যুগলবন্দি: মনোজ-সুদীপই ভরসা এখন বাংলার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
পারবেন হার বাঁচাতে? শনিবার কল্যাণীর বেঙ্গল ক্রিকেট অ্যাকাডেমির ড্রেসিংরুমের সামনে বাংলা অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারিকে এই প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘ক্রিকেটে সব কিছু হয়। হয়তো দেখা গেল একশো রানের মধ্যে আমরা শেষ হয়ে গেলাম। আবার এমনও হতে পারে আমরা সারা দিন ব্যাট করে গেলাম। জানি না কী হবে। তবে আমরা প্রাণপণ চেষ্টা করব সারা দিন ব্যাট করে যাওয়ার।’’
মনোজ অধিনায়ক। তাঁকে আশাবাদী হতেই হবে। দলের আর এক তারকা ঋদ্ধিমান সাহা স্পষ্টবাদী। সারা দিনের খেলার শেষে হালকা ফুটবল খেলা এখন বাংলার ক্রিকেটারদেরও সংস্কৃতি হয়ে উঠেছে। ড্রেসিংরুমের পাশে ফুটবল শুরুর আগে বিরক্ত ঋদ্ধি বলে গেলেন, ‘‘ওদের বোলিং ভাল হয়েছে আর আমাদের ব্যাটিং খারাপ হয়েছে। সেই জন্যই এই অবস্থা।’’
মনোজ অবশ্য এই ব্যাপারে ঋদ্ধির সঙ্গে একমত। বললেন, ‘‘ব্যাটিং তো আমাদের খারাপ হয়েছেই। ভুল শট খেলেছে আমাদের ব্যাটসম্যানরা। যে শটের কোনও দরকারই ছিল না। এমন কিছু খারাপ উইকেট ছিল না, যেখানে রান তোলা কঠিন। কিন্তু আমাদের ব্যাটসম্যানরা যদি ঠিকমতো নিজেদের প্রয়োগ করতে না পারে, তা হলে আর কী বলব?’’
বোলারদের পারফরম্যান্সেও খুব একটা খুশি নন মনোজ। বলছেন, ‘‘আমাদের বোলাররা দ্বিতীয় দিন যে বোলিংটা করল, সেটা যদি প্রথম দিন করতে পারত, তা হলে ওরা এত রান তুলতেই পারত না।’’ টস জিতে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্তের হয়েই সওয়াল করছেন মনোজ, ‘‘ওই সময় উইকেটে স্যাঁতসেঁতে ভাব ছিল। সেই দেখেই আমরা ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিই। বোলাররা যদি ঠিকঠাক বোলিং করত, তা হলে ওই সিদ্ধান্তই আমাদের পক্ষে যেত। বড্ড বাইরে বাইরে বোলিং করেছে ওরা।’’
রবিবার হার বাঁচানো এবং এক পয়েন্ট পাওয়া, এটাই বাংলার ব্যাটসম্যানদের কাজ। কিন্তু বেশ কঠিন এই কাজটা। উইকেট শুকনো হয়ে গিয়েছে, ফাটল দেখা দিয়েছে। বিদর্ভ স্পিনাররা এই অবস্থাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা যে করবেনই, তা স্বীকার করে নিয়ে মনোজ বলেন, ‘‘আমাদের চা বিরতির অন্তত এক ঘণ্টা পর পর্যন্ত টিকে থাকতে হবে। এটাই আমাদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।’’
ও দিকে যে বাঙালি বোলিং কোচের প্রশিক্ষণে কাত হল বঙ্গ ব্যাটিং, সেই প্রাক্তন ভারতীয় বোলার সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, বাংলার বোলারদের সব দিক থেকেই পিছনে ফেলে দিয়েছেন তাঁদের বোলাররা। সন্ধেয় হোটেলে ফিরে সুব্রত বলেন, ‘‘আমাদের বোলাররা প্রত্যেকেই ভাল ফর্মে রয়েছে বলেই ওদের ওপর আমার ভরসা ছিল। জানতাম ওরা পারবে। তাই ওদের বলে দিয়েছিলাম, ঝাঁপিয়ে পড়, তা হলেই বাংলাকে চেপে ধরা যাবে। আমাদের ব্যাটসম্যানরা অবশ্য শুরুতেই ওদের কাজটা সহজ করে দিয়েছে।’’ বাংলার বোলিং নিয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘‘এটা আমার বলা উচিত নয়। তবে ওদের আরও ভাল করার সুযোগ ছিল। যেটা ওরা পারেনি বলেই এখন চাপে পড়ে গিয়েছে।’’
রবিবার এই বঙ্গসন্তানের ছাত্ররাই বাংলার ক্রিকেটের চরম শত্রু হয়ে উঠতে চলেছেন।
স্কোরকার্ড’
বিদর্ভ ৪৯৯ (১৩৮.১)
বাংলা ২২৭ ও ৮৬-৩
বিদর্ভ (দ্বিতীয় দিনে ৪৯৯, ১৩৮.১ ওভার)
বাংলা (তৃতীয় দিন ২০৭, ৮১ ওভার)
অভিষেক রামন ক ও বো ওখাড়ে ২৭
ঈশ্বরণ এলবিডব্লিউ বো যাদব ০
সুদীপ ক ফজল বো যাদব ১৫
কোশিক এলবিডব্লিউ বো নেরাল ৫০
মনোজ বো গুরবানি ৫০
ঋদ্ধিমান ক ওয়াথ বো গুরবানি ০
শ্রীবত্স এলবিডব্লিউ বো ওয়াখড়ে ৯
গনি ক ওয়াংখড়ে বো ওয়াখড়ে ১১
কণিষ্ক শেঠ ন.আ. ২০
অশোক ডিন্ডা বো সরওয়াটে ৭
ঈশান এলবিডব্লিউ বো সরওয়াটে ০
অতিরিক্ত ১৮
মোট ২০৭। (ফ.অ.)
পতন: ১-১ (ঈশ্বরণ, ০.৪), ২-৪৩ (সুদীপ ১০.৩), ৩-৪৩ (রামন ১১.১), ১৩২-৪ (মনোজ, ৩৮.২), ১৪০-৫ (ঋদ্ধিমান, ৪৬.৩),
১৬৫-৬ (শ্রীবত্স, ৫৮.৪), ১৭২-৭ (কৌশিক, ৬২.৪), ২০০-৮ (গনি, ৭৯.১), ২০৭-৯ (ডিন্ডা, ৮০.২), ২০৭-১০ (ঈশান, ৮০.৬)।
বোলিং: যাদব ১৬-৪-৪৩-২, গুরবানি ১৯-৮-৪২-২, ওয়াখড়ে ১৮-৬-৪৫-৩, নেরাল ১৪-৪-৩৪-১, সরওয়াতে ১৪-২-২৪-২।
ফলো অনের পর
বাংলা দ্বিতীয় ইনিংস
রামন এলবিডব্লিউ বো যাদব ৬ ঈশ্বরণ ক ওয়াথ বো যাদব ২
সুদীপ ন.আ. ৪০
কৌশিক ক জাফর বো যাদব ০
মনোজ ন.আ. ৩৬
অতিরিক্ত ২
মোট ৮৬-৩ (২৯ ওভার)
পতন: ৭-১ (ঈশ্বরণ, ০.৪), ১০-২ (রামন, ৬.১), ১০-৩ (কৌশিক, ৬.৩)।
বোলিং: যাদব ৭-১-১৬-৩, গুরবানি ৬-২-৭-০, ওয়াখড়ে ৭-১-২৩-০, সরওয়াটে ৭-১-২৭-০,। নেরাল ২-০-১১-০।
বাংলা পিছিয়ে ২০৬ রান।