বিজ্ঞানী জয়ন্ত পাল। —নিজস্ব চিত্র।
বেঙ্গালুরু থেকে বাদুড়িয়া— জুড়ে দিল জয়ন্তের জয়। বিজ্ঞানী জয়ন্ত পাল যখন বেঙ্গালুরুতে ইসরোর দফতরে চন্দ্রযান ৩-এর ঐতিহাসিক যাত্রার শরিক হচ্ছেন, তখন উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়া একই রকম উচ্ছ্বসিত, গর্বিত তাঁর পরিবার।
চাঁদের দক্ষিণ মেরু ছুঁয়ে বুধবার ইতিহাস তৈরি করেছে ভারত। চন্দ্রযান-৩ এর সফল অবতরণের এই বিশাল কর্মযজ্ঞে আরও অনেক বিজ্ঞানীর মতো যুক্ত ছিলেন বাদুড়িয়ার ভূমিপুত্র জয়ন্ত। বছর একত্রিশের জয়ন্ত ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রে (ইসরো) কর্মরত। এ দিন সন্ধ্যায় বাদুড়িয়ার বাড়িতে বসে চন্দ্রযান-৩ এর অবতরণ দেখতে দেখতে ছেলের জন্য গর্ববোধ করছিলেন জয়ন্তের বাবা অর্ধেন্দু ও মা আলপনা। বাদুড়িয়া থানার রামচন্দ্রপুর গ্রামের বাসিন্দা জয়ন্ত। আর্থিক সঙ্কট ছিল কিছু বছর আগেও। কষ্ট করে মেয়ে রূপালি ও ছেলেকে পড়াশোনায় উৎসাহ দিয়ে গিয়েছেন আলপনা, অর্ধেন্দু। আলপনা বলেন, ‘‘সে দিনের সেই ছোট্ট ছেলেটা এক দিন ইসরোয় যাবে ভাবিনি। পথটা মোটেই সহজ ছিল না।’’ আলপনা জানান, তাঁদের প্যান্ডেলের ব্যবসা। আর্থিক সমস্যা থাকায় দুই ছেলেমেয়েকে গৃহশিক্ষক দেওয়া সম্ভব হয়নি। তিনিই নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়িয়েছেন। আলপনা মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন। পরে নিজেও স্নাতক হন নিজে।
অর্ধেন্দু জানান, বিজ্ঞান নিয়ে পড়ে ২০১০ সালে তেঁতুলিয়া উচ্চতর হাইস্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৭৮ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাশ করে ছেলে। জয়েন্টে ভাল ফল করলেও অর্থের অভাবে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া হয়নি। অঙ্ক নিয়ে জয়ন্ত বারাসত সরকারি কলেজে ভর্তি হন। পরে খড়্গপুর আইআইটি থেকে এমএসসি করেন। সেখানেই পিএইচডি সদ্য শেষ করেছেন। তার আগেই ২০১৮ সাল থেকে ইসরোয় বিজ্ঞানী হিসাবে কাজ করছেন। এ দিন জয়ন্ত টেলিফোনে জানান, গত চার মাস ধরে খাওয়া-ঘুম ভুলে দিনে ১২-১৪ ঘণ্টা পরিশ্রম করেছেন। মূলত চন্দ্রযান-৩ এর গতিবেগ কখন কেমন হবে, তা নিয়ে যাঁরা কাজ করছিলেন তাঁদের মধ্যে ছিলেন তিনি। জয়ন্তের জন্য গর্বিত বারাসত সরকারি কলেজের গণিত বিভাগের শিক্ষক নিশীথচন্দ্র দাস। তিনি বলেন, ‘‘জয়ন্ত অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র। ইসরোয় গণিতজ্ঞদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে।’’