হাসপাতালে: নিজস্ব চিত্র
রাস্তাতেই হাঁফাচ্ছিল বছর ষোলোর কিশোরী। দৃশ্যতই মনে বচ্ছিল দম বন্ধ হয়ে আসছে তার। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় নেই! শেষ পর্যন্ত এমনটাই করলেন রাস্তার কর্তব্যরত এক ট্রাফিক পুলিশ।
সোমবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটেছে বনগাঁয়। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ঠিক সময়ে যদি ওই ছাত্রীকে হাসপাতালে না পৌঁছনো হতো। তাহলে বড় কোনও বিপদ ঘটতে পারত।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রোজকার মতো সোমবার সন্ধ্যায় শহরের ত্রিকোণ পার্ক এলাকায় ডিউটি করছিলেন বনগাঁর ট্রাফিক ওসি বছর চুয়ান্নের গৌতম দাস। হেলমেটহীন বাইক থামিয়ে তল্লাশি করছিলেন। সঙ্গে ছিলেন গৌরব গঙ্গোপাধ্যায়-সহ কয়েকজন সিভিক ভলান্টিয়ার্স। হঠাৎ গৌতমবাবু দেখেন, এক কিশোরী রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে হাঁপাচ্ছে। সঙ্গে বইয়ের ব্যাগ। মেয়েটির শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। তা দেখে গৌতমবাবু তাকে বসিয়ে মাথায় জল দেন। কিন্তু মেয়েটির অসুস্থতা আরও বাড়তে থাকে। তখন তিনি তড়িঘড়ি একটি টোটো ভাড়া করে সিভিক ভলান্টিয়ার্সদের সঙ্গে নিয়ে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে ওই কিশোরীকে নিয়ে যান। জরুরি বিভাগের চিকিৎসকেরা তাকে দেখেই ভর্তি করে নেন। শুরু হয় চিকিৎসা।
হাসপাতালে সব ওষুধ না মেলায় কিছু বাইরে থেকেও কিনতে হল। তার বিলও গৌতমবাবুই মিটিয়েছেন। পরে ওই কিশোরীর ব্যাগ থেকে মোবাইল বার করে তার বাড়িতে খবর দেওয়া হয়। সুস্থ হওয়ার পর রমা হিরা নামে ওই কিশোরী জানায়, তার বাড়ি বনগাঁর সুকপুকুরিয়া এলাকায়। সে স্থানীয় মণিগ্রাম হাইস্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী। মেয়েটি দাদু দিদার সঙ্গে থাকে। বাবা-মায়ের সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক নেই। ওই দিন পড়ে ফেরার পথে রাস্তাতেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিল রমা। তার কথায়, ‘‘পুলিশ কাকু না থাকলে কি যে হতো জানি না।’’
তবে এই ঘটনায় পুলিশের মানবিক মুখ দেখল শহরবাসী। বনগাঁর এসডিপি অনিল রায় বলেন, ‘‘গৌতমবাবু ভাল কাজ করেছেন। সকলের তাঁকে অনুসরণ করা উচিত।’’ বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের সুপার শঙ্কর প্রসাদ মাহাতো বলেন, ‘‘মানুষ তো মানবিক কাজ করবেই। গৌতমবাবুর কাজের জন্য তাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’’
ওই কিশোরীর দাদু রতন হিরা বলেন, ‘‘শুধু হাসপাতালে ভর্তি করিয়েই থেমে থাকেননি গৌতমবাবু। ওষুধের জন্য হাজার টাকাও দিয়ে গিয়েছেন। ওঁনার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।’’ মঙ্গলবাবর সকালে গৌতমবাবু হাসপাতালে ফের গিয়েছিলেন ছাত্রীকে দেখতে। এখন ওই কিশোরী অনেকটাই সুস্থ।
এর আগেও গৌতমবাবুর রাস্তা থেকে অসুস্থ মানুষকে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছেন। তাঁর কথায় ‘‘কী এমন করেছি। এ আবার কী কাজ। প্রতিটি মানুষের উচিত এমন কাজ করা।’’