ম্যাঞ্চেস্টার ডাগআউটে চেনা ছবি
ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে এক সপ্তাহের মধ্যেই উলট-পুরান! ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড এবং কোচ ডেভিড মোয়েসের কপালেও! যে ঐতিহাসিক ঘরের মাঠে ছ’দিন আগে ফান পার্সির হ্যাটট্রিক-দাপটে অলিম্পিয়াকোস-এর বাধা টপকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ আটে পৌঁছে গিয়েছিল মোয়েসের দল, সেখানেই গত রাতে ম্যাঞ্চেস্টার-ডার্বিতে সিটির কাছে ০-৩ কচুকাটা ইউনাইটেড। যার ধাক্কায় মোয়েসের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তো উঠে গিয়েছেই, সামনের মঙ্গলবার গত বারের চ্যাম্পিয়ন বায়ার্ন মিউনিখের বিরুদ্ধে ইউরোপিয়ান লিগের মহাগুরুত্বপূর্ণ লড়াইয়ে ওয়েন রুনিদের কী হাল হতে পারে ভেবে এখনই আতঙ্কিত ম্যান ইউ সমর্থকরা।
ফুটবল বিশ্বের অন্যতম ঐতিহ্যশালী ব্রিটিশ ক্লাবের এ মরসুমে প্রিমিয়ার লিগে করুণ পারফরম্যান্সে সমর্থকেরা এতটাই ক্ষুব্ধ যে, ডেকোর এক জোড়া আর ইয়াইয়া তোরের শেষ মিনিটের গোলে ডার্বিতে লজ্জাজনক হারের পর ভিআইপি গ্যালারির ম্যান ইউ সমর্থকেরা পর্যন্ত নীচে নেমে এসে কোচ মোয়েসের সঙ্গে তীব্র বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েছিলেন মঙ্গল-রাতে। একটা সময় রীতিমতো উত্তেজক পরিস্থিতি তৈরি হয় রুনি-ফার্দিনান্দদের দলের বেঞ্চের আশপাশে। মোয়েসের নিরাপত্তায় ছুটে আসতে হয় নিরাপত্তরক্ষীদের। পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে এলেও ম্যান ইউয়ে মোয়েসের ভবিষ্যৎ যথেষ্টই অনিয়ন্ত্রিত এই মুহূর্তে।
চেলসি কোচ হোসে মোরিনহো-র ‘স্পেশ্যাল ওয়ান’ নামের মতো মোয়েসকে ম্যান ইউ-তে ‘চোজেন ওয়ান’ বলা হচ্ছে এ বার। গত রাতে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের স্ট্রেটফোর্ড প্রান্তের গ্যালারিতে সেই বিরাট ব্যানারও ম্যাচ শেষে খোলার জন্য এক জন সমর্থকও ছিল না। বস্তুত মাঠের ৭০ হাজার দর্শক এবং বিশ্ব জুড়ে কয়েক কোটি টিভি-দর্শকের কল্যাণে এই ম্যাচ থেকে ম্যান ইউনাইটেডের কোষাগার ভরলেও সম্মানের কোষাগার ফাঁকা হয়ে গিয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের মত। প্রাক্তন ম্যান ইউ তারকা পল স্কোলস এ মরসুমেই দলের দায়িত্ব নেওয়া মোয়েসকে এখনও কিছুটা সময় দিতে চাইলেও কোচের প্লেয়ার রিক্রুটের তীব্র সমালোচনা করেছেন। সাড়ে সাতাশ লক্ষ পাউন্ড দিয়ে কেনা বেলজিয়ান মিডফিল্ডার ফেলানি গত রাতে সুপার ফ্লপ। রেফারির দাক্ষিণ্যে লাল কার্ড দেখা থেকে বাঁচেন। স্কোলস প্রশ্ন তুলেছেন, “ম্যান ইউ সমর্থকদের কি মনে হচ্ছে ফেলানি গ্রেট ফুটবলারের পর্যায়ে পড়ে?”
গোল দিয়ে উচ্ছ্বাস সিটির ডেকোর।
মোয়েসের দলের এ মরসুমে প্রিমিয়ার লিগে এখন পর্যন্ত ৩১ ম্যাচে দশটা হারে বিরক্ত তাঁকে যিনি নিজের উত্তরসূরি হিসেবে পছন্দ করে এনেছেন সেই অ্যালেক্স ফার্গুসনও। প্রিয় দলের সিটি-র হাতে নিগৃহীত হওয়া দেখে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য না করলেও গত রাতে ফার্গুসনকে ম্যাচ শেষে ডিরেক্টরস্ বক্সে স্পষ্টই বিরক্ত দেখাচ্ছিল। গ্যালারি ছাড়ার সময় ফার্গুসনের মতো ম্যান ইউয়ের চিরশ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্বের দিকেও কয়েক জন সমর্থক প্রকাশ্যে উষ্মা প্রকাশ করেন। নিন্দে-মন্দ করেন মোয়েসের।
গত বারের প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন ম্যান ইউ এ বার পয়েন্ট তালিকায় যেখানে সাত নম্বরে (৩১ ম্যাচে ৫১ পয়েন্ট) হামাগুড়ি খাচ্ছে, সেখানে সম্মানের ডার্বি দারুণ ভাবে জিতে ম্যান সিটি খেতাবের লড়াইয়ে। শীর্ষে থাকা চেলসির (৩১ ম্যাচে ৬৯ পয়েন্ট) থেকে পেলেগ্রিনির দল (২৯ ম্যাচে ৬৬) মাত্র তিন পয়েন্টে পিছনে। দু’টো ম্যাচ কম খেলে। গত রাতে তাদের প্রথম গোল ম্যাচের মাত্র ৪৩ সেকেন্ডে নাসরির দুর্দান্ত পাস থেকে করে নজির গড়ে ফেলেন ডেকো। দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝি ডেকো নিজের দ্বিতীয় গোল করার পর ইনজুরি টাইমে ৩-০ করেন ইয়াইয়া তোরে। দু’জনেই গোটা কয়েক সহজ সুযোগ নষ্ট না করলে পেলেগ্রিনির ম্যাঞ্চেস্টারের কাছে গোলের মালা পরতে হত মোয়েসের ম্যাঞ্চেস্টারকে। ম্যাচের সেরা দাভিদ সিলভার দাপটে মাঝমাঠ প্রায় সারাক্ষণ ম্যান সিটির দখলে থাকায় রুনিরা কখনই তেমন বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারেননি। চোটে দেড় মাস ছিটকে যাওয়া ফান পার্সির অভাব ম্যান ইউ তীব্র ভাবে টের পেলেও সিটি-কে কিন্তু আগেরো ছাড়াই ভয়ঙ্কর দেখিয়েছে।
মরসুমের অনেকটা বাকি থাকলেও এখনই মোয়েসের বিকল্প হিসেবে রায়ান গিগস, মাইক ফেলন, লুই ফান গল, যুর্গেন ক্লপ, এমনকী অ্যালেক্স ফার্গুসনের নামও শোনা যাচ্ছে ম্যান ইউয়ের অন্দরমহলে। জল্পনা চলছে, ক্লাবের চিফ এক্সিকিউটিভ এড উডওয়ার্ডকে ম্যান ইউয়ের মার্কিন মালিক গ্লেজার ফ্লোরিডার বাড়িতে ডেকে পাঠিয়ে ফার্গুসনকে ফেরত আনতে বললেও অবাকের কিছু নেই। যেমন ১৯৭০-এ ম্যাকগিনেসের কোচিংয়ে ম্যান ইউ জঘন্য খেলায় ম্যাট বুসবি-কে অবসর ভাঙিয়ে ফের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।
ডার্বি হেরে মোয়েসের “আমরা যদি সিটির মতো খেলতে পারতাম!”মন্তব্য আরও বেশি উষ্মার কারণ হয়ে উঠেছে ম্যান ইউয়ে। বলা হচ্ছে, তা হলে বায়ার্নের মুলার, সোয়াইনস্টাইগার, রিবেরি-রবেনের সামনে নড়বড়ে সেন্ট্রাল ডিফেন্স আর মিডফিল্ড নিয়ে কতটুকুই লড়বে ভীত কোচ মোয়েসের ঘেঁটে যাওয়া দল!
• ৪৩ সেকেন্ডে ডেকোর গোল প্রিমিয়ার লিগে ঘরের মাঠে ম্যান ইউয়ের দ্রুততম গোল হজম।
• ডেকোর ৪৩ সেকেন্ডের গোল ম্যাঞ্চেস্টার ডার্বির ইতিহাসে দ্বিতীয় দ্রুততম গোল।
• ২০০২-এর পর এই প্রথম প্রিমিয়ার লিগে ঘরের মাঠে ম্যান ইউ ছ’টা ম্যাচ ০-৩ হারল।
• ১৯৭৯-র পর এই প্রথম প্রিমিয়ার লিগে টানা তিন ম্যাচ ম্যান ইউ দু’গোলের বেশি ব্যবধানে হারল।
ছবি: এএফপি।