Sundarban

ম্যানগ্রোভ সংরক্ষণেও জোর দিক প্রশাসন, দাবি

ভেড়ি, বেআইনি নির্মাণের জন্য ম্যানগ্রোভ কাটা হয়েছে বলেও অভিযোগ।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

সুন্দরবন  শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০২১ ০৭:২০
Share:

রক্ষণাবেক্ষণ: বেড়ে উঠছে গতবছর জেলা প্রশাসনের লাগানো ম্যানগ্রোভ। ভগবৎপুর রেঞ্জের কিশোরীনগর গ্রামে সপ্তমুখী নদীর চরে। নিজস্ব চিত্র।

Advertisement

সুন্দরবন বাঁচাতে ম্যানগ্রোভের বিকল্প নেই। বিশেষজ্ঞরা তা বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন। সাম্প্রতিক কয়েকটি দুর্যোগে ম্যানগ্রোভের কার্যকারিতা বোঝা গিয়েছে। যে সমস্ত এলাকায় নদী বাঁধে ম্যানগ্রোভ ছিল, ইয়াসে সেখানে কম ক্ষতি হয়েছে। যেখানে ম্যানগ্রোভ ছিল না, সেখানে ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি। ঝড়ের পরই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সুন্দরবন-সহ রাজ্যের বিভিন্ন উপকূলবর্তী এলাকায় নতুন করে ১৫ কোটি ম্যানগ্রোভ রোপণের কথা ঘোষণা করেছেন। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলাতে পাঁচ কোটি ম্যানগ্রোভ লাগানো হবে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর। ইতিমধ্যে জেলায় ম্যানগ্রোভ রোপণের কাজ শুরুও হয়ে গিয়েছে।

গতবছর আমপানের পরেও সরকারের তরফে ম্যানগ্রোভ রোপণ করা হয়। সুন্দরবন জুড়ে সে বার পাঁচ কোটিরও বেশি ম্যানগ্রোভ বসানো হয়েছিল বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। কিন্তু স্থানীয়রা জানান, অনেক ক্ষেত্রে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে প্রশাসনের বসানো সেই ম্যানগ্রোভ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কোথাও কোথাও ভেড়ি, বেআইনি নির্মাণের জন্য ম্যানগ্রোভ কাটা হয়েছে বলেও অভিযোগ। ফের বসানো হলে, সেই ম্যানগ্রোভের ভবিষ্যত কী হবে, সেই প্রশ্ন উঠছে। স্থানীয়দের দাবি, ম্যানগ্রোভ বসানোর পাশাপাশি তার রক্ষণাবেক্ষণেও সমান নজর দিক প্রশাসন।

Advertisement

সুন্দরবনের ১৩টি ব্লকের সমস্ত পঞ্চায়েতকে ম্যানগ্রোভ রোপণ করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু অভিযোগ, কয়েকটি বাদে, বাকি পঞ্চায়েতগুলি ম্যানগ্রোভ রোপণে তেমন গুরুত্ব দেয়নি। ম্যানগ্রোভ রক্ষণাবেক্ষণেও তেমন গুরুত্ব নেই। দক্ষিণ ২৪ পরগণা বনবিভাগ সূত্রের খবর, এলাকায় ২০০০ হেক্টর জমিতে গত বছর ম্যানগ্রোভ লাগানো হয়। সম্প্রতি এলাকা ঘুরে দেখা গেল, কয়েকটি জায়গায় রোপণ করা ম্যানগ্রোভের বৃদ্ধি ভালই হয়েছে। তবে কিছু জায়গায় গাছের আরও যত্নের প্রয়োজন। সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প ম্যানগ্রোভ লাগিয়েছিল ৫০০ হেক্টর জমিতে। সেই গাছের অধিকাংশই তেমন বাড়েনি। বিশেষজ্ঞরা জানান, ব্যাঘ্র প্রকল্প এলাকায় ম্যানগ্রোভ রোপণের জন্য জমি নির্বাচন সঠিক হয়নি। সেই কারণেই সেখানে ম্যানগ্রোভের বৃদ্ধি শ্লথ হয়েছে।

গোসাবার রাঙাবেলিয়া হাই স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণগোপাল মণ্ডল বলেন, “সরকারের ম্যানগ্রোভ লাগানোর পরিকল্পনাকে সাধুবাদ জানাই। তবে শুধু ম্যানগ্রোভ লাগালেই হবে না। সেগুলিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সঠিক পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থাও প্রশাসনকে করতে হবে। না হলে এই পরিকল্পনা ব্যাহত হবে।”

গোসাবার বিডিও সৌরভ মিত্র বলেন, “আমপানের পর আমরা গোসাবা ব্লকের বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় প্রায় ১৩০ হেক্টর জমিতে ম্যানগ্রোভ রোপণ করেছিলাম। দু’তিনটি পঞ্চায়েত খুব ভাল কাজ করেছিল। এবার সমস্ত পঞ্চায়েত ম্যানগ্রোভের নার্সারি তৈরি করে, নদীর চরে সেই ম্যানগ্রোভ রোপণ করবে। ম্যানগ্রোভের রক্ষণাবেক্ষণের দিকেও নজর দেওয়া হচ্ছে। বন দফতর ও গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিকে ম্যানগ্রোভ পরিচর্যার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এলাকা থেকে কোনও অসাধু মানুষ যাতে এই গাছ না কাটতে পারে, সে দিকে নজর রাখবে প্রশাসন।”

সুন্দরবন পুলিশ জেলার তরফেও সম্প্রতি এলাকায় ম্যানগ্রোভ রোপণ শুরু হয়েছে। পুলিশ জেলা সূত্রের খবর, এলাকার ১১টি থানার তরফে এলাকায় তিন থেকে পাঁচ হাজার করে ম্যানগ্রোভ রোপণ করা হবে। বনদফতর থেকে আনা ওই চারা নদী বা সমুদ্রের চরে বসাচ্ছেন পুলিশ, সিভিক ভলান্টিয়াররা। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। কিন্তু ম্যানগ্রোভ রক্ষণাবেক্ষণের কী হবে? পুলিশ জানিয়েছে, ম্যানোগ্রোভ সুরক্ষার জন্য কোথাও কোথাও জাল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হচ্ছে। এলাকার পঞ্চায়েত ও স্থানীয় বাসিন্দাদের নজর রাখার জন্য বলা হয়েছে। সুন্দরবন পুলিশ জেলার সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “নদী ও সমুদ্র লাগোয়া থানাগুলিতে ৪০ হাজার চারা বসানো হচ্ছে। প্রাকৃতিক উপায়ে প্রকৃতিকে বাঁচানো এবং ম্যানগ্রোভ বসানোর বিষয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোই আমাদের লক্ষ্য। এই ম্যানগ্রোভ যাতে নষ্ট না হয় বা কেউ বেআইনি ভাবে না কাটে, তার জন্য নজরদারি চলবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement