যে দেশে বছর ছয়েক আগে তাঁর ক্রিকেটজীবন প্রায় শেষ হয়ে যেতে বসেছিল, এ দিন সেই ইংল্যান্ডের মাঠে ফের নেমে পড়লেন মহম্মদ আমের। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে দীর্ঘ নির্বাসন কাটিয়ে ওঠা প্রতিভাবান পাকিস্তানি পেসারের এই প্রথম ‘অকুস্থলে’ প্রত্যাবর্তন। অন্য কোনও মাঠে নয়, সেই লর্ডসেই।
যার ঠিক আগে তাঁর এক সতীর্থ বড়সড় বোমা ফাটালেন আমের প্রসঙ্গ নিয়ে। সরাসরি বলে দিলেন, আমের দারুণ প্রতিভাবান বলেই নাকি তাঁকে ‘সরিয়ে’ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। তিনি, পাকিস্তানের প্রাক্তন অধিনায়ক শাহিদ আফ্রিদি। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে যিনি বলে দিয়েছেন, ‘‘এটা শ্বেতাঙ্গদের একটা চাল। যখনই ওরা দেখে কেউ খুব ভাল খেলছে বা তাকে ভয় পায়, তখনই উঠে পড়ে লাগে তাকে চাপে ফেলে দিতে। আমেরের ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছিল। ওদের প্রচারমাধ্যমও এ ব্যাপারে কম যায় না। কিন্তু আমি জানি আমের মানসিক ভাবে খুবই শক্তিশালী। আশা করছি ওকে নিয়ে তৈরি হওয়া প্রত্যাশা আমের পূরণ করবে। যতই ওকে চাপে রাখা হোক। এমনকী দর্শক টিটকিরি দিলেও গায়ে না মেখে নিজের সেরা খেলাটা খেলে দেবে।’’
শুধু আমের নয়, নিজের দেশের ক্রিকেটীয় পরিবেশ নিয়েও খোলাখুলি কথা বলেছেন আফ্রিদি। বলেছেন যে, পাকিস্তান ক্রিকেটে এখন প্রতিভার প্রচণ্ড অভাব। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দলের ভরাডুবির পর তিনি স্বেচ্ছায় নেতৃত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন। টেস্ট ও ওয়ান ডে থেকে অবসর নিয়েছেন আগেই। কিন্তু টি-টোয়েন্টি এখনও খেলে যেতে চান। তাঁর এমন ইচ্ছার কারণ একটাই। তিনি পাকিস্তানে এখন কোনও ক্রিকেট প্রতিভার খোঁজ পাচ্ছেন না। তাঁর মনে হচ্ছে এখন যাঁরা খেলছেন, তাঁদের থেকে যোগ্যতায় তিনি অনেক এগিয়ে।
ছত্রিশ বছরের আফ্রিদির সাফ কথা, ‘‘পাকিস্তানে এখন কোনও প্রতিভাই নেই। অন্তত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য যে মানের প্রতিভা দরকার, তেমন কাউকেই আমি দেখতে পাচ্ছি না। কেন পাচ্ছি না বলতে গেলে অনেক কথাই বলতে হয়। কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে এখনও আমি পাক বোর্ডের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। কিছু একটা বেফাঁস বললেই আমার বাড়িতে কালই চিঠি চলে আসবে। তবে এক দিন আমি মুখ খুলবই। বিশেষ করে কী ভাবে আমাদের দেশে ক্রিকেটার নির্বাচন হয়, তা নিয়ে। তবে এখন না। সেটা বলব অবসর নেওয়ার পর।’’
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে পাকিস্তানের বিশ্রী বিদায়ের পর দেশে আফ্রিদির যথেচ্ছ সমালোচনা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত তিনি নিজে নিজের ব্যর্থতা নিয়ে টুঁ শব্দটি করেননি। উল্টে বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দাবি করছেন, ‘‘কখনও মনে হয়নি আমি টিমের বোঝা। সব সময় চেষ্টা করেছি মাথা উঁচু করে ক্রিকেটটা খেলতে। মাথা উঁচু করেই খেলাটা ছাড়তে। ভেবেছিলাম পাকিস্তানকে দল হিসাবে আরও ভাল জায়গায় নিয়ে গিয়েই খেলা ছেড়ে দেব। কিন্তু দেখলাম টিমে এখন যারা খেলছে তাদের থেকে আমি অনেক ভাল ক্রিকেটার। যদি ওরা খেলতে পারে, আমি কেন পারব না?’’
এটা নিয়ে তাঁর সঙ্গে নাকি পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচক কমিটির প্রধান ইনজামাম উল হকেরও কথা হয়েছে। ‘‘এমনিতে সব সময়ই বলব, এখনকার ক্রিকেটারদের থেকে আমি অনেক ভাল। ইনজি ভাইয়ের সঙ্গে যখন কথা হয়েছিল তখনও এই একই কথা বলেছিলাম ওঁকে। বলেছিলাম, ওদের এখন সুযোগ দাও। পরে আমাকে ডেকো।’’