকানা নিয়ে সমস্যা থাকলেও, সংখ্যায় ভুল নেই।
বিধাননগর ছাড়া আর যে পুর এলাকায় ডেঙ্গি ছড়িয়েছে তার মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ দমদম, উত্তর দমদম এবং বরাহনগর পুর এলাকা। গ্রামীণ এলাকাগুলির মধ্যে দেগঙ্গা, বাগদা, যুগবেড়িয়া এবং ব্যারাকপুর দু’নম্বর ব্লকে ডেঙ্গি রোগীর সন্ধান মিলেছে।
উত্তর দমদমে আক্রান্ত দু’জনের বাড়ি সাবিত্রী পল্লি এবং ফতুল্লাপুরে। পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের এক আধিকারিক জানান, দু’সপ্তাহ আগে ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের এক বাসিন্দার জ্বর হয়েছিল। রক্তপরীক্ষার পরে ডেঙ্গি ধরা পড়েছে। মঙ্গলবার উত্তর দমদমের ১৪ এবং ৩৪ নম্বর ওয়ার্ড পরিদর্শন করেন স্বাস্থ্যভবনের প্রতিনিধিরা। পুরসভা সূত্রের খবর, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে নির্মীয়মাণ বাড়িতে ডেঙ্গির বাহক এডিস ইজিপ্টাই মশার লার্ভা মিলেছে। ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে মজে যাওয়া পুকুরে মিলেছে ওই মশার লার্ভা।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ কি তা হলে মানেনি পুরসভা? প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে উত্তর দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ (স্বাস্থ্য) মহুয়া শীল বলেন, ‘‘ঘরে ঘরে সমীক্ষার কাজে আরও নজরদারি প্রয়োজন।’’
এত ডেঙ্গি রোগী শনাক্ত হওয়ার পরেও জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার মন্তব্য, ‘‘মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত আক্রান্তের যে সংখ্যা মিলেছে তা সারা জেলার নিরিখে খুব বেশি নয়। এখনই উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।’’ স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘গত বছরের মতো এ বারেও ডেঙ্গি নিয়ে প্রকৃত তথ্য অস্বীকার করার চেষ্টা চলছে।’’ এতেই ফের বড়সড় বিপদের আশঙ্কা করছেন তাঁরা।