শিয়রে পুরভোট। তার কিছু আগে এ বার উপনির্বাচনে গতবারের লোকসভার তুলনায় বনগাঁ শহরে ভাল ফল করল তৃণমূল। তৃণমূল প্রার্থী মমতা ঠাকুরের লিড শহর থেকে বেড়েও গিয়েছে। বনগায়ঁ পুরসভার ভোটের মুখে এ বারের এই ফল স্বস্তি দিচ্ছে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বকে। তবে এই শহরে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের প্রসঙ্গ তুলে বিরোধীদের দাবি, পুরভোটের সমীকরণ এত সহজ হবে না।
উপনির্বাচনে ফল বের হওয়ার আগের কয়েকটা দিন তৃৃণমূল সংশয়ে ছিল শহরের ফল নিয়ে। গত লোকসভা ভোটে বনগাঁ শহর এলাকায় বিজেপির উত্থান চিন্তায় রেখেছিল তৃণমূল নেতৃত্বকে। প্রকাশ্যে বিজেপি নিয়ে নিজেদের উদ্বেগের কথা তারা স্বীকার না করলেও ঘরোয়া আলোচনায় সিপিএম নয়, বিজেপির উত্থান নিয়েই আলোচনা চলছিল।
২০১১ সালে বিধানসভা ভোটের থেকে শহরে লোকসভায় বিজেপির ভোট এক ধাক্কায় বেড়ে যায়। এ বার তা কমে গিয়েছে। ভোট কমেছে বামেদেরও। ভোট কেবল বেড়েছে তৃণমূলের। বনগাঁ শহর তৃণমূল সভাপতি শঙ্কর আঢ্যের কথায়, “উপনির্বাচনে ভাল ফলের প্রভাব পড়বে পুর নির্বাচনেও। উন্নয়নের প্রশ্নে মানুষ তৃণমূলকে ভোট দিয়েছেন। পুরভোটেও উন্নয়নকে সামনে রেখেই আমরা মানুষের কাছে ভোট চাইব।”
গত লোকসভার মতো এ বারও পুরসভার ২২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৭টি ওয়ার্ডে এগিয়ে রয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী। পুরএলাকার মোট ১০৮টি বুথের মধ্যে গত লোকসভায় বিজেপি প্রার্থী কেডি বিশ্বাস তিনটি বুথে এগিয়ে ছিলেন। এ বার বিজেপি প্রার্থী সুব্রত ঠাকুর এগিয়ে রয়েছেন একটিমাত্র বুথে। লোকসভায় সিপিএম এগিয়ে ছিল ৩১টি বুথে, এ বার তা কমে হয়েছে ২৫টি।
এই ফলের পরে এখন অবশ্য বিজেপিকে খুব বেশি গুরুত্ব দিতে নারাজ বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক তৃণমূলের বিশ্বজিত্ দাস। তিনি বলেন, “পুরসভার ভোট হয় স্থানীর উন্নয়নের ভিত্তিতে। পাঁচ বছরে পুর এলাকায় যা উন্নয়ন হয়েছে তা অতীতে বাম আমলে কখনও হয়নি। আমরা পুরসভার ২২টি ওয়ার্ডেই জিতব।” অন্য দিকে, বিজেপি নেতা কেডি বিশ্বাস অবশ্য পুরভোটের সঙ্গে লোকসভার ভোটের কোনও মিল খুঁজে পাননি। তাঁর কথায়, “উপনির্বাচনে শহরে আমাদের কর্মীর অভাব ছিল। প্রার্থী পছন্দ না হওয়ায় অনেকে বসে গিয়েছেন। পুরভোট সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। আমরা ভুলত্রুটি শুধরে ভাল ফল করবই।”
সিপিএমের খারাপ ফলের পিছনে এলাকায় আন্দোলন থেকে সরে আসাই কারণ বলে মনে করছেন কর্মী সমর্থকেরা। পুরসভার বিরুদ্ধে গত পাঁচ বছরে বামেরা ঠিক মতো মাইক পর্যন্ত বাঁধতে পারেনি। দলের কাউন্সিলরদের তৃণমূলের সঙ্গে অত্যাধিক মাখামাখিও বাম কর্মী-সমর্থকেরা ভাল মনে মেনে নিতে পারেননি। পুরনো কর্মীদের অনেকেই বসে গিয়েছেন। সিপিএম প্রার্থী দেবেশ দাস বলেন, “সাংগঠনিক যে দুর্বলতা লোকসভার সময় থেকে ছিল, তা কাটিয়ে ওঠা যায়নি।” উপনির্বাচনে কোনও বুথে কংগ্রেস না জিতলেও তারা পুরভোটে ২২টি ওয়ার্ডেই প্রার্থী দেবেন বলে জানিয়েছেন শহর কংগ্রেস সভাপতি কৃষ্ণপদ চন্দ।
বনগাঁ পুরসভার ২২টি ওর্য়াডের মধ্যে তৃণমূলের দখলে এখন ১২টি আসন। সিপিএমের ১০টি। ২০১০ সালের পুর নির্বাচনের কয়েক মাস আগে বনগাঁ বিধানসভার পুরভোটে রেকর্ড ভোটে জয়ী হয় তৃণমূল। যদিও পুরভোটে সে বার তৃণমূল পেয়েছিল মাত্র ৬টি আসন। কংগ্রেস ৫টি, নির্দল ১ এবং বামেরা পায় ১০টি আসন। ফলে এ বার লোকসভা ভোটের উপনর্বাচনের ফলাফল পুরসভার উপরে আদৌ কতটা কতটা প্রভাব ফেলবে, সে প্রশ্ন ইতিমধ্যেই তুলতে শুরু করেছে তৃণমূল শিবির। তা নিয়ে কৌতুহল আছে অন্য দলগুলির মধ্যেও।
২০১০ সালে নির্দল ও কংগ্রেসের সমর্থনে পুরসভা দখল করে তৃণমূল। চেয়ারম্যান হন তৃণমূলের জ্যোত্স্না আঢ্য। ভাইস চেয়ারম্যান হন কংগ্রেসের কৃষ্ণা রায়। পরবর্তী সময়ে অবশ্য নির্দল প্রার্থী ও কংগ্রেসের কাউন্সিলরেরা তৃণমূলে যোগ দেন। নব্য তৃণমূল ও পুরনো তৃণমূলের মধ্যে কাজিয়া তুরুপের তাস হবে বলে করছে বিজেপি, বাম, সব পক্ষই।
রাজনৈতিক মহলের একাংশ জানাচ্ছে, টিকিট পাওয়ার দৌড়ে পুরনো এবং নব্য তৃণমূলের মধ্যে দলের কাছে গুরুত্ব পাওয়া না পাওয়া নিয়ে অলিখিত লড়াই শুরু হয়েছে। শহরে নেতৃত্বের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবের সুযোগও বিজেপি নিতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।