ভিড়: এ ভাবেই একসঙ্গে রাখা হচ্ছে সব রোগীদের। হাবড়া হাসপাতালে। ছবি: সুজিত দুয়ারি
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে এমন রোগীদের জন্য জেলার হাসপাতালগুলিতে আলাদা আইসোলেশন ওয়ার্ডের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কিন্তু সেই ব্যবস্থা নেই হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে।
শুধু তাই নয়, যে কোনও ধরনের সংক্রামক রোগীদের জন্য নেই আলাদা কোনও ওয়ার্ড। ডায়েরিয়া, টিবি, বসন্তে আক্রান্ত সব রোগীদের জেনারেল ওয়ার্ডে রেখেই চিকিৎসা করা হয়। সাপে কাটা ও আগুনে পোড়া, কীটনাশক খাওয়া রোগীদেরও জেনারেল ওয়ার্ডে রাখা হয়।
সাধারণ রোগীদের সঙ্গে একই ওয়ার্ডে সংক্রামক রোগের রোগীদের রেখে চিকিৎসা করাটা যে ঝুঁকিপূর্ণ তা মানছেন চিকিৎসকেরাও। তবে বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় এমনটাই চলে আসছে। এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘এমনও দেখা যায় কোনও টিবি রোগী কাশতে কাশতে রক্ত বের করে ফেলেছেন। তিনি যে মুখে হাত দিয়ে কাশেন, এমনটা নয়। তবুও আমরা যতটা সাবধানতা অবলম্বন করা সম্ভব যায়, সেটা করি।’’
হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, হাসপাতালে এখন পাঁচটি ওয়ার্ড রয়েছে। মহিলা ও পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ড, শিশু ওয়ার্ড এবং প্রসূতিদের জন্য দু’টি ওয়ার্ড। শয্যা সংখ্যা ১৩১। হাবড়া হাসপাতালের উপর হাবড়া ছাড়াও স্বরূপনগর, বাদুড়িয়া, গোবরডাঙা, গাইঘাটা, অশোকনগর ও হরিণঘাটা থানা এলাকার মানুষ চিকিৎসার জন্য নির্ভরশীল। বিস্তীর্ণ এলাকার রোগীর চাপ সামলাতে ১৩১টি শয্যা যথেষ্ট নয় বলেই মনে করছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বছরের কোনও কোনও সময় রোগীর চাপ এতটাই বেড়ে যায় যে, একটি শয্যায় তিনজন করে রোগী রেখে বা মেঝেতে রোগীকে শুইয়ে রেখে চিকিৎসা করাতে হয়। বিশেষ করে জ্বর-ডেঙ্গির প্রকোপের সময়।
করোনাভাইরাসের আতঙ্কে ইতিমধ্যে হাসপাতালে রোগী চাপ বেড়ে গিয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, আগে বহির্বিভাগে রোজ ৫০০-৭০০ রোগী দেখাতে আসতেন। এখন আসছে ১৫০০-১৬০০ জন রোগী। সামান্য সর্দি-কাশি হলেই মানুষ হাসপাতালে ছুটে আসছেন। স্বাভাবিক ভাবেই ওই রোগীর চাপ সামলাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। হাসপাতাল চত্বরে রোগীদের ভিড় বাড়ছে। যা ছোটখাটো জমায়েতে পরিণত হচ্ছে। রোগীদের বেশির ভাগেরই মুখে কোনও মাস্ক নেই। যদিও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থার অঙ্গ হিসাবে যে কোনও ধরনের ভিড় জমায়েত বন্ধ করার কথা বলছেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারাই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মনে করছে, কেউ যদি সত্যিই করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে তো ভিড়ের মধ্যে আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে। হাসপাতাল সূত্রে বলা হচ্ছে, জ্বর, সর্দি, কাশি নিয়ে আসা রোগীর আলাদা করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা গেলে দুর্ভোগ কমানো সম্ভব হত। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সেই পরিকাঠামো এবং লোকবলও নেই। এক চিকিৎসক জানান, করোনাভাইরাস নিয়ে সাধারণ মানুষ আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। সর্দি-কাশি হলেই তাঁরা হাসপাতালে ছুটে আসছেন। মানুষকে বুঝতে হবে সর্দি কাশি মানেই করোনাভাইরাস নয়। সর্দি-কাশির সঙ্গে যদি শ্বাসকষ্ট, জ্বর এবং শরীর খুব দুর্বল থাকে তা হলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের সম্ভবনা থাকে। ওই চিকিৎসকের কথায়, ‘‘শুধুমাত্র সর্দি-কাশি হলে বাড়ির কাছে স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা চিকিৎসক দেখালেই হবে।’’ হাবড়া হাসপাতাল থেকে এখনও পর্যন্ত দু’জনকে সন্দেহজনক ভাবে বারাসত জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। কিন্তু পরীক্ষার করোনাভাইরাস ধরা পড়েনি। হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালের সুপার শঙ্করলাল ঘোষ সমস্যার কথা মেনে নিয়ে বলেন, ‘‘৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্য সরকার। সেটি তৈরি হয়ে গেলে সমস্যা মিটে যাবে।’’ করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে এখন স্বাস্থ্য দফতরের তরফে একটি আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরির পরিকল্পনা চলছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে।