অঙ্ক নিয়ে সমস্যা হলে আমার কাছে চলে এসো, বলে গেলেন অমিত

যুবক আরও জানান, অরঙ্গবাদে তাঁর অনেক ছাত্র আছে। এই সূত্র ধরে হ্যাম রেডিয়োর সদস্যেরা সেখানে পৌঁছে যান।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পেট্রাপোল শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২৪ ০৯:২৩
Share:

বাড়ি ফেরার আগে বাবার সঙ্গে অমিত। নিজস্ব চিত্র।

পেট্রাপোল সীমান্তে ঘোরাঘুরি করছিলেন বছর ছত্রিশের যুবক। বিড়বিড় করে কী যেন হিসেব কষছিলেন। কখনও মাটিতে কাঠের টুকরো দিয়ে অঙ্ক করছিলেন। চেয়েচিন্তে খাবার জুটছিল। পরিচয় জানতে চেয়ে প্রশ্ন করলে হিন্দিতে পাল্টা জিজ্ঞেস করতেন, ‘আপনার কোনও সমস্যা হচ্ছে! আমাকে ছেড়ে দিন। অঙ্ক করতে দিন।’

Advertisement

এক যুবক বিষয়টি পেট্রাপোল থানার ওসি উৎপল সাহাকে জানান। তাঁর নির্দেশে হ্যাম রেডিয়োর ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাবের সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাসের কাছে খবর আসে। অম্বরীশ বলেন, ‘‘পরিচয় জানতে চেয়ে কথা বলতে গেলে উনি আমাকেও অঙ্ক নিয়ে প্রশ্ন করেন। মুখে মুখে অঙ্কের সমাধান করে দিচ্ছিলেন। কেসি নাগের বই থেকে কিছু অঙ্ক দিই। সঙ্গে সঙ্গে সমাধান করে দিলেন! তাজ্জব বনে গিয়েছিলাম।’’ বহু পথভোলা মানুষকে উদ্ধার করে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছেন অম্বরীশ। কিন্তু অঙ্কে এমন পারদর্শী কাউকে পথেঘাটে আগে দেখেননি।

কথা বলতে বলতে যুবক এক পঞ্চায়েত প্রধানের নাম জানতে পারে রেডিয়ো ক্লাব। যুবক আরও জানান, অরঙ্গবাদে তাঁর অনেক ছাত্র আছে। এই সূত্র ধরে হ্যাম রেডিয়োর সদস্যেরা সেখানে পৌঁছে যান। জানা যায়, যুবকের নাম অমিত কুমার। বাড়ি উত্তরপ্রদেশের রামগড়ে। হ্যাম রেডিয়ো ক্লাবের তরফে জানানো হয়েছে, এলাকায় অঙ্কের শিক্ষক হিসেবে জনপ্রিয় ছিলেন অমিত।

Advertisement

ছেলের খবর পেয়ে বাবা গামাপ্রসাদ সহ আত্মীয়েরা গাড়ি নিয়ে দিন কয়েক আগে পেট্রাপোল থানায় আসেন। জানা যায়, ওই যুবক তাঁর এলাকায় ১৫টি গ্রামের ৩১২ জন ছাত্রছাত্রীকে বিনা পয়সায় অঙ্ক শেখাতেন। গত চোদ্দো বছর ধরে এই কাজ করতেন।

অমিতকে তিন বছর পরে ফিরে পেয়ে গ্রামে যেন উৎসব লেগে গিয়েছে বলে জানা গেল। পরিবার সূত্রের খবর, বছর তিনেক ধরে নিখোঁজ ছিলেন অমিত। কিছুটা মানসিক সমস্যা দেখা দিয়েছিল তাঁর। হঠাৎ বেপাত্তা হয়ে যান। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও আগে সন্ধান মেলেনি।

রবিবার রাতে ওসি উৎপল সাহার উপস্থিতিতে বাবার হাতে তুলে দেওয়া হয় অমিতকে। ছিলেন হ্যাম রেডিয়ো ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাবের সদস্য রুদ্রপ্রসাদ ঘোষ এবং স্থানীয় যুবক কল্যাণ বিশ্বাস।

যাওয়ার সময়ে অমিত হিন্দিতে বলে গিয়েছেন, ‘‘অঙ্ক নিয়ে কোনও সমস্যা হলেই আমার কাছে চলে আসবেন!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement