ফাইল চিত্র।
বিধানসভা ভোটের পরে রাজ্য জুড়ে রাজনৈতিক হিংসার অভিযোগ তুলেছিল বিজেপি। তাদের একাধিক কর্মী খুন হয়েছেন, অনেকে ঘরছাড়া বলে অভিযোগ তুলেছিল তারা। ‘ক্ষতিগ্রস্ত’ দলীয় কর্মীদের নানা ভাবে সাহায্যও করা হয়।
এ বার সেই আর্থিক সাহায্য নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে সরব হলেন বিজেপিরই এক নেতা।
দলের উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার প্রাক্তন সভাপতি মনস্পতি দেব কয়েক দিন আগে ফেসবুকে দলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার ৪১ জনের নামের তালিকা প্রকাশ করেছেন। তাঁর দাবি, এঁরা ভোটের পরে নানা ভাবে আক্রান্ত হলেও দলের পক্ষ থেকে আর্থিক ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি।
প্রাক্তন সভাপতির এই পোস্ট ঘিরে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে মনস্পতি লিখেছেন, ‘‘এঁরা বিজেপির বনগাঁ জেলার হতভাগ্য কর্মী। পোস্টপোল ভায়োলেন্সে (ভোট পরবর্তী হিংসা) সব হারিয়েছেন। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে এঁদের জন্য ক্ষতিপূরণের টাকা এসেছিল। কিন্তু এঁরা পাননি। এই আর্থিক দুর্নীতির তদন্ত হওয়া উচিত।’’
এ বিষয়ে বুধবার মনস্পতি বলেন, ‘‘যে নামের তালিকা দিয়েছি, সেটি গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে দলের রাজ্য কমিটি আমাদের পাঠিয়েছিল। এটা বলা হয়েছিল, এঁরা সকলে টাকা পেয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে কেউ এখনও টাকা পাননি। ওঁরা সকলে আমার মাথা খাচ্ছেন। ফোন করে জানতে চাইছেন, কেন টাকা পাননি।’’
মনস্পতির দাবি, রাজ্য নেতৃত্ব বার বারই জানিয়েছেন, টাকা সকলের অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব টাকা দিয়েছে রাজ্যকে। রাজ্য নেতৃত্বও বলছেন, ওঁদের অ্যাকাউন্টে টাকা দিয়েছেন। কিন্তু আদতে এঁরা কেউ টাকা পাননি বলে দাবি মনস্পতির।
মনস্পতি অবশ্য সরাসরি দলের কাউকে এ জন্য দায়ী করছেন না। বরং তিনি বলেন, ‘‘নিশ্চয়ই ব্যাঙ্কে কোনও দুর্নীতি হয়ে থাকবে। তদন্ত হওয়া উচিত।’’
দলের একাংশ যদিও অনুমান করছেন, মনস্পতির পোস্ট আসলে দলের কোন্দলেরই প্রকাশ। টাকা অ্যাকাউন্টে না ঢোকার ঘটনায় দলের কারও ভূমিকা থাকতে পারে বলেই ইঙ্গিত করেছেন তিনি। মনস্পতি এ নিয়ে প্রশ্নের কোনও জবাব দেননি।
বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি রামপদ দাস বলেন, ‘‘ভোট পরবর্তী সময়ে দলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ছিলেন মনস্পতি। তখন দলের সহ সভাপতি দেবর্ষি বিশ্বাস রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করে আক্রান্তের তালিকা পাঠিয়েছিলেন। তালিকায় কারও কারও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর এবং আইএফএস কোড ভুল ছিল। দেবর্ষি সে সব ঠিকঠাক করে পরবর্তী সময়ে আবার তালিকা পাঠান। দেবর্ষির মাধ্যমে আমরা রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি জানার চেষ্টা করছি।’’
কী বলছেন দেবর্ষি?
তাঁর কথায়, ‘‘ভোট পরবর্তী হিংসার ঘটনায় আক্রান্তদের তালিকা পাঠিয়েছিলাম। এতদিনে তাঁদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ পেয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কেন তাঁরা পাননি, তা নিয়ে আমার কাছে কোনও তথ্য নেই।’’
এই ঘটনায় তৃণমূল নেতৃত্ব বিজেপির কড়া সমালোচনা করতে ছাড়ছে না। ভোট পরবর্তী সময়ে বনগাঁয় কোনও রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা ঘটেইনি বলে দাবি করেন তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি গোপাল শেঠ। তাঁর কথায়, ‘‘বিজেপি দলটা যে অর্থনৈতিক দুর্নীতিতে জড়িত, তা মনস্পতির সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট থেকে স্পষ্ট। বনগাঁয় কোনও রাজনৈতিক হিংসা হয়নি। অথচ ভুয়ো তালিকা তৈরি হয়ে গেল!’’
বনগাঁ পুলিশ জেলা সূত্রের খবর, মহকুমায় ভোট পরবর্তী সময়ে খুন-জখম, ঘরছাড়ার কোনও অভিযোগ হয়নি। কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছিল। পুলিশ সেই মতো পদক্ষেপও করে।