কোহালিকে ফেরানোর উৎসব। বৃহস্পতিবার গ্রিন পার্কে। -পিটিআই
কানপুরের উইকেট নিয়ে যে রকম চর্চা চলছিল গত কয়েক দিন ধরে, তা দেখেশুনে মনে হচ্ছিল, না জানি কী হবে গ্রিন পার্ক উইকেটে! বৃহস্পতিবার টেস্ট শুরু হওয়ার পর বোঝা গেল, কানপুর উইকেট আগের মতোই আছে। তেমন কিছুই বদলায়নি।
সেই একই রকম ধীরে ব্যাটে বল আসছিল। মাঝে মাঝে বল পিচে পড়ে লো হয়ে যাচ্ছে। কয়েকটা বল আবার টার্নও করেছে ভাল। সারা দিনের খেলা দেখার পর এটুকু বলতে দ্বিধা করছি না যে, উইকেটে জুজু নেই। সাধারণ উইকেট, যেখানে একটু ধৈর্য ধরে টিকে থাকলে রান তোলা এমন কিছু বিশাল ব্যাপার নয়। তা সত্ত্বেও ভারতের ১৫৪-১ থেকে দিনের শেষে ২৯১-৯ হয়ে যাওয়াটা বেশ অপ্রত্যাশিত।
উইকেট ও পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে নিউজিল্যান্ড বোলাররা যে ভাবে বিরাট কোহালিদের তিনশোর মধ্যে বেঁধে রাখল, তার প্রশংসা করতেই হবে। উইকেটের অদ্ভূত আচরণের জন্য আমাদের ব্যাটসম্যানরা কেউ আউট হয়েছে বললে আমি কিন্তু তা মানতে রাজি নই। কোহালিরা উইকেটের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে নিজেদের ভুল ঢাকতে পারবে না। বরং কিউয়ি বোলাররা একটা নির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী বোলিং করে গেল। নির্দিষ্ট লাইন ও লেংথ রেখে ওরা সমানে বল করল ব্যাটসম্যানদের ভুলের অপেক্ষায় থেকে।
নিউজিল্যান্ড স্পিনারদের দেখে মনে হল, ওরা ধরেই নিয়েছিল যে, যাদের বিরুদ্ধে ওরা বল করছে, তারা প্রত্যেকেই স্পিনটা ভাল খেলে। তাই বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে যায়নি। একেবারে সঠিক লাইন রেখে বল করে গিয়েছে। বলের গতিতে হেরফের আনার চেষ্টা করছিল। উপমহাদেশের উইকেটে যে রকম বল করা উচিত, সে রকমই। ব্যাটসম্যানদের ধৈর্যের পরীক্ষা নিয়েছে ওরা। কাউকেই সহজে রান রান নিতে দেয়নি। ট্রেন্ট বোল্ট শেষ দিকে যে উইকেটগুলো নিল, সেগুলো বাদ দিয়ে প্রায় সব ক’টা আউটই ব্যাটসম্যানদের ভুলে। শট বাছাইয়ের ভুল।
চেতেশ্বর পূজারা আর মুরলী বিজয় সাবলীল ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল ভারতের প্রথম ইনিংস। ওদের ব্যাটিংয়ের সময় মনে হচ্ছিল উইকেটটা ব্যাটসম্যানদের পক্ষে বেশ সহজ। ওদের রান তুলতে যেন কোনও কষ্টই হচ্ছে না। কিন্তু যখন বড় ইনিংসের ভাবনা শুরু করে খেলা উচিত ছিল, ঠিক সেই সময় ওরা দু’জনই ভুল শট খেলে আউট হল। টপ অর্ডারে অন্য ব্যাটসম্যানদের মধ্যে উইকেটে টিকে থাকার মতো যথেষ্ট ধৈর্য দেখা যায়নি।
টস হেরে নিউজিল্যান্ড শুরুতে যেমন ব্যাকফুটে ছিল, নিখুঁত ছকে বোলিং করে সেখান থেকে নিজেদের ফিরিয়ে আনল। যদিও এখনও ওদের অনেক কাজ বাকি। শুক্রবার শুরুতেই ভারতের শেষ উইকেটটা ফেলে দিয়ে ওদের ভাল ব্যাটিং করতে হবে। এই উইকেটে যা খুব কঠিন কাজ নয়। কেন উইলিয়ামসন ও তার দলের ব্যাটসম্যানরা যদি বড় রানের ইনিংস চাপিয়ে দেয়, তা হলে কিন্তু ভারতের ৫০০তম টেস্ট বেশ আকর্ষণীয় জায়গায় চলে যাবে। আক্ষরিক অর্থে স্মরণীয় হয়ে থাকবে কানপুর টেস্ট।