এই হাল শৌচাগারের। নিজস্ব চিত্র।
অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া রাবেয়া খাতুন স্কুলে যেতে চাইছে না। বাড়ির লোক কিছু না বুঝেই তাকে স্কুলে আসার জন্য জোর করতে থাকেন। পরে জানা যায়, স্কুলে ঠিকঠাক শৌচাগার নেই দেখে সংকোচে স্কুলমুখো হতে চাইছে না মেয়েটি।
মগরাহাট ২ ব্লকের গোকর্ণী মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রে ভাল শৌচাগার না থাকায় দিনের পর দিন স্কুলে ছাত্রীদের অনুপস্থিতি বাড়ছে বলে স্বীকার করেছেন স্কুল কর্তৃপক্ষও। বিডিও খোকনচন্দ্র বালা বলেন, ‘‘ওই স্কুলে দ্রুত শৌচাগার নির্মাণের ব্যবস্থা করা হবে।’’
বাম জমানায় জেলার অধিকাংশ ব্লকে মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র শুরু হয়েছিল। ২০০৫ সালে পঞ্চায়েত গ্রাম উন্নয়ন দফতরের অধীনে গোকর্ণী মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রটি অনুমোদন পায়। এরপরেই বিঘাখানেক দানের জমিতে সরকারি টাকায় তৈরি ভবনে স্কুলটি চালু হয়।
এলাকায় একটি মাত্র মাধ্যমিক স্তরের স্কুল হওয়ায় পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত চলা ওই স্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা যথেষ্ট। সংখ্যালঘু, তপসিলি জাতি ও উপজাতি অধ্যুষিত এলাকার বেশির ভাগ ছাত্রছাত্রী ওই স্কুলে পড়ে। বর্তামানে পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিনশো। এদের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশই ছাত্রী।
কিন্তু দোতলা ঝাঁ চকচকে স্কুল ভবনে ছাত্র ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কোনও ভাল শৌচাগার নেই। ছাত্রীদের একটি টিনের দরজা দিয়ে ঘেরা শৌচাগার রয়েছে ঠিকই, কিন্তু তা ব্যবহারের অযোগ্য। কোনওটির টিনের দরজা ভাঙা, কোথাও ছিটকিনির সমস্যা। ছাত্রেরা বাগানের আনাচে কানাচে শৌচকর্ম করে। কিন্তু ছাত্রীদের সমস্যা কাটছে না।
ছাত্রীরা কেন স্কুলে আসছে না তা নিয়ে মাসে তিনবার স্কুল কর্তৃপক্ষ অভিভাবকদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। কিন্তু তা-ও কোনও সুরাহা হচ্ছে না।
স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের জন্য রয়েছেন একজন শিক্ষক ও একজন আংশিক সময়ের শিক্ষিকা। এই শিক্ষিকাকে স্কুলের শিক্ষক নিজের বেতনের টাকা থেকে সামান্য কিছু সাহায্য করেন। স্কুল চালাতে দু’জন শিক্ষককেই হিমসিম খেতে হয়। একজন শিক্ষক দিনে আটটি ক্লাস নেন। ভোটের সময়ে সরকারি কাজও সামলাতে হয় তাঁদের। এতে সমস্যা বাড়ে।
সরকার থেকে সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রীদের বার্ষিক ১২৪০ টাকা অনুদানের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ওই স্কুলে দু’বছর ধরে সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রীরা কোনও সরকারি অনুদান পাচ্ছে না। এমনকী, স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা স্কুলের পোশাকও পায়নি।
এতেও স্কুলছুট বাড়ছে বলে দাবি অভিভাবকদের একাংশের। অভিভাবক আব্দুল রহমান মল্লিক, ফজিলা বিবি, আমিনা বিবিদের অভিযোগ, ‘‘এত দিন ধরে এই স্কুলটি চলছে অথচ আজও মাধ্যমিকের অনুমোদন মিলল না। ফলে এখানে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনার পরে দূরের স্কুলে ছেলেমেয়েদের পাঠাতে হয়।’’ কিন্তু দূরের স্কুলে মেয়েদের পাঠাতে সাহস পাচ্ছেন না অনেকে। এলাকায় অল্পবয়সে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেওয়ার প্রবণতাও আছে বলে জানালেন গ্রামের মানুষই।
স্কুলের সহকারী শিক্ষক দীপেন চক্রবর্তী, সুমন মণ্ডল, বিপ্লব দত্তরা জানান, তাঁরাও উপযুক্ত পারিশ্রমিক পাচ্ছেন না। ফলে সংসার চালানো দায় হয়ে পড়ছে।
প্রধান শিক্ষিকা সাধনা দত্ত বলেন, ‘‘শৌচাগারের জন্য ভীষণ সমস্যায় পড়েছি। ছাত্রছাত্রী ও তাদের অভিভাবকদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে। স্কুলে অনুপস্থিতি বাড়ছে। আমি প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীকে জানিয়েছি, স্কুল কোনও ভাবে কামাই করা চলবে না।’’ বিষয়টি ব্লক প্রশাসনকে একাধিকবার জানানো হয়েছে বলে তাঁর দাবি।
ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, ওই স্কুলে আগে শৌচাগার করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষের রক্ষণবেক্ষণের অভাবে সমস্যা তৈরি হতে পারে।