কোস্টারিকা ম্যাচের প্রস্তুতি। অনুশীলনে ইতালি দল। ছবি: এএফপি।
‘সুপার মারিও’ স্বমেজাজে। বিশ্বকাপে ইতালির দ্বিতীয় ম্যাচের আগে বলে দিচ্ছেন, “কাউকে ভয় পাওয়ার প্রশ্ন নেই আমাদের। এখন বরং অন্য দলেরই উচিত আমাদের ভয় পাওয়া।”
কিন্তু মারিও বালোতেলির সতীর্থরা শুক্রবার কোস্টারিকা ম্যাচের আগের দিন যথেষ্ট সতর্ক। সেটা অবশ্য যত না উরুগুয়েকে প্রথম ম্যাচে তিন গোল মারা উত্তর আমেরিকান দলটি নিয়ে, তার চেয়ে অনেক বেশি ম্যাচের স্থান-কাল ঘিরে! রেকিফের প্রচণ্ড গরম আর অসহ্য আর্দ্রতায় স্থানীয় সময় দুপুর বারোটায় ম্যাচ। সিজার প্রান্দেলির শিবির থেকে বারংবার ফিফার কাছে আর্জি জানানো হচ্ছে, ম্যাচে যেন ফিফার নতুন বলবৎ করা নিয়ম ‘ওয়াটার ব্রেক’ দেওয়া হয়। কিন্তু সে ব্যাপারেও একটা ফ্যাকরা আছে। ফিফার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ম্যাচ চলাকালীন মাঠের ভেতরের তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম না করলে ফুটবলারদের আধঘণ্টা অন্তর জলপানের বিরতি দেওয়া যাবে না। এবং রেকিফের শুক্রবারের আবহাওয়া পূর্বাভাস সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকতে পারে ৩০ ডিগ্রি।
যদিও তাতে হাল ছাড়তে নারাজ ইতালি মাঝমাঠের অন্যতম স্তম্ভ ড্যানিয়েল ডি রোসি। ফিফাকে তিনি এক বছর আগে এই মাঠেই ইতালি-জাপান কনফেডারেশনস কাপ কোয়ার্টার ফাইনালকে মনে করিয়ে দিতে চাইছেন। “বেশ মনে পড়ছে, রেকিফে সেই ম্যাচে জাপানের চ্যালেঞ্জ টপকাতেও আমাদের কালঘাম ছুটে গিয়েছিল। গরমে আমাদের কাহিল অবস্থার সুযোগ নিয়ে জাপান তিনটে গোল করে দিয়েছিল। কোনওক্রমে ৪-৩ জিতে সেমিফাইনালে উঠেছিলাম আমরা।”
অনুশীলনে ইতালি দল। ছবি: এএফপি।
মারণ গ্রুপ থেকে নক আউটে ওঠার সরণিতে প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে পুরো তিন পয়েন্ট ঘরে তোলার পরেও ইতালি কি তা হলে টেনশনে? কেননা তাদের ড্রেসিংরুম থেকে প্রাণপণ বোঝানোর চেষ্টা হচ্ছে, যে দিন ২০১৪ বিশ্বকাপের সূচি তৈরি হয়েছে, সে দিন থেকে তারা কোস্টারিকা ম্যাচকেই গ্রুপ পর্বে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হিসাবে গণ্য করে আসছে। ২০১০ বিশ্বকাপের পর থেকে মাত্র তিনটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ হারা ইতালির কোচ প্রান্দেলির কথায়, “কোস্টারিকাকে হারাব ভেবে মাঠে গেলাম আর জিতে হোটেলে ফিরে এলাম, কারণ আমাদের টিমের নাম ইতালি এমনটা মোটেই হবে না শুক্রবারের ম্যাচে। বিশেষ করে এই বিশ্বকাপকে অনেকটা আমাদের দেশের নব্বই বিশ্বকাপের মতো দেখাচ্ছে। প্রায় সব দলই দারুণ গোছানো। সব টিমেই শক্তিশালী ফুটবলার রয়েছে। যে জন্য প্রতিটা ম্যাচে প্রচণ্ড লড়াই হচ্ছে। এর বাইরেও কোস্টারিকা ম্যাচে আমাদের আরও এক প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে লড়তে হবে। সেটা রেকিফের অসহনীয় গরম আবহাওয়া। দুপুর বারোটায় খেলা বলে অনেক অঘটনই ঘটতে পারে।”
বালোতেলির অবশ্য এ সব নিয়ে বিশেষ টেনশন আছে বলে মনে হয় না। গতকালই মাঙ্গালোর শহরে ব্রাজিলের দু’টি ফুটবল স্কুলের নতুন ফুটবল ভিডিওর উদ্বোধন ঘটেছে ইতালিয়ান স্ট্রাইকারের হাতেই। যেখানে তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য ইংল্যান্ড ম্যাচের ম্যাচ-উইনারের “ব্রাজিলের শিশুরা, তোমরা কিন্তু সব সময় বিশ্বসেরা।” তার পরেই বলে দেন, “আমরা কাউকে ভয় পাচ্ছি না। বরং আমাদেরই অন্যরা ভয় করুক।” কিন্তু সত্যিই কি ইতালি শিবির এতটা স্বস্তিতে আছে? অধিনায়ক জিয়ানলুইগি বুফোঁর গোড়ালির চোট যেমনটা ভাবা গিয়েছিল, তার চেয়ে অনেক গুরুতর। হাঁটুর লিগামেন্টেও সমস্যা আছে। বিশ্বের অন্যতম সেরা গোলকিপার তাঁর পঞ্চম বিশ্বকাপে কবে নেমে মেক্সিকোর কার্বাজাল আর জার্মানির লোথার ম্যাথেউজের টানা পাঁচটা বিশ্বকাপ খেলার রেকর্ড স্পর্শ করবেন, সে ব্যাপারে ইতালির টিম ডাক্তার এনরিকো কাস্তেলাচি কোনও নির্দিষ্ট ডেডলাইন দিতে এখনও অপারগ। গোলের নীচে অভিজ্ঞ বুফোঁ আর দলের এক নম্বর ডিফেন্ডার সিনিয়েলিকে ইংল্যান্ড ম্যাচের মতোই বাইরে রেখে কোস্টারিকার মুখোমুখি হবে ইতালি, ধরে নিচ্ছে ওয়াকিবহাল মহল। এহেন অবস্থায় প্রান্দেলির ভরসা দলের ডান প্রান্ত আর পির্লো।
বালোতেলির কার্টুন: বিমল দাস
“আমাদের প্রতিটা ডানপন্থী আক্রমণ অসাধারণ হচ্ছে। ডারমিয়ান-ডি রোসি-কান্দ্রেভার বোঝাপড়া দলের কাছে একটা বিরাট শক্তি। সঙ্গে পির্লোর মাঠ জুড়ে পাসিং-ব্লকিং আর ফ্রিকিক, তিনটে অস্ত্র তো থাকছেই,” বলার পাশাপাশি প্রান্দেলি মনে করিয়ে দিয়েছেন, এই ম্যাচটা যারা জিতবে, শুক্রবারই তারা নক আউটের টিকিট পেয়ে যাবে। “সুতরাং কোস্টারিকা ম্যাচটাও আমাদের কাছে আর একটা নক আউট ম্যাচ!”