কেভিন পিটারসেনকে ছেঁটে ফেলার সিদ্ধান্ত ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই কাঁটা হয়ে ফিরে এল ইংল্যান্ড বোর্ডের কাছে। ইয়ান বোথাম, মাইকেল ভন থেকে শুরু করে শেন ওয়ার্ন, ক্রিস গেইলআন্তর্জাতিক ক্রিকেট মহাতারকারা শুধু ইসিবি-র কড়া সমালোচনাই করেননি, সঙ্গে কেন কেপি-কে সরিয়ে দেওয়া হল তার ব্যাখ্যাও দাবি করেছেন।
মঙ্গলবার রাতে ইসিবি-র তরফে জানানো হয়, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের জন্য পিটারসেনের নাম ভাবা হচ্ছে না। যার পরই পিটারসেন জানিয়ে দেন, ইংল্যান্ডের হয়ে শেষ ম্যাচ খেলে ফেলেছেন তিনি। এ দিন অ্যাসেজের শেষ টেস্ট সিডনিতে আউট হয়ে ফিরে আসার ছবি টুইটারে পোস্ট করে পিটারসেন লিখেছেন, “জানাতে খুব দুঃখ হচ্ছে যে এটাই ইংল্যান্ডের জার্সিতে আমার শেষ বার মাঠে নামা। তবে সবাই যে ভাবে আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন তাতে অভিভূত। ইংল্যান্ডকে ভালবাসি আর সত্যিই আশা করছি ভবিষ্যতে ওরা অনেক সাফল্য পাবে।”
পিটারসেনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জীবন শেষ হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও একটা ব্যাপার কিন্তু নিশ্চিত হয়ে গেল। আসন্ন আইপিএলের নিলামে কেপি-র বাজারদর আকাশছোঁয়া হতে চলেছে। পিটারসেনের সিদ্ধান্ত জানাজানি হওয়ার পরই আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর ছক কষা শুরু হয়ে গিয়েছে। কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের পক্ষ থেকে তো সরকারি ভাবে বলে দেওয়া হয়েছে, “আমরা পিটারসেনকে কেনার জন্য ঝাঁপাব। জানি, সবাই এ বার ওকে দলে পেতে চাইবে কারণ ওকে পুরো আইপিএলে পাওয়ার ব্যাপারটা এখন নিশ্চিত হয়ে গেল।” গত বার দিল্লির হয়ে খেলা পিটারসেন এখন ‘ফ্রি এজেন্ট’। তবে দিল্লির অ্যাডভান্টেজ হল, তারা জোকার কার্ড ব্যবহার করে কেপি-কে দলে রেখে দিতে পারে।
ইংল্যান্ডের প্রচারমাধ্যম এবং ক্রিকেটমহল অবশ্য আইপিএল নিয়ে নয়, কেন কেপি-র আন্তর্জাতিক ক্রিকেটজীবন শেষ হয়ে গেল তার ময়নাতদন্তে ব্যস্ত। যে তদন্তে খলনায়ক হিসাবে উঠে আসছে অ্যালিস্টার কুকের নাম। যে তিন জনের প্যানেল পিটারসেনের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে মধ্যে কুকও ছিলেন। ব্রিটিশ প্রচারমাধ্যমের খবর, পিটারসেনকে ছাঁটাই করার পিছনে ইংল্যান্ড অধিনায়কই প্রধান ভূমিকা নেন। কুক নাকি নতুন করে ইংল্যান্ড টিমটাকে তৈরি করতে চেয়েছেন। তবে বেশিরভাগেরই বক্তব্য হল, অ্যাসেজ ব্যর্থতার পর একজনকে বলি দিতে হত। আর সেই নামটা হয়ে গেল পিটারসেন।
উত্তেজিত বোথাম এ দিন বলেছেন, “কেভিন দেশের অন্যতম সেরা প্লেয়ার। কেন ওর কেরিয়ার থামানো হল? কারণটা আমাদের জানানো হবে না কেন? আমার মনে হয় ইসিবি-র মধ্যে ঠিক কী চলছে সে ব্যাপারে সরকারি বিবৃতি দেওয়া উচিত।”
আর এক ইংরেজ অধিনায়ক মাইকেল ভন তো আরও চাঁচাছোলা। বলেন, “অ্যাসেজে ইংল্যান্ডের হারের জন্য বড় মাপের কাউকে বলি দিতেই হত। কেপি ড্রেসিংরুমের পরিবেশ নষ্ট করছে এ রকম গুজব শুনেছি। কিন্তু সোয়ান তো বলেছিল, কেপি ভাল হয়ে গিয়েছে। কেপি-র মতো ক্রিকেটার তো সহজে পাওয়া যায় না। ওকে ঠিকমতো সামলাতে জানতে হয়।”
শেন ওয়ার্নের মতো অনেকে আবার এই ঘটনায় ইসিবির এখনকার হতশ্রী অবস্থাটাই ফুটে উঠছে বলে মনে করছেন। কিংবদন্তি অস্ট্রেলীয় স্পিনার টুইট করেন, “খারাপ খবরটা শুনেছি। কেপি ইংল্যান্ডের হয়ে ওর শেষ ম্যাচ খেলে ফেলেছে। আমার কাছে এটা অপমানজনক আর হাস্যকর একটা পরিস্থিতি তৈরি করা ছাড়া আর কিছু নয়। ইসিবি এখন ছন্নছাড়া।”
চলতি মাসের শেষেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে কেপি-কে দেখা যাবে না বলে হতাশ ক্রিস গেইলও। ক্যারিবিয়ান কিং টুইট করেছেন, “কেপি থাকবে না এই সফরটায়! এটা নিঃসন্দেহে ইংল্যান্ড আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য খারাপ খবর। এ ভাবে সমর্থকদের ভোগানোটা ঠিক নয়। কেপি থাকলে সিরিজের আরও টিকিট বিক্রি হত।”
কেপি-র কেরিয়ার
টেস্ট ১০৪ ম্যাচ, ৮১৮১ রান, গড় ৪৭.২৮, সেঞ্চুরি ২৩, সর্বোচ্চ ২২৭
ওয়ান ডে ১৩৬ ম্যাচ, ৪৪৪০ রান, গড় ৪০.৭৩, স্ট্রাইক রেট ৮৬.৫৮, সেঞ্চুরি ৯, সর্বোচ্চ ১৩০
টি-টোয়োন্টি ৩৭ ম্যাচ, ১১৭৬ রান, গড় ৩৭.৯৩, স্ট্রাইক রেট ১৪১.৫১, সর্বোচ্চ ৭৯
আইপিএল ২১ ম্যাচ, ৬৩৪ রান, গড় ৪২.২৬, স্ট্রাইক রেট ১৪১.২০, সেঞ্চুরি ১, সর্বোচ্চ ১০৩*