নতুন রেকর্ড গড়ার ‘মার্চ’ শুরু হচ্ছে মর্গ্যানের। বুধবার হাওড়া স্টেডিয়ামে লাল-হলুদ কোচ। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
লা লিগায় টানা পাঁচ বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রেকর্ড রয়েছে রিয়াল মাদ্রিদের! তাও এক বার নয়, দু’বার এই নজির গড়েছে রোনাল্ডোর বর্তমান ক্লাব।
সেরি এ-ও দু’বার টানা পাঁচ বার করে জিতেছে বুঁফোর দল জুভেন্তাস।
কিন্তু টানা লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরিসংখ্যানে রিয়াল-জুভেন্তাসের চেয়েও এগিয়ে ইস্টবেঙ্গল। তাদের সামনে এ বার টানা সাত বার কলকাতা লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ। এ রকম রেকর্ড সম্ভবত বিশ্ব ফুটবলে খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন।
অথচ কী আশ্চর্য! কলকাতা লিগ ভারতীয় ফুটবলে এখন পনেরোই অগস্ট বা ছাব্বিশে জানুয়ারিতে সারাদিনব্যাপী পাড়ার ফুটবল টুর্নামেন্টের মতো একটা কিছু।
রিয়াল-জুভেন্তাসও যা পারেনি সেই লিগ খেতাব টানা ছ’বার ইস্টবেঙ্গল জিতে দেখিয়েছে দু’বার। তাও চার দশকের ব্যবধানে। আজ বৃহস্পতিবার থেকে সেই অতুলনীয় নজির টপকানোর লড়াই শুরু লাল-হলুদের। কিন্তু তার চব্বিশ ঘণ্টা আগেও দলের প্র্যাকটিসে একজনও ক্লাব সমর্থকের চিহ্ন দেখা গেল না। বুধবার হাওড়া স্টেডিয়ামে মর্গ্যানের টিমের কলকাতা লিগে নামার আগে শেষ অনুশীলনের সাক্ষী তিনটে বাচ্চা ছেলে।
অনেক বছর কলকাতা লিগ না পাওয়া সত্ত্বেও গত দু’মরসুমে পরপর আই লিগ ও ফেড কাপ চ্যাম্পিয়ন মোহনবাগান এ বার স্থানীয় লিগের জন্য মূলত জুনিয়রদের নিয়ে টিম করেছে। চিফ কোচ সঞ্জয় সেনকে বিশ্রাম দিয়ে সহকারী শঙ্করলাল চক্রবর্তীকেই দায়িত্ব দিয়েছে টিমের দেখভালের। সোজা কথা, কলকাতা লিগকে সে ভাবে গুরুত্বই দিচ্ছে না বাগান।
সেখানে ইস্টবেঙ্গল কর্তারা কলকাতা লিগে আইএসএলের ফুটবলারদের দলে রেখেছেন। তিন বিদেশি সই করিয়েছেন। ট্রেভর জেমস মর্গ্যানের মতো অভিজ্ঞ কোচের হাতে স্থানীয় লিগেও টিমের দায়িত্ব দিয়েছেন। এটা কি সাত বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগজনিত বাড়তি চাপ? মর্গ্যান কিছুটা ঘুরিয়ে স্বীকার করছেন। ‘‘আমরা একটা করে ম্যাচ ধরে এগোব। রেকর্ডের কথা এখনই ভাবছি না,’’ বললেন লাল-হলুদের ব্রিটিশ কোচ।
কিন্তু সমর্থকদের মধ্যে কি এটা নিয়ে কোনও হেলদোল আছে? আদৌ উৎসাহ আছে? শহর থেকে অনেক দূরে কল্যাণীতে কাজের দিনের দুপুরে প্রিয় দলের নতুন মরসুমের প্রথম ম্যাচ দেখতে ক’জন আগ্রহী হবেন? এ দিনের লাল-হলুদ প্র্যাকটিস যদি তার কোনও ইঙ্গিত হয়, তা হলে কিন্তু উৎসাহব্যঞ্জক কিছু মনে হবে না! হাওড়ার মাঠে মেহতাব-ডং-রফিকদের কাছে এসে একজনও গোলের জন্য আবদার করলেন না। ছিল না ম্যাচ জেতানোর জন্য ফুটবলারদের কাছে একটাও আকুতি। উল্টে ইস্টবেঙ্গল প্র্যাকটিস জুড়ে অদ্ভুত এক শূন্যতা ছেয়ে ছিল! গত বারের কলকাতা লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা ডু ডং তাই বলেই ফেললেন, ‘‘জানি না কেন কোনও সমর্থক আসেনি। গত বার তো গোলের আবদার শুনেছিলাম।’’
শুধু সমর্থকই নয়, ডং এ দিন ‘মিস’ করেছেন র্যান্টি মার্টিন্সকেও। আসলে গত বার ডংয়ের খারাপ সময় পাশে দাঁড়িয়েছিলেন এই নাইজিরিয়ান স্ট্রাইকার। যিনি এ বার কিছুটা অভিমান নিয়ে ক্লাব ছেড়েছেন। ‘‘র্যান্টি আমার ভাল বন্ধু। সব সময় উৎসাহ দিত। ওর পরামর্শগুলো তাই মনে রেখেছি।’’
ডং কলকাতা লিগে লাল-হলুদের নতুন ইতিহাস গড়ে দিতে পারবেন কি না, সেটা সময় বলবে। তবে বারো বছর আই লিগ জেতেনি ইস্টবেঙ্গল। সেই যন্ত্রণা থেকেই হয়তো কলকাতা লিগকে ঘিরে লাল-হলুদ সমর্থকদের উৎসাহে ভাঁটা চলছে।
বৃহস্পতিবারে কলকাতা লিগ— ইস্টবেঙ্গল : ভবানীপুর (কল্যাণী, ৩-৩০)।