বাড়ির অমতে তৃণমূল সমর্থক যুবককে বিয়ে করেছিলেন সিপিএম পরিবারের মেয়ে। তারপর থেকেই মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চাননি বাবা। দিন কয়েক আগে বাপের বাড়ি এসেছিলেন সদ্য বিবাহিতা তরুণী। ইচ্ছে ছিল, নিজের ভোটার কার্ড এবং রেশন কার্ড নিয়ে যাওয়া, ভোট দেবেন। কিন্তু বাবা মেয়ের মুখের উপরে জানিয়ে দেন, তাঁকে ভোটার কার্ড এবং রেশন কার্ড কোনওটাই দেওয়া হবে না। বাবার আশঙ্কা ছিল, তৃণমূল সমর্থক জামাইয়ের কথা শুনে তাঁর মেয়েও বুঝি জোড়াফুলেই ভোট দেবেন। কিন্তু সোমবার দিনের শেষে মেয়ের ভোট দেওয়ার অবশ্য আটকাতে পারলেন না বাবা। সোমবার ঘটনাটি ঘটেছে হাবরা বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত শ্রীপুর এলাকায়।
পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মাস তিনেক আগে শ্রীপুরের ওই তরুণী স্থানীয় জয়গাছি আদর্শপল্লির এক যুবককে বিয়ে করেন। সোমবার স্বামীর কথা শুনে তিনি সচিত্র পরিচয়পত্র ছাড়াই বুথে ভোট দিতে যান। ওই তরুণীর বাবা সিপিএমের সক্রিয় কর্মী। এ দিন তিনি পাড়ার বুথে সিপিএমের এজেন্ট ছিলেন। বুথের মধ্যে নিজের মেয়েকে ঢুকতে দেখে প্রথমে তিনিই আপত্তি করে বলেন, ‘‘ভোটার কার্ড ছাড়া কাউকে ভোট দিতে দেওয়া যাবে না।’’ তখন তরুণীটি বুথে পাহারায় থাকা পুলিশ কর্মী এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের বিষয়টি জানান। খবর যায় হাবরা থানার আইসি দেবাশিস চক্রবর্তীর কাছে। সেখান থেকে খবর পৌঁছয় জেলাশাসক মনমীত কৌর নন্দার কাছে।
জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, জেলাশাসক পুলিশকে ওই তরুণীর ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন। সেই মতো তরুণীকে নিয়ে বাপের বাড়িতে যায় পুলিশ। অনেক খোঁজাখুঁজির পরে জানা যায়, ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড রয়েছে একটি বাক্সের ভেতরে। পুলিশ সেই বাক্সের তালা ভেঙে সেগুলি উদ্ধার করে তরুণীর হাতে তুলে দেয়। তারপর ভোট দেন তিনি।
পুলিশের কাছে ওই তরুণী দাবি করেছেন, ‘‘বাবা কট্টর সিপিএম সমর্থক। তাই একটি ভোটও অন্য দিকে যাক, সেটা তিনি সেটা চাননি।’’
জেলাশাসক বলেন, ‘‘ওই তরুণীর বয়স আঠারো বছরের বেশি। তার সচিত্র পরিচয়পত্র-সহ কিছু নথিপত্র জোর করে আটকে রাখা হয়েছিল। অভিযোগ পেয়ে পুলিশের সহযোগিতায় তাঁকে নথিপত্র ফেরত দেওয়া হয়েছে। তিনি ভোটও দিয়েছেন।’’ হাবরার বিদায়ী বিধায়ক তথা তৃণমূল প্রার্থী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের দাবি, ‘‘কোনও বাবা তাঁর মেয়ের ব্যক্তিগত স্বাধীনতায় এ ভাবে হস্তক্ষেপ করতে পারেন না। কে কাকে ভোট দেবেন সেটা তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার।’’