স্কুলে তৈরি হচ্ছে পিঠে। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
কুলি, কাস্তেপোড়া পিঠের সঙ্গে খেুজুরের ঝোলা গুড়। শেষ পাতে পায়েস!
পড়ুয়াদের নিয়ে বাগদার ভবানীপুর পল্লিমঙ্গল বিদ্যাপীঠ স্কুলেই চলছে পিঠেপুলি উৎসব। মঙ্গলবার দুপুরে প্রায় সাড়ে ৭০০ পড়ুয়া, স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকা, পরিচালন সমিতির সদস্যেরা মেতেছিলেন উৎসবে।
সরস্বতী পুজোর পরে বেঞ্চ পেতে স্কুলে কখনও খিচুরি, কখনও বিরিয়ানি খাওয়ানো হয়। এ বার ওই সব খাওয়ার মেনু থেকে বাদ পড়েছে। বদলে পেট ভরে খাওয়ানো হল পিঠেপুলি। সরস্বতী পুজোর এই নতুন মেনুতে খুশি অভিভাবকেরাও।
স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ওই স্কুলের ৯৫ শতাংশ পড়ুয়া ওপার বাংলা থেকে আসা পরিবারের। সেখানে বাড়ি বাড়ি পিঠেপুলি তৈরির কথা এ পার বাংলাতেও লোকের মুখে মুখে ঘোরে। কিন্তু সেই পিঠেপুলির চল এখন অনেকটাই ফিকে। বর্তমান প্রজন্মের মেয়েরা পিঠে কী ভাবে তৈরি করতে হয়, তা-ও হয় তো অনেকে জানেন না।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক বাসুদেব চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পিঠেপুলি তৈরির সংস্কৃতি হারিয়ে যেতে চলেছে। তা ফিরিয়ে আনতেই এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।’’ তিনি জানান, স্কুলে যাঁরা মিড-ডে মিল রান্না করেন তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন বাসুদেববাবু সব ঠিক করেন। তাঁরাও পিঠে বানাতে আগ্রহী ছিলেন। পড়ুয়াদের বিষয়টি জানানো হলে তাদের মধ্যেও প্রচুর উৎসাহ দেখা গিয়েছে। এ দিন দুপুরে স্কুলে গিয়ে দেখা গেল, স্কুল চত্বরে মাটি খুঁড়ে উনুন তৈরি করা হয়েছে। সেখানে পিঠে তৈরি করছেন মিড-ডে মিলে কর্মরত মহিলারা। হাত লাগিয়েছে স্কুলের ছাত্রীরাও। আদব-কায়দা শিখে নিয়ে ছাত্রীরাও বানাচ্ছে। নবম শ্রেণির ছাত্রী মিষ্টি বিশ্বাস বলে, ‘‘বাড়িতে মায়ের কাছে কুলি পিঠে, সরা পিঠে তৈরি করা শিখেছিলাম। তবে স্কুলে পিঠে তৈরির মজাই আলদা।’’ নবম শ্রেণির স্টার বিশ্বাস, ত্রেষা বর বলে, ‘‘পিঠে বানাতে পারি না। আজই শিখেছি স্কুল থেকে।’’
স্কুলের ছেলেরাও পিছিয়ে নেই এই কাজে। তারা বাজার করা থেকে শুরু করে নারকেল কাটা সবই করেছে। স্কুল পরিচালন সমিতির সদস্য আল্লাদি বৈরাগীও স্কুলে এসে আজ পিঠে বানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘পিঠেপুলি উৎসবে পড়ুয়া, শিক্ষক শিক্ষিকারা বেশ আনন্দ করেছেন। সকলেই পিঠে তৈরি করতে আগ্রহী ছিলেন।’’ পাশের প্রাথমিক স্কুলের ক্ষুদে পড়ুয়াদেরও আমন্ত্রণ করে পিঠে পুলি খাওয়ানো হয়েছে।