নিজের রাজত্বেই হুমড়ি সম্রাজ্ঞীর।
ব্রাজিল বিশ্বকাপে অলৌকিক রক্ষা পেলেও উইম্বলডনে সেরেনা উইলিয়ামস পেলেন না! বেলো আর লন্ডনের দু’টো মহাকাণ্ডের মধ্যে শনিবার তফাত মাত্র দশ মিনিটের! গোলকিপার সিজার আর পোস্টের কল্যাণে টাইব্রেকারে ব্রাজিল প্রথম নক আউট ম্যাচে উতরানোর সময়ই উইম্বলডনে চলছিল তৃতীয় রাউন্ড ইন্দ্রপতনের হতাশ সাংবাদিক সম্মেলন! এত সাততাড়াতাড়ি উইম্বলডন থেকে সেরেনা গত দশ বছরে ছিটকে পড়েননি!
টেনিস বিশ্বের এক নম্বর মেয়ে, সবচেয়ে ঐতিহ্যমণ্ডিত গ্র্যান্ড স্ল্যামের শীর্ষ বাছাই এ দিন প্রথম সেটে বিপক্ষকে উড়িয়ে এগিয়ে গিয়েও তৃতীয় রাউন্ডে মহানিষ্ক্রমণ ঘটালেন ৬-১, ৩-৬, ৪-৬ হেরে। সেরেনা-বধের ফরাসি নায়িকা আলিজ কর্নেট র্যাঙ্কিংয়ে মেগাপ্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ২৩ ধাপ পিছনে। বাছাই তালিকায় ২৪ ধাপ পিছিয়ে। উচ্চতা, ওজনেও পিছিয়ে। আর অভিজ্ঞতা এবং পাওয়ারে তো আকাশ-পাতালের ব্যবধান! বছর চব্বিশের সেই মেয়েই আট বছরের সিনিয়র সেরেনার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় সেটে আচমকা ৫-০ এগিয়ে যেতে অল ইংল্যান্ড ক্লাবের এক নম্বর কোর্টে বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচে অঘটনের গন্ধ পেতে শুরু করে টেনিসের ওয়াকিবহালমহল। নির্ণায়ক তৃতীয় সেটেও পঞ্চম আর সপ্তম গেমে সেরেনার সার্ভিস ব্রেক করে আলিজ ফের এগিয়ে যান ৫-২। সেরেনা একবার শেষ চেষ্টা করে আলিজের ম্যাচ উইনিং সার্ভিস ভেঙে এবং তার পর নিজের সার্ভিসে ব্যবধান ৪-৫-এ নামিয়ে এনেছিলেন। কিন্তু বেলোর সিজার হয়ে উঠতে পারেননি। দশম গেমে আলিজ আর কোনও সুযোগ দেননি সেরেনাকে। মাত্র একটা পয়েন্ট খুইয়ে ৪০-১৫-এ গেম, সেট, ম্যাচ তুলে নেন।
সেরেনা-বধের নায়িকা আলিজ।
যিনি কিনা সেরেনার বিরুদ্ধে নিজের একমাত্র জয় পেয়েছিলেন দীর্ঘ ছ’বছর আগে। সেরেনা ওয়াকওভার দেওয়ায়। এ বছরও দুবাইয়ে হার্ডকোর্টে হারেন স্ট্রেট সেটে। কিন্তু প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম যুদ্ধে কোর্ট ছাড়লেন বিজয়িনী রূপে! যিনি এ দিনের আগে বিশ্বের প্রথম কুড়িতে থাকা কাউকে কখনও হারাতে পারেননি। নিজেই ম্যাচ শেষে স্বীকার করেছেন, ‘‘এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না! তিন বছর আগেও জানতাম না ঘাসের কোর্টে সার্ভ-ভলিটা কী ভাবে খেলতে হয়। এতটাই খারাপ গ্রাসকোর্ট প্লেয়ার ছিলাম। আর আজ বিশ্বের এক নম্বরকে তাঁর সাম্রাজ্যেই হারালাম!”
আর সেরেনা? ১৭ গ্র্যান্ড স্ল্যামের মালকিনের উজ্জ্বল টেনিস-আকাশ ক্রমে মেঘাচ্ছন্ন হচ্ছে। গতবারও উইম্বলডনে শেষ ষোলোয় বিদায় নিয়েছিলেন। এ বছর অস্ট্রেলীয় আর ফরাসি ওপেনে ছিটকে যান যথাক্রমে চতুর্থ আর দ্বিতীয় রাউন্ডে। বয়স (৩২) কি তাঁর বিখ্যাত পাওয়ার গেমে থাবা বসাচ্ছে? সেরেনার নিজের অবশ্য হারের ব্যাখ্যা, “আলিজ অবিশ্বাস্য কম আনফোর্সড এরর করেছে। সেখানে আমি শেষ সেটে দু’টো মোক্ষম ভুল করেছি। দ্বিতীয় সেটে একটু নার্ভাসও যেন হয়ে পড়েছিলাম!”
সেরেনা নামের ইন্দ্রপতনের পর তাই নাদালের দু’বছর পর উইম্বলডনে দ্বিতীয় সপ্তাহের মুখ দেখতে পাওয়া (এ দিন শেষ ষোলোয় ওঠায় যেটা সম্ভব হল), ফেডেরার, শারাপোভার সহজ জয়, সেন্টার কোর্টের রয়্যাল বক্সে সচিন তেন্ডুলকরের ডেভিড বেকহ্যাম-ববি চার্লটনের সঙ্গে আড্ডা দিতে-দিতে টেনিস উপভোগ করা, এমনকী ডাবলস থেকে সানিয়া মির্জার বিদায়ের পাশাপাশি মিলিত ভাবে ৭৬ বছর বয়সী প্রবীণ জুটি লিয়েন্ডার পেজ-রাদেক স্টেপানেকের ম্যারাথন ‘ফাইভ সেটার’-এ ১১-৯ পঞ্চম সেটে জয়কেও কোনও খবর মনে হচ্ছে না!
ছবি: এএফপি