দিনের বেলায় অতটা সমস্যা হয় না। কিন্তু সন্ধে নামতে না নামতেই শুরু হয়ে যায় তাদের দৌরাত্ম্য। লোডশেডিং থাকলে তো অবস্থা আরও ভয়াবহ। বৃষ্টির মরসুম শুরু হতে না হতেই মশার উপদ্রবে নাজেহাল হাবরা।
শহরবাসীর অভিযোগ, একে তো নিকাশি নালায় জল জমে থাকে। তার উপর, বন-জঙ্গল নিয়মিত সাফাই হয় না। মশা মারার তেলও নিয়মিত ভাবে সব এলাকায় ছড়ানো হচ্ছে না। তাঁদের আশঙ্কা, মশার উপদ্রব দ্রুত বন্ধ করা না গেলে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ার মতো রোগ যে কোনও সময়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। অতীতে শহর ও সংলগ্ন এলাকায় ডেঙ্গি ও চিকুনগুনিয়ার মতো মশাবাহিত রোগ ছড়িয়েছিল। গত বছরেও বহু মানুষ ডেঙ্গির উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
এই পুরসভার ওয়ার্ড ২৪টি। গত বছর ৪৫ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছিল। এ বার এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গি বা মশাবাহিত কোনও রোগের খবর পাওয়া যায়নি। তবে মশার উৎপাত বেড়েছে।
হাটথুবার বাসিন্দা, চিকিৎসক শঙ্কর সরকার বলেন, ‘‘সন্ধ্যার পরে মশার জ্বালায় বাইরে বসে থাকা যায় না।’’ কামান দাগা বা মশা মারার তেল স্প্রে করা, ব্লিচিং, চুন ছড়ানো— গত দেড় মাসে কিছুই হয়নি বলে জানালেন তিনি। কামারথুবার বাসিন্দা, আর এক চিকিৎসক দীপক কুণ্ডু অবশ্য বলেন, ‘‘নিকাশি নালাগুলি আরও পরিষ্কার করা প্রয়োজন।’’ বাসিন্দার জানালেন, রেল কলোনি এলাকার পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর। নিকাশি ব্যবস্থাও ভাল নয়। শহরের কিছু জায়গায় জল দাঁড়িয়ে যাচ্ছে বৃষ্টিতে।
হাবরা
•ওয়ার্ড ২৪
•গত বছর ৪৫ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছিল
•এ বার এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গি বা মশাবাহিত কোনও রোগের খবর পাওয়া যায়নি
•নিকাশি নালা পরিষ্কার করতে ৫০ জনের একটি দল তৈরি করা হয়েছে
•পয়লা জুন থেকে পুরসভার মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষজনকে বোঝাচ্ছেন
কী বলছে পুরসভা?
তারা জানাচ্ছে, পয়লা জুন থেকে পুরসভার মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষজনকে মশাবাহিত রোগ নিয়ে সচেতন করছেন। অন্য কর্মীরাও যাচ্ছেন। বাড়ি বাড়ি যাওয়ার আগে ওই মহিলা কর্মীদের বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছিল পুরসভা। কর্মীরা বাড়িতে গিয়ে দেখছেন, উঠোনে, টবে জল জমে আছে কিনা। বাড়ির কোথাও জমা জলে মশার লার্ভা রয়েছে কিনা, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মশা মারার তেল স্প্রে করা, চুন-ব্লিচিং ছড়ানোর কাজও চলছে। শহর এলাকার স্কুলগুলিতে পুরসভার কর্মীরা বন-জঙ্গল সাফাই করছেন। তার সুফলও মিলছে বলে দাবি পুর কর্তৃপক্ষের। প্রফুল্লনগর বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা কল্পনা বিশ্বাস বলেন, ‘‘স্কুলের মধ্যে ও বাইরের বন-জঙ্গল পুরসভার পক্ষ থেকে সাফাই করে দেওয়া হয়েছে। ফলে এখন আর মশার উপদ্রব স্কুলে নেই।’’
নিকাশি নালা পরিস্কার করতে পুরসভার পক্ষ থেকে ৫০ জনের একটি দল তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া, প্রতিটি ওয়ার্ডের জন্য আরও কিছু সাফাই কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। পুরপ্রধান নীলিমেশ দাস বলেন, ‘‘যশোর রোডে নিকাশি ব্যবস্থা গড়ে না উঠলে সমস্যা মিটবে না। শহরের জন্য একটি পরিকল্পিত নিকাশি ব্যবস্থা তৈরির জন্য পুর-দফতরের কাছে আবেদন করা হয়েছে।’’ পাশাপাশি পুরসভার আরও বক্তব্য, কিছু মানুষ আবর্জনা নালায় ফেলছেন। তাঁদেরকেও সচেতন হতে হবে।