হাবরায় যানজটে নাজেহাল মানুষ।
• রাস্তার অনুপাতে যানজট বেড়েছে অনেকটাই। হাটথুবা থেকে পুরসভা পর্যন্ত মাত্র তিন কিলোমিটার পথ আসতে সময় লাগে ৪৫ মিনিট। নগরউখরা মোড়, স্টেশন রোডের মোড়, হাবরা থানা, এক নম্বর রেলগেট এলাকায় যানজট হয়। বেআইনি অটো রাস্তার উপর যত্রতত্র দাড়িয়ে থাকে। মাঝে কিছুদিন যশোর রোডে যানজট কমে ছিল। এখন ফের তা বেড়ে গিয়েছে। যানজটমুক্ত শহর পাব কবে?
শঙ্করপ্রসাদ সরকার, চিকিৎসক
পুরপ্রধান: শহরের যানজট নিয়ন্ত্রণের জন্য দু’দফায় পুরসভার পক্ষ থেকে ৬০জন ট্রাফিক কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। রাস্তায় অটো, টেটো, বাস ও অন্য যানবাহন বেআইনি ভাবে গাড়ি পার্কিং করছে। পুরসভার পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে জরিমানা করা হচ্ছে। পুরসভার ট্রাফিক কর্মীদের সঙ্গে অটো বা টেটো চালকদের মাঝে মধ্যেই ঝামেলা বাধছে। আরটিও এবং পুলিশ প্রশাসনকে বলব ওই সব বেআইনি অটো টোটোর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করার জন্য।
• হাবরার ব্যবসা বাণিজ্য আরও বাড়িয়ে যুব সমাজের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে পুরসভা বা রাজ্য সরকারের আয় বাড়াতে পুরসভা কি কোনও পরিকল্পনা করেছে?
নিরঞ্জন সাহা, হাবরা চেম্বার অব কর্মাসের সম্পাদক
পুরপ্রধান: হাবরা শহরের গর্ব হল শিক্ষা ও ব্যবসা। গোটা রাজ্য ও দেশে হাবরাকে পরিচিতি দিয়েছে এই দু’টি জিনিস। ব্যবসা বাড়িয়ে যুব সমাজকে আরও বেশি কী করে তাতে যুক্ত করা যায় তা ব্যবসায়ী সমাজকে দায়িত্ব নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে তাঁরা যে ভাবে সাহায্য চাইবেন আমরা সাহায্য করব। এখানে শপিং মল, মাল্টিপ্লেক্স তৈরি করার পরিকল্পনা আছে। অতীতে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে এবং নদিয়া থেকে ক্রেতা এখানে আসতেন। এখন তাঁরা আসেন না। আমাদের লক্ষ্য ওই সব ক্রেতাদের এখানে ফিরিয়ে আনা। এখানকার ব্যবসার উন্নতি হলে শহরের প্রকৃত উন্নতি হবে।
• হাবরা চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। কয়েকটি মিনি হাসপাতালও তৈরি হয়েছে। পুরসভার স্বাস্থ্যদীপও ভাল চলছে। কিন্তু আমি পুরপ্রধানের কাছে জানতে চাইছি এই স্বাস্থ্যদীপ থেকে কী হাবরা স্টেট জেনারেল হাসপাতালের মত পরিষেবা পাওয়া যাবে?
দীপক কুণ্ডু, ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য শাখার সহকারি কোষাধ্যক্ষ
পুরপ্রধান: স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের উদ্যোগে এখন স্থানীয় ও বাইরে থেকে চিকিৎসক স্বাস্থ্যদীপে এনে সাধারণ মানুষকে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে। কম পয়সায় কিছু প্যাথোলজি পরীক্ষাও হচ্ছে। স্বাস্থ্যদীপকে আরও উন্নতমানের করার স্বপ্ন ও পরিকল্পনা রয়েছে। তার জন্য পুরসভার পক্ষ থেকে জায়গাও কেনা হচ্ছে। সেখানে একটি আধুনিক হাসপাতাল গড়ে তুলব। সেখানে আইসিসিইউ-সহ যাবতীয় পরিকাঠামো থাকবে। তবে তার জন্য সময় লাগবে। টাকার সমস্যা রয়েছে। আন্তরিক ভাবে আমরা চেষ্টা করছি।
• রাস্তার পাশের নিকাশি নালাগুলো থেকে নোংরা আবর্জনা তুলে তা নালার পাশেই রাখা হয়। ফলে সেই আবর্জনা বর্ষায় ফের নালার মধ্যেই চলে যায়। তা ছাড়া আবর্জনা নালার পাশে রাখার ফলে রাস্তাও সরুও হয়ে যায়। যাতায়াতে অবুবিধা হয়। কী করা যায়?
প্রিয়াঙ্কা সিংহ, কলেজ ছাত্রী
পুরপ্রধান: এটা ঠিক কথা। আবর্জনা তুলে নালার পাশে রাখা হয় কারণ তাতে তখন জল থাকে। ফলে দিনের দিন ওই আবর্জনা তুলে আনা যায় না। পরিকাঠামোরও অভাব আছে। আমরা যতটা পারছি করছি। তবে এলাকার মানুষেরও সচেতন হতে হবে। তাঁরাও বাড়ির নোংরা আবর্জনা নালার মধ্যে ফেলেন। তার মধ্যে প্লাস্টিক থাকে। নালা আটকে যায়। বাড়ির ময়লা নালায় না ফেলে বাড়িতে রেখে দিলে পুরসভার গাড়ি গিয়ে তা নিয়ে আসতে পারে। গাড়ি সপ্তাহে প্রত্যেকদিন না গেলেও তিন চার দিন যায়।
• ডেঙ্গি চিকুনগুনিয়ার মতো রোগের মশা এখন সারা বছর ধরেই হচ্ছে। স্কুলগুলোও তা থেকে মুক্ত নয়। স্কুলগুলোতে মশা মারার প্রতিরোধের জন্য পুরসভা কী করবে? এ বিষয়ে স্কুলের শিক্ষকদের সঙ্গে কী কোনও আলোচনা হয়েছে?
সত্যজিৎ বিশ্বাস, প্রধান শিক্ষক
পুরপ্রধান: পুরসভার পক্ষ থেকে প্রত্যেকটি ওয়ার্ডেই জঙ্গল সাফাই নিকাশি নালা পরিষ্কার নিয়মিত ভাবে করা হয়। এ বছর স্কুলগুলোতেও করা হয়েছে। পরিকাঠামোর ঘাটতি আছে। কিন্তু আমরা তা সত্ত্বেও এ বছর স্কুলগুলিতে মশা মারার তেল, ব্লিচিং স্প্রে করেছি। সারা বছর ধরে আমরা স্কুলে ওই কাজ করব। কিন্তু শুধু পুরসভা করলেই হবে না স্কুলেগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে।
• হাবরা শহরে চারতলা বিল্ডিং অনুমতি কী আমরা পেতে পারি। তা হলে শহরের আরও উন্নতি হতে পারে।
জবা দাস, চিকিৎসক
পুরপ্রধান: আইনগত দিক থেকে চারতলা বিল্ডিং করার অনুমতি দিতে আমাদের কোনও বাধা নেই। তবে এখানে ৫৫ ফুট উচ্চতা পর্যন্ত বিল্ডিং করতে দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। তার উপরে করতে চাইলে পৌর দফতরে অনুমতির জন্য আমরা প্রস্তাব পাঠাব।
• শহরকে গ্রিন হাবরা করে গড়ে তোলা প্রয়োজন। আমরা সকলেই উন্নয়নের পক্ষে। সেখানে আপোস করা উচিত নয়। কিন্তু দূষণের দিকটিও নজর দেওয়া প্রয়োজন। গ্রিন হাবরা করতে হলে বৃক্ষরোপণের প্রয়োজন? এ বিষয়ে পুরপ্রধান কি ভাবছেন?
দুলালচন্দ্র পাল, উদ্ভিদ বিজ্ঞানী
পুরপ্রধান: এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যা শুধু হাবরা শহর বা রাজ্যের সমস্যা নয়। গোটা পৃথিবীর সমস্যা। আপনাদের মতো মানুষ, ক্লাব সংগঠন, ব্যবসায়ী সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে আমরা সাধারণ মানুষকে ওই বিষয়ে সচেতন করব। তাঁদের সচেতন করার জন্য সভা করব। শহরের সব মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। শুধুমাত্র পুরসভার পক্ষ থেকে গাছ লাগালেই হবে না। সবাই মিলে চেষ্টা করলে অবশ্যই হাবরাকে গ্রিন হাবরা করা সম্ভব।
• পুর এলাকায় কোনও ডাম্পিং স্টেশন নেই। শৌচাগারের নোংরা পরিষ্কার করার জন্য পাশের অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভা থেকে ৮০০ টাকা খরচ করে গাড়ি ভাড়া করতে হয়। এ বিষয়ে পুরসভা কী ভাবছে?
সুকল্প ঘোষ, ব্যবসায়ী
পুরপ্রধান: অশোকনগরে প্রায় ৩২ কোটি টাকা খরচ করে একটি ডাম্পিং স্টেশন হচ্ছে। সেখানে হাবরা, গোরবডাঙা, অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভা এলাকার সমস্ত বর্জ্য ফেলা হবে। ওই বর্জ্য থেকে গ্যাস ও বিদ্যুৎ তৈরি হবে। কেন্দ্র ও রাজ্যের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে প্রকল্পটি। সেটি তৈরি হয়ে গেলে আর সমস্যা থাকবে না। হাবরা পুরসভা এলাকায় একটি ডাম্পিং স্টেশন রয়েছে ঠিকই। কিন্তু সেখানে এই মুহূর্তে আবর্জনা ফেলা হলেও মল ফেলার ব্যবস্থা নেই। আমরা গাড়িও কিনেছিলাম কিন্তু রাখার জায়গা মেলেনি।
• হাবরা শহরে আজও পরিকল্পিত নিকাশি ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি।বর্ষায় বহু এলাকায় জল জমে যায়।নিকাশি ব্যবস্থার দীর্ঘমেয়াদি সমাধান কবে হবে?
মালা বসু কর, সঙ্গীত শিল্পী
পুরপ্রধান: সুষ্ঠ ও পরিকল্পিত নিকাশি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের সমীক্ষার কাজও শেষ হয়ে গিয়েছে। তবে তার জন্য আমাদের বছর দেড়েক সময় অপেক্ষা করতে হবে। কারণ পুরসভার ২৪টি ওয়ার্ডে ২৪ ঘণ্টা গঙ্গার পরিশ্রুত পানীয় জল ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে সম্প্রতি আমরা ১১০ কোটি টাকা পেয়েছি। ওই কাজটা আগে শেষ করা হচ্ছে। তারপর নিকাশি কাজ শুরু হবে। ওই কাজের জন্য ১৫০-২০০ কোটি টাকার প্রয়োজন।
• আমি হিজলপুকুর এলাকায় বাস করি। ওই এলাকার রাস্তাগুলো মাসে ২০ দিন অপরিষ্কার থাকে। যার ফলে এলাকায় দুষণ ছড়াচ্ছে। মশা বাহিত নানা রোগও ছড়িয়ে পড়ার সম্ভবনা রয়েছে। নিকাশি নালা গুলোর অবস্থা খারাপ।
প্রশান্তকুমার ঘোষ, ওষুধ ব্যবসায়ী
পুরপ্রধান: মাসে ৩০ দিনই প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে রাস্তা ও নালা পরিষ্কার করার মতো পরিকাঠামো পুরসভার নেই। প্রত্যেকটি ওয়ার্ড পিছু ৩টি করে সাফাই গাড়ি দেওয়া হয়েছে। অতীতে যা ছিল না। এখন বাড়ি বাড়ি থেকে আবর্জনাও নিয়ে আসা হচ্ছে।