ম্যাচে মাথা গরম
দু’সপ্তাহও হয়নি রিয়াল মাদ্রিদকে মরসুমের প্রথম ট্রফি ইউরোপিয়ান সুপার কাপ জিতিয়ে স্প্যানিশ সুপার কাপও জেতার হুঙ্কার দিয়েছিলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। কিন্তু তা হল কোথায়! লস ব্লাঙ্কোসকে ট্রফি তো দিতে পারলেনই না। দ্বিতীয় পর্বের ০-১ ব্যর্থতা ধরে দু’পর্বে রিয়াল হারল ১-২। উল্টে আটলেটিকো মাদ্রিদের ডিফেন্ডারের মুখে ঘুসি মেরে নতুন বিতর্কে জড়ালেন সিআর সেভেন।
প্রথম পর্বের ম্যাচে পর্তুগাল মহাতারকার চোট পেয়ে অনিশ্চিত হয়ে পড়ার পরেই অশনি সঙ্কেত দেখেছিলেন সমর্থকরা। ফিরতি ম্যাচে প্রথম দলে না থাকায় আশঙ্কা আরও বাড়ছিল। শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয়ার্ধে রোনাল্ডোকে নামান রিয়াল কোচ কার্লো আন্সেলোত্তি। কিন্তু ছন্দে দেখা যায়নি ‘রিয়াল রকেটকে’। কার্ডিফের দাপট ভিসেন্তে কালদেরনে দেখাতে না পারার হতাশা থেকেই হয়তো ম্যাচের শেষ দিকে দিয়েগো গডিনকে ঘুসি মেরে বসেন রোনাল্ডো। টিভি রিপ্লেতে যেটা পরিষ্কার ধরাও পড়েছে। যার পরই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, কোটি কোটি সমর্থকের রোল মডেলের এ ভাবে মেজাজ হারানোটা কি যথোচিত? এ তো ফুটবল-গুণ্ডামি। রেফারি হলুদ কার্ড দেখালেও সোশ্যাল মিডিয়ায় রোনাল্ডোর আরও বড় শাস্তির দাবিতে শোরগোল পড়ে গিয়েছে।
এক মহাতারকার নিষ্প্রভ হওয়ার ম্যাচে আবার উত্থান আর এক তারকার। আর এক মারিও-র। মান্ডুকিচ। বিশ্ব ফুটবলে আটলেটিকোর একটা অদ্ভুত ক্ষমতা রয়েছে। সফল স্ট্রাইকারের জায়গায় পরের মরসুমে নতুন কাউকে এনে সাফল্য পাওয়ার। তা সে দিয়েগো ফোরলান, সের্জিও আগেরো, রাদামেল ফালকাও থেকে গত মরসুমের দিয়েগো কোস্তা, যিনিই হোন, উত্থান আটলেটিকোতেই। ২৯ বছর পর টিমকে সুপার কাপ জিতিয়ে সেই পরম্পরা রেখে দিলেন মান্ডুকিচ।
ম্যাচ শেষে মাথা নিচু। সুপার কাপে আটলেটিকো-রিয়াল লড়াইয়ে।
ম্যাচের ভাল করে ঘুম ভাঙার আগেই মান্ডুকিচ দু’মিনিটে গোল করে এগিয়ে দেন আটলেটিকোকে। এমনিতেই অ্যাঞ্জেল দি মারিয়া আর স্যামি খেদিরার দল বদল নিয়ে সমস্যা কম নেই রিয়ালে। এ মরসুমেও মারিয়াকে টিমে রাখার আবেদন করে পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছেন রোনাল্ডোরা। কিন্তু আটলেটিকো ম্যাচে দি মারিয়াকে না নামিয়ে রিয়াল বোধহয় তাদের অনড় মনোভাবটাই অ্যাঞ্জেলের জন্য স্পষ্ট করে দিল। আর খেদিরা ম্যাচের আগেই জার্মানিতে চলে গিয়েছিলেন ভাইয়ের খেলা দেখতে।
ম্যাচে শুরুতে রোনাল্ডো, দি মারিয়া আর ডিফেন্সে পেপে-র না থাকার সুযোগে মান্ডুকিচ বাজিমাত করে যান। গোটা ম্যাচে যার জবাব খুঁজে পাননি গ্যারেথ বেল, হামেস রদ্রিগেজরা। সিআর সেভেন নামার পর ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে চলে গিয়েও আন্সেলোত্তি কাজের কাজ করতে পারেননি। ম্যাচের পর হতাশাটা তাই স্পষ্ট ধরা পড়ছিল তাঁর কথায়, “সুপার কাপকে আমরা গত মরসুমের শেষ ম্যাচ ধরতে পারি। আমাদের এ দিনের হারে লিসবনে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের কৃতিত্বও যেন চাপা পড়ে গেল।”
তবে ১৫ বছর পর কালদেরনে রিয়ালের বিরুদ্ধে রাজকীয় জয়ের পাশাপাশি কাঁটাও রয়েছে আটলেটিকোর। বিরতির আগেই রেফারির সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে যে ভাবে লাল কার্ড দেখার পরেও স্ট্যান্ডে বসেছিলেন তাতে বড় শাস্তি হতে পারে কোচ দিয়েগো সিমিওনের। লালকার্ড দেখার পর সরাসরি ড্রেসিংরুমে যাওয়াটাই নিয়ম। যা ভাঙায় সিমিওনেকে তিন ম্যাচ বা তারও বেশি সাসপেন্ড করা হতে পারে। যদিও আর্জেন্তিনীয় কোচ ম্যাচের পর রেফারির কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন।
ছবি: রয়টার্স