সমীক্ষা শুরু হওয়ার আগে আবাস যোজনার তালিকায় নাম ছিল ১১,৮১৮ জনের। — প্রতীকী চিত্র।
বনগাঁ ব্লকে আবাস যোজনার প্রাথমিক সমীক্ষায় নাম বাদ গেল ১৫৪১ জনের। সমীক্ষা করা যায়নি ১৫৬৪ জনের। প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, প্রশাসনের কর্মী, আধিকারিকেরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমীক্ষা করে তালিকা প্রস্তুত করেছেন। পুলিশের পক্ষ থেকেও সমীক্ষা করা হয়েছে। তালিকা থেকে প্রায় দেড় হাজার মানুষের নাম বাদ যাওয়াকে হাতিয়ার করে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি দুর্নীতির অভিযোগে সরব হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৮ সালের আবাস যোজনার তালিকায় নাম ছিল প্রায় ১০ হাজার মানুষের। এ ছাড়া, মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে সরাসরি আবেদন করেছিলেন আরও কিছু মানুষ। সব মিলিয়ে সমীক্ষা শুরু হওয়ার আগে আবাস যোজনার তালিকায় নাম ছিল ১১,৮১৮ জনের। প্রাথমিক সমীক্ষা শেষে যোগ্য প্রাপকদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৭১৩ জন।
কেন প্রায় দেড় হাজার মানুষের নাম বাদ গেল?
প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, বাদ যাওয়া প্রাপকদের অনেকেই এই সময়ে পাকা বাড়ি তৈরি করে ফেলেছেন। অনেকেই সরকারি চাকরি পেয়েছেন। কোনও কোনও পরিবারের এক জন সদস্যের মাসিক আয় ১৫ হাজার টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে। এই রকম বিভিন্ন কারণে নাম বাদ গিয়েছে। প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, কিছু ক্ষেত্রে আগে থেকেই পাকা বাড়ি থাকা সত্ত্বেও তালিকায় নাম থেকে গিয়েছিল।
১৫৬৪ জনের সমীক্ষা করা যায়নি কেন?
ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, অনেকেই মারা গিয়েছেন। তাঁর উত্তরাধিকারীদের বাড়ি পাওয়ার কথা। সেই উত্তরাধিকার শংসাপত্র জেলায় পাঠানো হয়েছে খতিয়ে দেখার জন্য। পাশাপাশি, অনেকেরই আবার বাড়ি এক পঞ্চায়েত এলাকায়, আবাস যোজনার তালিকায় থাকা ঠিকানা অন্য পঞ্চায়েত এলাকায়। পরিবর্তনের জন্য জেলায় তালিকা পাঠানো হয়েছে। সেই সব ঠিক করে সমীক্ষা করা হবে।
তবে বিরোধীদের অভিযোগ, পাকাবাড়ি আছে, কিন্তু পাশের কাঁচা রান্নাঘর দেখিয়ে কেউ কেউ তালিকায় নাম তুলেছেন। আবার কাঁচা বাড়ি থাকা অনেক প্রকৃত গরিব মানুষের নাম তালিকায় নেই। এমনই এক মহিলার কথায়, "বৃষ্টি হলে ঘর জলে ভেসে যায়। শীতে কাঁচা বাড়িতে থাকতে কষ্ট হয়। তবে আবেদেন করা সত্ত্বেও তালিকায় নাম ওঠেনি।"
বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দেবদাস মণ্ডলের অভিযোগ, "কেন্দ্রের পক্ষ থেকে আবাস যোজনার যে দুর্নীতির অভিযোগ করা হয়েছিল, তৃণমূল নিজেরাই তা প্রমাণ করে দিল তালিকা থেকে নাম বাদ দিয়ে। তৃণমূলই নাম ঢুকিয়েছিল, ওরাই নাম কেটে দিল! এর থেকে প্রমাণ হয় তালিকায় দুর্নীতি হয়েছিল।" সিপিএমের বনগাঁ ব্লক এরিয়া কমিটির সম্পাদক নারায়ণচন্দ্র বিশ্বাস বলেন, "বিরোধী দল করেন বলে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে কিছু নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। আমরা সেই নামের তালিকা তৈরি করছি।"
বিরোধীদের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি প্রসেনজিৎ ঘোষ বলেন, "আবাস যোজনার তালিকা তৈরি হয়েছিল ২০১৮ সালে। এই ছ’বছরে অনেকেরই আর্থিক স্বচ্ছলতা এসেছে। তাঁরা পাকা বাড়ি তৈরি করে নিয়েছেন। সে কারণে নাম তালিকা থেকে নাম বাদ গিয়েছে। রাজ্য সরকার স্বচ্ছতার সঙ্গে তালিকা তৈরি করেছে।"
প্রশাসনের পক্ষ থেকেও দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। বনগাঁর বিডিও কৃষ্ণেন্দু ঘোষ জানিয়েছেন, আবাস যোজনার প্রাথমিক তালিকা ব্লক অফিসে টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। কারও কোনও অভিযোগ থাকলে ৩ ডিসেম্বরের মধ্যে ব্লক অফিসে লিখিত ভাবে জানাতে হবে। অভিযোগ খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হবে।