পথ: খানাখন্দ রাস্তাই দিয়েই যাতায়াত। নিজস্ব চিত্র
কথা ছিল ‘হেরিটেজ’ রানওয়ের ভাঙাচোরা চেহারাটা বদলানো হবে। পুরনো রানওয়ের চেহারা না হোক অন্তত এলাকার সড়ক হিসাবেও একটা ভদ্রস্থ চেহারা দেওয়া হবে। কিন্তু প্রশাসনের সব স্তরেই কথাটা ভাবনার স্তরেই থেকে গিয়েছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ভারতের অন্যতম বায়ুসেনা ছাউনি ছিল বীজপুরের জেঠিয়া পঞ্চায়েতের মালঞ্চ গ্রাম। গ্রামের বুক চিরে চলে যাওয়া রাস্তা ছিল সে সময়ের রানওয়ে। রয়্যাল এয়ারফোর্সের ঘাঁটি থেকে স্পিড ফায়ার, হ্যারিকেন, টি-ফর্টিস-এর মতো ছোট এরোপ্লেন ওঠানামা করত এই রানওয়েতে। ঝাঁ-চকচকে বাঁধানো রানওয়ে এখন হাড়-পাঁজর বের করা গ্রামীণ সড়ক। মালঞ্চ গ্রামের ১৪ হাজার বাসিন্দার যাতায়াতের প্রধান রাস্তাও বটে। ৩৫ ফুট চওড়া এই রানওয়ের অনেক দিন আগেই কংক্রিটের ঢালাই ভেঙে গিয়েছিল।
নির্বাচনের আগে দু’একবার পঞ্চায়েতের উদ্যোগে কোথাও কোথাও রাস্তায় তাপ্পি পড়লেও এক বর্ষাতেই তা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। জনবসতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তা জবরদখলও হয়েছে। নিকাশির ব্যবস্থা নিয়েও মাথা ঘামায়নি পঞ্চায়েত। ‘হেরিটেজ’ হিসাবে চিহ্নিত করা এবং রাস্তা সারানোর দাবিতে ব্যারাকপুর ১ ব্লক অফিসে বহুবার ছুটোছুটি করেছেন এলাকার বাসিন্দা মনোজ দাস, সমীর ঘোষরা। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি বলে অভিযোগ তাঁদের।
জেলা পরিষদ ইতিমধ্যেই টেন্ডার করেছে। ওয়ার্ক অর্ডারও বেরিয়ে গিয়েছে। ৪২ লক্ষ টাকা রাস্তা সংস্কারের জন্য খরচ হবে। চলতি মাসের শেষে রাস্তার কাজে হাত দেওয়া হবে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে। ব্যারাকপুরের মহকুমাশাসক পীযূষ গোস্বামী বলেন, ‘‘এই রাস্তাটি এখানকার মানুষের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘ দিন পরে রাস্তাটি সারানোর উদ্যোগ করা হয়েছে।’’
বছর পনেরো আগে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার টাকায় রাস্তা সারানোর খসড়াও হয়েছিল। সিপিএমের দখলে দীর্ঘ দিন এই পঞ্চায়েত থাকলেও রাস্তা সারানোর জন্য একবারই টাকা খরচ করা হয়েছিল। কিন্তু সেই রাস্তাও টেঁকেনি। তখনকার পঞ্চায়েতের উপপ্রধান অমলেন্দু বিশ্বাসের বক্তব্য, ‘‘আমাদের কাছে এটি হেরিটেজ পথই। ছোটবেলায় বাবা-কাকাদের কাছে কত এরোপ্লেন ওঠানামার গল্প শুনেছি। ১৬৮টি বাড়ির মালিককে জবরদখলের জন্য সতর্ক করা হয়েছে। সাধ্যমতো রাস্তাও সারানো হয়েছে। কিন্তু এই রাস্তার ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনুযায়ী কাজের কাজ সে ভাবে কিছু হয়নি।’’
হালিশহর স্টেশন থেকে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের ধারে বায়ুসেনা ছাউনির পুরনো কন্ট্রোল রুম পর্যন্ত প্রায় দু’কিলোমিটার রাস্তাকে প্রথমে ‘হেরিটেজ’ ঘোষণা করার দাবি তুলেছিলেন এলাকার বাসিন্দারাই। ২০০৬ সালে একবার বায়ু সেনা কর্তৃপক্ষ ওই রাস্তাটি জরিপ করে। বায়ু সেনার পক্ষ থেকে জানানো হয়, বীজপুরের ওই বায়ু সেনা ছাউনিতে এরকম ছ’টি রানওয়ে ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে এখান থেকে বায়ু সেনার ঘাঁটি সরে গেলে আস্তে আস্তে সেনা ছাউনিটির জায়গাও কমে যায়। জনবসতি বাড়তে থাকে ওই অঞ্চলে। সেনা ছাউনির মাঝখান দিয়েই কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি হয়। কাটা পড়ে রানওয়েটিও। তত দিনে অবশ্য রানওয়ে পুরোদস্তুর রাস্তা মালঞ্চ গ্রামের বাসিন্দাদের।