ভোর ৫টা। হাঁটতে বেরিয়েছিলেন বছর চুয়াল্লিশের পরিতোষ মল্লিক। হঠাৎ এক বিকট শব্দে থমকে দাঁড়ান তিনি। কাছে গিয়ে দেখেন, একটি গাড়ি ও অটো ডোবায় পড়ে গিয়েছে। আর একটি গাড়ি রাস্তার উপরে দাঁড়িয়ে।
যে গাড়িটি ডোবায় পড়েছিল তার মধ্যে যাত্রীরাও রয়েছেন। বাগদার চাঁদা এলাকার বাসিন্দা পরিতোষবাবু কোনও কথা না ভেবেই জলে ঝাঁপ দেন। মঙ্গলবার ভোরে বনগাঁ-বাগদা সড়কের পাশে এই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তিনজনের। আহত হন আটজন।
এ দিন ওই এলাকার অনেকেরই ঘুম ভাঙে দুর্ঘটনার শব্দে। বিছানা ছেড়ে শব্দের উৎস খুঁজতে রাস্তায় বেরোতেই দেখেন এলাকাবাসী দেখেন এই দুর্ঘটনা। পরিতোষবাবুর মতো এলাকার মহিলা পুরুষ সকলেই তখন হাত লাগান উদ্ধার কাজে।
এলাকাবাসী জানান, গাড়ির মধ্যে জল ঢুকতে শুরু করেছিল। ভিতরে যাত্রীদের দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। এক ছুটে বাড়ি থেকে শাবল, কুড়ুল এনে মহিলারা এগিয়ে দিচ্ছেন যুবকদের হাতে। তা দিয়েই ভাঙা হচ্ছে গাড়ির দরজা। কেউ আবার রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে উদ্ধার করা যাত্রীদের তাতে তুলে নিয়ে যাচ্ছেন বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে। গ্রামবাসীদের এই চেষ্টার ফলেই প্রাণ বাঁচে দুর্ঘটনার কবলে পড়া মানুষগুলির বলে জানিয়েছে পুলিশ।
উদ্ধার কাজ করতে গিয়ে পরিতোষবাবুর একটি পা কেটে গিয়েছে। নিজের ফোনও জলে পড়ে গিয়েছে। তবু আক্ষেপ নেই তাঁর। পরিতোষবাবু বলেন, ‘‘তখন কোনও দিক ভাবিনি। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল দ্রুত উদ্ধার করে মানুষগুলিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া।’’ পরে অবশ্য পরিতোষবাবুকে পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করিয়েছেন। বনগাঁ থানার পক্ষ থেকে তাঁকে একটি নতুন মোবাইল ফোনও উপহার দেওয়া হয়েছে। বনগাঁর প্রাক্তন বিধায়ক গোপাল শেঠ পরিতোষবাবুকে পাঞ্জাবি উপহার দেন। খবর পেয়ে বাগদা এলাকা থেকে মৃত ও জখম ব্যক্তিদের আত্মীয়- স্বজনেরা হাসপাতালে আসেন। জখম ব্যক্তিদের আত্মীয়েরা জানান, তাঁরাও চাঁদা এলাকাবাসীর কাছে কৃতজ্ঞ।
বনগাঁর এসডিপিও অনিল রায় গ্রামবাসীদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘‘এখানে পুলিশের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক খুব নিবিড়। তাই দুর্ঘটনার পর পথ অবরোধ না করে তাঁরা জখম ব্যক্তিদের উদ্ধার করতে পুলিশকে সহযোগিতা করেছেন। এই ঘটনা সকলের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’’