রাস্তার মোড়ে মোড়ে নজর রাখছে ক্যামেরা। —নিজস্ব চিত্র।
হাবরা শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়াতে সম্প্রতি উদ্যোগী হয়েছে প্রশাসন। স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকে বিধায়ক তহবিলের টাকায় শহরের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসানো হয়েছে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম পর্যায়ে ১৭টি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের কাজ।
ক্যামেরাগুলিকে শীঘ্রই চালু করা হবে। হাবরা থানায় একটি মনিটর থাকছে। সেখান থেকেই গোটা বিষয়টির উপরে নজর রাখা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। শহরের মধ্যে জয়গাছি বাস টার্মিনাস, নগরউখরা মোড়, চালের বাজার, রাজা মার্কেটের উল্টো দিকে, স্টেট জেনারেল হাসপাতালের সামনে, বিভিন্ন ব্যাঙ্কের সামনে, স্টেশন মোড়-সহ ১৪টি পয়েন্টে ক্যামেরাগুলি বসানো হয়েছে।
সম্প্রতি স্থানীয় হাটথুবা এলাকায় সন্ধ্যাবেলা একটি বাড়িতে চড়াও হয়ে দুষ্কৃতীরা এক মহিলাকে মারধর করে কয়েক লক্ষ টাকা লুঠ করে পালায়। সেই ঘটনার পর ওই বাড়িতে এসে জ্যোতিপ্রিয়বাবু জানিয়েছিলেন, শীঘ্রই তিনি শহরে নিরাপত্তার জন্য ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বসাবেন। মন্ত্রী বলেন, ‘‘বিধায়ক তহবিলের ১৬ লক্ষ টাকায় এখনও পর্যন্ত ১৭টি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। আরও কয়েক লক্ষ টাকা দেওয়া হবে। হাবরা ব্যবসায়ীর কেন্দ্র এলাকা। কোটি কোটি টাকা লেনদেন হয় এখানে। ব্যবসার প্রয়োজনে বহু মানুষ বাইরে থেকে এখানে নিয়মিত যাতায়াত করেন। ব্যবসায়ী ও শহরের মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এর ফলে দুষ্কৃৃতীদের গতিবিধিও নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে।’’
এলাকার নিরাপত্তা নিয়ে এলাকার সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের চিন্তা দীর্ঘদিনের। এমনকী, বাইরে থেকে অপরাধ করে দুষ্কৃতীরা এখানে এসে নিরাপদ ডেরায় গা ঢাকা দিয়ে থাকে বলেও অভিযোগ রয়েছে। নিয়মিত দুষ্কৃতীদের এখানে আনাগোনা রয়েছে। হাবরা শহর তথা সংলগ্ন এলাকায় অপরাধমূলক ঘটনার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। অতীতে স্থানীয় প্রফুল্ল নগর এলাকায় একটি রক্তদান শিবিরে একবার দুষ্কৃতীরা বোমা গুলি মেরে খুন করেছিল কংগ্রেস নেতা বাপি চৌধুরী এবং এক তৃণমূল কর্মীকে। এ ছাড়াও ডাকাতি, প্রকাশ্যে খুন, লুঠ, ইভটিজিং, ধর্ষণ, চুরি, বোমাবাজি, তোলাবাজি কিনা ঘটেছে এই এলাকাগুলিতে।
শহরে শ’তিনেক সোনার দোকান রয়েছে। কয়েক বছর আগে স্টেশন রোডে একটি সোনার দোকানে ভর সন্ধ্যায় প্রকাশ্যে ডাকাতির ঘটনাও ঘটেছিল। তারপর থেকেই স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা আতঙ্কের মধ্যে থাকেন। হাবরা স্বর্ণশিল্পি ব্যবসায়ী সমিতির কার্যকরী সভাপতি গোপালকৃষ্ণ নিয়োগী বলেন, ‘‘ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বসানোর ফলে নিশ্চয়ই শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভাল হবে। এই ক্যামেরার জন্য অপরাধ হওয়ার পরে দ্রুত পুলিশ পৌঁছতে না পারলেও ক্যামেরার ফুটেজ দেখে পুলিশ অপরাধীকে শনাক্ত করতে পারবে।” তিনি জানান, অনেক সোনার ব্যবসায়ী নিজেদের উদ্যোগেই দোকানে ক্যামেরা বসিয়েছেন। আবার শহরের মধ্যেও ক্যামেরা বসছে। ফলে নিরাপত্তা আরও বাড়বে বলে আশা করাই যায়।
ক্যামেরা বসানোর উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন হাবরা চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সম্পাদক নিরঞ্জন সাহা। তাঁর কথায়, ‘‘বাজার এলাকায় চুরি-ডাকাতি ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা রুখতে আমরাই পুলিশ-প্রশাসনের কাছে ক্যামেরা বসানোর আবেদন করছিলাম। পুলিশের সঙ্গে আমাদের আলোচনাও হয়েছিল। ক্যামেরাগুলি যদি ঠিক ভাবে ব্যবহৃত হয় তা হলে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা উপকৃত হতে পারবেন।’’ এই সংগঠনের অধীনে প্রায় ৮ হাজার ব্যবসায়ী আছেন। ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা কার্যকর ভূমিকা নেবে বলেই মনে করছেন তাঁরা।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “যে কোনও আধুনিক শহরে পুলিশ এই ব্যবস্থা চালু করেছে। ২৪ ঘণ্টা একই জায়গায় পুলিশের পক্ষে নজরদারি করা সম্ভব হয় না। কিন্তু এখন এই ক্যামেরা দিন-রাত সমস্ত সময়ে নজরদারি চালাবে।” পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দুষ্কৃতীদের আনাগোনা রুখতে পাশাপাশি ইভটিজিং, পথ দুর্ঘটনার পরে পালিয়ে যাওয়া গাড়ি শনাক্ত করাও এ ক্ষেত্রে অনেক সহজ হবে।