ঝাঁ চকচকে স্কুলে এখন অপেক্ষা পর্যাপ্ত শিক্ষকের। নিজস্ব চিত্র।
নামেই মডেল স্কুল!
ঝাঁ চকচকে বাড়িতে শ্রেণিকক্ষ, ল্যাব আর চেয়ার-টেবিলের কোনও খামতি নেই। কিন্তু আসল জায়গাই নড়বড়ে। শিক্ষক নেই। সে কারণে ধুঁকছে নামখানার সরকারি মডেল হাইস্কুল। একের পর এক অভিভাবক বাচ্চাকে সরিয়ে নিয়ে ভর্তি করাচ্ছেন অন্য স্কুলে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে বলেই সমস্যা চলছে।
অনুন্নত এলাকা। উন্নয়ন খাতে প্রায় ১২ কোটি টাকা খরচ করে বছর দু’য়েক আগে চালু হয়েছিল নামখানায় সরকারি মডেল ইংরেজি মাধ্যম এই স্কুল। এলাকার একমাত্র সরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল বলে বাচ্চাদের পড়াতে আগ্রহী হয়েছিলেন অনেক অভিভাবকই। কেবল নামখানা নয়, বকখালি, কাকদ্বীপ, সাগর এমনকী, মহকুমার বাইরে থেকেও অনেক অভিভাবক তাঁদের বাচ্চাদের ভর্তি করেছিলেন। কিন্তু মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অনুমোদিত ওই স্কুলে দু’বছরে কোনও স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। এখন মাত্র তিন জন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক দিয়ে চালানো হচ্ছে পঠনপাঠন।
সেখানেই বিরক্ত অভিভাবকেরা। হরিপুর গ্রামের চন্দনপিড়ির বাসিন্দা গৌরাঙ্গ মাইতি তাঁর মেয়েকে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি করেছিলেন গত বছর। তাঁর কথায়, ‘‘প্রথম ও দ্বিতীয় এবং পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণির মাত্র ১২০ জন ছাত্রছাত্রী। শিক্ষক কম বলে ঠিকমতো ক্লাস হয় না। তা ছাড়া, ইংরেজি মাধ্যম স্কুল ভাল ভাবে চালাতে গেলে ভাল শিক্ষক প্রয়োজন। সে কারণেই মেয়েকে অন্য স্কুলে ভর্তি করেছি।’’
সাগর এবং কাকদ্বীপেরও কিছু অভিভাবকের অভিজ্ঞতা একই রকম। তাঁদের অভিযোগ, মাত্র তিন জন শিক্ষক বলে ছাত্রছাত্রীদের সব বিষয়ের ক্লাস নেওয়া হচ্ছে না। সে কারণে শিক্ষার গুণগত মান নামছে। অনেকের বাচ্চা এখনও রয়ে গিয়েছে, তাদেরও ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছেন অনেক বাবা-মা। সবে দু’বছর হয়েছে বলে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক পর্যন্ত অন্য ক্লাস এখনও চালু হয়নি।
ঝাঁ চকচকে স্কুল হলেও শিক্ষকের তুলনায় পড়ুয়ার সংখ্যা কম। কিন্তু শিশুদের সার্বিক উন্নতির সম্ভাবনা এখানে দেখছেন না কোনও অভিভাবকই। এলাকায় বেশ কয়েকটি উচ্চমাধ্যমিক বাংলামাধ্যম স্কুল রয়েছে। সেখানকার প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, শিক্ষাবর্ষ শুরু হওয়ার পরেও মডেল স্কুল থেকে বাচ্চাদের এই স্কুলগুলিতে নিয়ে আসছেন অনেক বাবা-মা।
সরকারি মডেল স্কুলগুলিতে শিক্ষক নিয়োগ হয় পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে। কিন্তু কবে পিএসসির শিক্ষক আসবে তা প্রায় কেউই বলতে পারছেন না। আপাতত জেলা সদর থেকে তিনজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষককেই নিয়োগ করা হয়েছে পড়াশোনা চালানোর জন্য।
স্কুল পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে শিক্ষা অধিকর্তা দফতরের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক। কাকদ্বীপের সহ স্কুল পরিদর্শক অরবিন্দ মণ্ডল বলেন, ‘‘উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের জন্য যেমন শিক্ষক প্রয়োজন তার তালিকা তৈরি করে শিক্ষক নিয়োগের জন্য উপর মহলে বলে দিয়েছি। পাবলিক সার্ভিস কমিশন থেকে কবে শিক্ষক পাওয়া যাবে তা এখুনি বলা যাবে না।’’
এই অনিশ্চয়তার মধ্যেই এখন নামখানার সরকারি মডেল স্কুল। এলাকাবাসীর দাবি, সুবিশাল স্কুল এলাকার শিক্ষা উন্নয়নের বদলে এখন ধীরে ধীরে ভুতুড়ে বাড়িতে পরিণত হচ্ছে।