সরকারি ভবনের বকেয়া করের বোঝায় নাজেহাল পুরসভা

সরকারকে ফাঁকি সরকারি দফতরেরই! বিভিন্ন সরকারি সংস্থার বকেয়া সম্পত্তি করের বোঝা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে ডায়মন্ড হারবার পুরসভা। শহরের বুকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা একাধিক সংস্থার ভবনের সম্পত্তি কর বাকি রয়েছে প্রায় সতেরো বছরেরও বেশি সময় ধরে। বকেয়া করের পরিমাণ বাড়তে বাড়তে এখন তা প্রায় দেড় কোটি টাকার কাছাকাছি পৌঁছেছে। এই পরিস্থিতির জেরে মার খাচ্ছে পুর পরিষেবা, আটকে যাচ্ছে শ্রমিকদের মাইনে, ভুগছেন সাধারণ মানুষ।

Advertisement

শান্তশ্রী মজুমদার

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:২৬
Share:

সরকারকে ফাঁকি সরকারি দফতরেরই!

Advertisement

বিভিন্ন সরকারি সংস্থার বকেয়া সম্পত্তি করের বোঝা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে ডায়মন্ড হারবার পুরসভা। শহরের বুকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা একাধিক সংস্থার ভবনের সম্পত্তি কর বাকি রয়েছে প্রায় সতেরো বছরেরও বেশি সময় ধরে। বকেয়া করের পরিমাণ বাড়তে বাড়তে এখন তা প্রায় দেড় কোটি টাকার কাছাকাছি পৌঁছেছে। এই পরিস্থিতির জেরে মার খাচ্ছে পুর পরিষেবা, আটকে যাচ্ছে শ্রমিকদের মাইনে, ভুগছেন সাধারণ মানুষ।

পুর কর্তৃপক্ষ বছর বছর চিঠি দিয়েও আদায় করতে পারছেন না বকেয়া কর বাবদ বিপুল পরিমাণ টাকা। নিরীক্ষা বিভাগের হিসেব বলছে, ২০১৩-১৪ আর্থিক বছরের শেষে সরকারি সংস্থার বকেয়া কর বাবদ টাকার পরিমাণ ১ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা। কর আদায় করতে নাজেহাল পুরপ্রধান মীরা হালদার বলেন, “টাকা চেয়ে বার বার চিঠি দেওয়া হয় এই সমস্ত সংস্থার কর্তাদের। প্রতিনিধিরা পুরসভায় এলে তাঁদের মৌখিক ভাবেও বলা হয়েছে। কিছুতেই বোঝাতে পারছি না, এর জন্য পানীয় জল, রাস্তার কাজ ঠিক ভাবে করা যাচ্ছে না। কেউ এলাকায় আলো চাইলে দিতে পারছি না।”

Advertisement

গত মাসে পুরসভার ঠিকা শ্রমিকদের মাইনেও আটকে গিয়েছিল ওই একই কারণে। পুরসভার একটি সূত্র জানাচ্ছে, জঞ্জাল সাফাই, নর্দমা পরিষ্কার-সহ নানা কাজে ১৬টি ওয়ার্ডে নিযুক্ত শ্রমিকদের মাইনে হয় সরকারি বড় সংস্থা থেকে আসা করের টাকাতেই। অক্টোবরে শ্রমিকদের মাইনের বিল মাস্টার রোলের মাধ্যমে পুরসভায় জমা পড়লেও তাঁদের মাইনে দিতে অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছিল।

পুরসভা সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারি প্রায় ২০টি সংস্থা টাকা দিচ্ছে না বলে পুর কর্তৃপক্ষের অভিযোগ। এগুলির মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের রেলওয়ে, টেলিফোন এক্সচেঞ্জ ছাড়াও রাজ্য সরকারের আওতায় বিদ্যুত্‌, হাসপাতাল, আদালত, পুলিশ, ভূমি সংস্কার, সংশোধনাগার, অগ্নি নির্বাপণ, সেচ এবং জেলা পরিষদের মতো সংস্থার ভবনও অন্তর্ভুক্ত।

নিকাশি এবং যানজট নিয়ে বরাবরের সমস্যা রয়েছে ডায়মন্ড হারবার পুর এলাকায়। তহবিলে টান থাকায় সে সব ক্ষেত্রে বাড়তি নজর দেওয়া যাচ্ছে না বলে দাবি করছেন পুর কর্তৃপক্ষ। বিভিন্ন জায়গায় নর্দমা অপরিষ্কার হয়ে পড়ে থাকছে। মাইনে দেরিতে পাওয়ার জন্য ঠিকা শ্রমিকরা ঠিক মতো কাজও করতে পারছেন না সে সব ক্ষেত্রে। পুর কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছেন সার্বিক ভাবে বিভিন্ন পরিষেবা মার খাচ্ছে বেশ কিছু ওয়ার্ডে।

বকেয়া করের তালিকায় প্রথমেই রয়েছে ডায়মন্ড হারবার হাসপাতাল। সুপার আনোয়ার হোসেন বলেন, “পুরসভার কর দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য দফতর থেকে সুনির্দিষ্ট খাতে বরাদ্দ টাকা আসে। যখন যেমন আসে, টাকা দিয়ে দিই। তবে এই বিশাল বকেয়া টাকার অঙ্ক সম্পর্কে স্বাস্থ্য দফতরে চিঠি পাঠানো হয়েছে।” হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পাল্টা অভিযোগ, জল, আলো, নিকাশি পুরসভার এই তিনটি প্রধান পরিষেবা থেকেই হাসপাতাল বঞ্চিত।

ও দিকে, সেচ দফতরের বকেয়া নিয়ে কথা বলতে চাননি ডায়মন্ড হারবারের দায়িত্বে থাকা এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র। থানা এবং মহকুমাশাসকের টাকা পূর্ত দফতর দিয়ে থাকে। পূর্ত দফতরের ডায়মন্ড হারবার ডিভিশনের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার ১ রাম চন্দ বলেন, “টাকা এলে দেওয়া হবে। কবে টাকা আসবে তা এখন বলা সম্ভব নয়।” এসডিপিও এবং মহকুমা টেলিকম ইঞ্জিনয়ারেরাও এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি। তবে এসডিপিও দফতর সূত্রে দাবি করা হয়েছে, স্বরাষ্ট্র দফতরের পক্ষ থেকে থানা এবং মহকুমা পুলিশ অফিসারের দফতরগুলিতে জরুরি (কন্টিনজেন্সি) তহবিলের ব্যবস্থা থাকে না। এই সমস্ত ক্ষেত্রে জেলা সদর থেকেই টাকা আসে বা এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জেলা পুলিশ সুপারের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা যায়নি।

ডায়মন্ড হারবারে সরকারি বকেয়া

• মহকুমা হাসপাতাল: ১৯ লক্ষ ২৩ হাজার টাকা

• সেচ দফতর: ১৫ লক্ষ ৩৯ হাজার টাকা

• মহকুমাশাসকের অফিস: ১৪ লক্ষ ৭ হাজার টাকা

• টেলিফোন এক্সচেঞ্জ: ১৩ লক্ষ ৭৭ হাজার টাকা

• এসডিপিও অফিস: ১২ লক্ষ ৫৩ হাজার টাকা

• মহকুমা দেওয়ানি বিচারকের কার্যালয়: ১০ লক্ষ ৪ হাজার

• মহকুমা মুন্সেফ ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয়: ৬ লক্ষ ৯ হাজার

• দমকল: ৪ লক্ষ ৭০ হাজার

• রেল: ২ লক্ষ ৪১ হাজার টাকা

হিসেব এ বছর মার্চ মাস পর্যন্ত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement