সতর্ক: ভাঙড়ের নলমুড়ি ব্লক হাসপাতালে লালারস সংগ্রহ।— নিজস্ব চিত্র
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেন হাবড়া শহরের এক বাসিন্দা এক বৃদ্ধ। এর আগে হাবড়ার এক তরুণী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি স্কটল্যান্ডে থাকতেন। কলকাতা বিমান বন্দরে নেমে সরাসরি বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তিনি এখন সুস্থ হয়ে হাবড়ার বাড়িতে ফিরেও এসেছেন।
যে বৃদ্ধ আক্রান্ত হয়েছেন, তিনি হাবড়াতেই থাকেন। পুরসভা ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মূত্রে সংক্রমণ নিয়ে ওই বৃদ্ধ ২৭ এপ্রিল থেকে দমদম মিউনিসিপ্যালিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে জানা যায়, তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত।
হাবড়ার বিডিও শুভ্র নন্দী বলেন, ‘‘বুধবার হাবড়ার এক ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁর বাড়ির এলাকা কন্টেনমেন্ট জোন হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে আক্রান্ত বাড়ির আশেপাশে দমকলের সাহায্যে জীবাণুনাশ করা হয়। পরিবারের বাকি সদস্যদের হোম কোয়রান্টিনে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আক্রান্ত ব্যক্তির বাড়ির চারপাশে আলাদা আলাদা দু’টি ব্যারিকেড করে বাসিন্দাদের এলাকাতেই থাকতে বলা হয়েছে। পুরসভার তরফে একটি কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে তাঁদের যাবতীয় সাহায্য করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রাক্তন পুরপ্রধান নীলিমেশ দাস।
এ দিনও অবশ্য হাবড়া শহরে হুড়মুড়িয়ে লোকজন পথে নেমেছিলেন। মাস্ক না পড়ে এলাকায় ঘোরাঘুরি করতে দেখা গিয়েছে বহু মানুষকে।
অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভা এলাকায় ফের এক ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেন। তিনি কলকাতা বন্দরে কর্মরত ছিলেন। পুরপ্রধান প্রবোধ সরকার জানান, বৃহস্পতিবার ওই ব্যক্তির করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট এসেছে আমাদের কাছে। তিনি পজ়িটিভ। প্রশাসন ও পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, আক্রান্ত ব্যক্তি ২২ এপ্রিল বাড়ি থেকে বন্দরে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তী সময়ে তাঁর লালারস পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। পুরপ্রধান বলেন, ‘‘আক্রান্ত ব্যক্তি ২২ এপ্রিলের পরে আর বাড়িতে আসেননি। তিনি এখন কম্যান্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পুরসভার পক্ষ থেকে এলাকা স্যানিটাইজ করা হয়েছে। শুক্রবার এলাকাটি কন্টেনমেন্ট জ়োন ও বাফার জোন হিসাবে তৈরি করা হবে। ওই ব্যক্তির বাড়িতে স্ত্রী-মেয়ে রয়েছেন। তাঁদের বাড়ি থেকে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে।’’ অশোকনগরে এই নিয়ে চারজন করোনায় আক্রান্ত হলেন।
মগরাহাটের গ্রামে ক’দিন আগেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। ফের বুধবার রাতে আরও একটি করোনা পজ়িটিভ মিলল ওই এলাকার গ্রামে। বছর তিরিশের প্রসৃতি মহিলা এমআর বাঙ্গুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মগরাহাট গ্রামীণ হাসপাতালে বিএমওএইচ মহম্মদ গওসুল আলম বলেন, ‘‘ওই মহিলার পজ়িটিভ রির্পোট পেয়েছি। পরিবার ও প্রতিবেশী মিলিয়ে ৭৫ জনের লালারস পরীক্ষার জন্য সংগ্রহ করা হয়েছে। ২৩ জনকে কন্টেনমেন্টে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ প্রশাসন সূত্রের খবর, গ্রামে নজরদারি চালাতে পুলিশ ও স্বাস্থ্যকর্মী মোতায়ন রয়েছেন। গ্রামের বেরোনোর পথগুলি ব্যারিকেড করার চিন্তা-ভাবনা চলছে।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দিন পাঁচেক আগে রাজারহাটের এক হাসপাতালে ওই মহিলার কন্যাসন্তান প্রসব হয়। বুধবার রাতে তাঁর করোনা রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। রাতেই মহিলার বাড়িতে পৌঁছে যান স্বাস্থ্যকর্মীরা।
এ দিন সকালে ওই গ্রামে যান ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতাল ও মগরহাট গ্রামীণ হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। অনেকের ঘরে পৃথক শৌচালয় নেই। সে ক্ষেত্রে কনটেনমেন্টে থালাকালীন কী হতে পারে, তা ভেবে চিন্তিত অনেকে। গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘আমার প্রায় দু’বিঘা জমিতে আনাজ চাষ রয়েছে। প্রতিনিয়ত মাঠে যেতে হয়। এই অবস্থায় কী যে করব, কিছুই ভেবে পাচ্ছি না।’’