সাপের ভয়ে কাজ শিকেয় 

এই পরিস্থিতিতে অফিসে আসা আতঙ্কের হয়ে দাঁড়িয়েছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির ক্যানিং ডিভিশনাল অফিসের কর্মীদের কাছে। কখনও পায়ের তলায় দিয়ে সরসর করে চলে যাচ্ছে কালাচ-চন্দ্রবোড়া, কখনও টেবিলের নীচে ঘুর ঘুর করছে।

Advertisement

প্রসেনজিৎ সাহা 

ক্যানিং শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:২১
Share:

জড়োসড়ো: চেয়ার থেকে পা নামাতে সাহস পাচ্ছেন না কর্মীরা। নিজস্ব চিত্র

সাত সকালে খোসমেজাজে অফিসে ঢুকছিলেন এক যুবক। হঠাৎ থমকে দাঁড়ালেন। সিঁড়িতে তাঁর পাশে পাশে যে চলেছে, তার দিকে চোখ পড়ায় আত্মারাম খাঁচাছাড়া হওয়ার জোগাড় যুবকের। দ্রুত পায়ে এগিয়ে যাবেন, না উল্টো দিকে ছুট লাগাবেন ভেবে না পেয়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন। শিড়দাঁড়া দিয়ে ঠান্ডা স্রোত নেমে গেল যেন। কারণ, তাঁর পায়ের পাশে তখন হেলেদুলে অফিসে ঢুকছে মাঝারি মাপের এক কেউটে সাপ!

Advertisement

এই পরিস্থিতিতে অফিসে আসা আতঙ্কের হয়ে দাঁড়িয়েছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির ক্যানিং ডিভিশনাল অফিসের কর্মীদের কাছে। কখনও পায়ের তলায় দিয়ে সরসর করে চলে যাচ্ছে কালাচ-চন্দ্রবোড়া, কখনও টেবিলের নীচে ঘুর ঘুর করছে। সিমেন্ট বাঁধানো মেঝেতেও পা রেখে কাজ করার সাহস পাচ্ছেন না কর্মীরা। চেয়ারে পা তুলে বসে হাঁটু ব্যথা হয়ে গেল, বললেন এক কর্মী। কিন্তু উপায় নেই। যত দিন সাপের উপদ্রব থেকে নিস্তার না মিলছে, চাকরি করতে এসে বেঘোরে প্রাণ খোয়াতে রাজি নন কেউ। এই পরিস্থিতিতে কেউ কেউ ছুটিরও আবেদন করে বসেছেন।

ক্যানিং স্পোর্টস কমপ্লেক্স মাঠের একপাশে জেলা পরিষদের আর্থিক আনুকূল্যে বছর বারো আগে তৈরি হয়েছিল তিনতলা একটি ভবন। মূলত মার্কেট কমপ্লেক্সের জন্য এটি তৈরি হলেও বাস্তবে তা হয়নি। এই ভবনের তৃতীয় তলে রয়েছে রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানির ক্যানিং ডিভিশনাল অফিস। দ্বিতীয় তলে মহকুমাশাসকের গোডাউন ও পূর্ত দফতরের একটি অফিস থাকলেও তা বেশিরভাগ সময়েই বন্ধ থাকে। নীচের তলায় আগে ক্যানিং মহকুমা পুলিশের রিজার্ভ ফোর্স থাকলেও বেশ কয়েক মাস তাদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আপাতত এই গোটা ভবনে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার অফিসটিই একমাত্র চালু রয়েছে।

Advertisement

গত দু’তিন মাস ধরে সাপের আনাগোনা বেড়েছে অফিসে। বিল্ডিংয়ের আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে দাঁড়াশ, কেউটে, চন্দ্রবোড়া, কালাচের মতো নানা জাতের সাপ। বুলবুলের পরে গত কয়েক দিনে সাপের উপদ্রব আরও বেড়েছে বলে জানালেন অনেকেই। ভয়ে সিঁটিয়ে আছেন দফতরের জনা তিরিশ কর্মী। সন্ধ্যা নামার আগেই অফিসের কাজ সেরে বেরিয়ে পড়তে চাইছেন সকলে।

কিন্তু বুলবুলে ক্যানিং মহকুমায় বিদ্যুৎয়ের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে অনেক রাত পর্যন্ত কাজ করতে হচ্ছে কর্মীদের। তাই আতঙ্ক আরও বেড়েছে। দফতরের কর্মী সৃঞ্জয় রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘অফিসটা যেন সাপের আড্ডাখানা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেখানে সেখানে সাপ ঘুরছে। আমরা খুবই আতঙ্কিত।” সুজয় মণ্ডল, প্রসূন চট্টোপাধ্যায়, সায়ন্তন হাজরা বলেন, ‘‘অফিসে আসতেই ভয় লাগছে। সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামার সময়ে সাপ ঘুরতে দেখা যাচ্ছে, কখনও ফাইলপত্রের ভিতরেও গুটিসুটি মেরে বসে থাকছে ওরা।’’

সমস্যার কথা ডিভিশনাল ম্যানেজারকে জানিয়েছেন কর্মীরা। ইতিমধ্যেই ভবনের আশপাশের আগাছা, আবর্জনা সাফ করিয়েছেন ডিভিশনাল ম্যানেজার সুকুমার সাহানা। তিনি বলেন, ‘‘আগে এক-আধটা সাপ দেখা গেলেও এখন মাঝে মধ্যেই অফিসের মধ্যে সাপের দেখা মিলছে। এতে অফিসের কর্মীরা যথেষ্ট আতঙ্কে আছেন। ভবনের চারদিকে পরিচ্ছন্ন করে ব্লিচিং দেওয়া হচ্ছে। দেখা যাক কি হয়।”

সাপ নিয়ে কাজ করা ক্যানিংয়ের যুক্তিবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থার সহ সম্পাদক নারায়ণ রাহা বলেন, ‘‘প্রথমে বাড়িটির চারদিকে ভাল করে সাফ করে ব্লিচিং ও চুন ছড়িয়ে দিতে হবে। তা হলেই কিছুটা সাপের উপদ্রব কমবে। আর এলাকায় অতিরিক্ত পরিমাণে সাপ দেখা গেলে বন দফতরকে খবর দিলে ওরা সাপ ধরে নিয়ে যাবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement