সরকারি প্রকল্পকে হাতিয়ার করে বদলাচ্ছে মগরাহাট

বিষমদ কাণ্ডে ১৭২ জনের মৃত্যুর ঘটনায় গোটা রাজ্যের নজরে এসেছিল মগরাহাট। ২০১১ সালের ৭ ডিসেম্বর ওই ঘটনার কিছু দিনের মধ্যেই বিদ্যুৎ চুরি রুখতে গিয়ে মগরাহাটের নৈনানে পুলিশের গুলিতে প্রাণ যায় দুই গ্রামবাসীর। জনতার মারে জখম এক পুলিশ কর্মী মারা যান কিছু দিন পরে।

Advertisement

দিলীপ নস্কর

শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৬ ০১:৩২
Share:

বিষমদ কাণ্ডে ১৭২ জনের মৃত্যুর ঘটনায় গোটা রাজ্যের নজরে এসেছিল মগরাহাট। ২০১১ সালের ৭ ডিসেম্বর ওই ঘটনার কিছু দিনের মধ্যেই বিদ্যুৎ চুরি রুখতে গিয়ে মগরাহাটের নৈনানে পুলিশের গুলিতে প্রাণ যায় দুই গ্রামবাসীর। জনতার মারে জখম এক পুলিশ কর্মী মারা যান কিছু দিন পরে। সে নিয়েও সারা রাজ্যে তোলপাড় কম হয়নি।

Advertisement

এক সময়ে এলাকাটি ছিল কার্যত দুষ্কতীদের আঁতুর ঘর। চুরি-ছিনতাই, খুন-খারাপি লেগেই থাকত। স্টেশন চত্বর ছিল চোলাই, সাট্টা, জুয়ার স্বর্গরাজ্য। কিন্তু দিন বদলেছে। মানুষের হাতে সরকারি প্রকল্পের নানা সুযোগ সুবিধা পৌঁছে গিয়েছে। আগ্রহ বেড়েছে শিক্ষার প্রতি। ফলে বদলাচ্ছে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান, বদলে যাচ্ছে মগরাহাট।

ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, যেখানে ২০১১-২০১২ সালে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে খরচের পরিমাণ ছিল ৮৩ লক্ষ টাকা, সেটা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ কোটি টাকায়। ২০১১-২০১২ আর্থিক বর্ষে প্রকল্পের আওতায় কাজ পেয়েছিল আড়াই হাজার পরিবার। বর্তমানে সেটা দাঁড়িয়েছে, ১৩ হাজারে। ‘জল ধরো জল ভরো’ প্রকল্পের কাজে তো বটেই, পুকুর কাটা, গ্রামের রাস্তায় ইট পাতা, কংক্রিটের রাস্তা তৈরি, কলা বাগান, রাস্তা দু’ধারে ফল ও অন্যান্য গাছ লাগানো-সহ নানা কাজ করা হয়েছে এই টাকায়।

Advertisement

২০১১-২০১২ সালে ইন্দিরা আবাস যোজনায় ৮৩৩টি ঘর বিলি হয়েছিল। ২০১৫-২০১৬ সালে সংখ্যাটা বেড়ে হয়েছে ২৬০০টি। একই ভাবে ২০১১-২০১২ সালে শৌচাগার দেওয়া হয়েছিল ৩৮৫টি। ২০১৫-২০১৬ আর্থিক বর্ষে ৯ হাজার পরিবার ওই প্রকল্পের আওতায় পাকা শৌচালয় পেয়েছে। এ ছাড়া, এলাকায় বিভিন্ন গ্রামে পোশাক তৈরির কাজ বেড়েছে। বেড়েছে জরির কাজ। গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ পৌঁছে যাওয়ায় সার্বিক ভাবে কুটির শিল্পের প্রসার হচ্ছে। ফলে মানুষের হাতে টাকার জোগান বাড়ছে। অনেক গ্রামের রাস্তাঘাট পাকা বা কংক্রিটের হওয়ায় অন্ধকার জগতের পুরনো পেশা ছেড়ে অনেকে ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে। হাতে দু’পয়সা আসায় ছেলেমেয়ে ভাল স্কুলে পাঠাতে চাইছে বহু পরিবার। কথা হচ্ছিল স্থানীয় বাসিন্দা তৈয়ব আলি মোল্লা, জালাল মোল্লাদের সঙ্গে। তাঁরা জানালেন, মগরাহাট মূলত সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকা। এক সময়ে পরিবারের লোকেরাই ছেলেমেয়েদের স্কুলে যেতে দিতেন না। তা ছাড়া, সে সময়ে অভাবের সংসারে পড়াশোনা নিয়ে কারও তেমন মাথা ঘামানোর ইচ্ছাও ছিল না। এখন ছবিটা বদলাচ্ছে।

উন্নয়নের হাত ধরে যে কারণে, নারী ও শিশু পাচার, চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই-সহ অসামাজিক কাজকর্মও কমছে— জানাচ্ছে পুলিশের একটি সূত্র। ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, ইদানীং স্কুলছুটের সংখ্যাটাও কমেছে।

তবে সামাজিক ও আর্থিক উন্নয়নের এই ধারায় মগরাহাট-২ বিডিও-র তারিফ করছেন অনেকেই। বিডিও খোকনচন্দ্র বালা অবশ্য বিনয়ের সঙ্গে বললেন, ‘‘সরকারি সমস্ত প্রকল্পে যতটা পারি মানুষকে সাহায্য করার চেষ্টা করি। অনেকেই নানা সরকারি সাহায্যে পেয়ে উপকৃত হয়েছেন।’’ বিডিও জানালেন, যে সমস্ত পরিবারের সদস্য বিষ মদে মারা গিয়েছিলেন, তাঁদের পরিবারকে ইন্দিরা আবাস যোজনার ঘর দেওয়া হয়েছে।

শাসনে মারপিট। দু’দল গ্রামবাসীর মারামারিতে উত্তপ্ত হল শাসনের চোলপুর গ্রাম। জখম হয়েছেন দু’পক্ষের ৫ জন। অভিযোগ, গুলিও চলেছে। একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সকলেই বারাসত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ভেড়ির টাকার বখরা নিয়েই মঙ্গলবার রাতে গোলমালের সূত্রপাত। কেউ গ্রেফতার হয়নি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement