হুঙ্কার: দ্বিতীয় ম্যাচেই সিরিজ জিতে মধুর প্রতিশোধ কিউয়িদের। ছবি— আইসিসি।
টি টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছিল ভারত। ওয়ানডে সিরিজ জিতে নিল নিউজিল্যান্ড। আর তার ফলে টি টোয়েন্টি সিরিজে হারের মধুর প্রতিশোধ নিল কিউয়িরা।
কিউইরা ৫০ ওভারে করেছিল ৮ উইকেটে ২৭৩ রান। ব্যাট করতে নেমে ৪৮.৩ ওভারে ভারত শেষ হয়ে যায় ২৫১ রানে। অবশ্য রবীন্দ্র জাদেজা ও নবদীপ সাইনি মরিয়া হয়ে না লড়লে ভারত আরও আগেই হয়তো শেষ হয়ে যেত।
রান তাড়া করতে নেমে শুরু থেকে উইকেট হারিয়ে এক সময়ে প্রবল চাপে পড়ে গিয়েছিল ভারত। সেই জায়গা থেকে পাল্টা মারের খেলা শুরু করেন জাদেজা ও সাইনি। জাদেজার লড়াই ক্রিকেটভক্তদের মনে করিয়ে দিচ্ছিল বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের কথা। সে দিনও তিনি ভারতকে জেতাতে পারেননি। এ দিনও পারলেন না।
ভারতের টপ অর্ডার ব্যর্থ। মিডল অর্ডারও আসল সময়ে ভেঙে পড়ল। রবি শাস্ত্রী-বিরাট কোহালিদের নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। জিততে শুরু করলে চোখে পড়ে না দলের দুর্বলতা। হারলেই বোঝা যায় রক্তাল্পতা ঠিক কোন জায়গায়। ২৭৩ এমন কিছু রান ছিল না। ভারতের রয়েছে কোহালির মতো ব্যাট। শ্রেয়াস আইয়ার ছন্দে রয়েছেন। তবুও কেন হারতে হল? কারণ নিশ্চয় অনুসন্ধান করবে ভারতের টিম ম্যানেজমেন্ট।
রস টেলর-মার্টিন গাপ্টিলরা পাহাড়প্রমাণ রানের বোঝা চাপিয়ে দিতেই পারতেন ভারতের উপরে। তাঁদের তিনশোর নীচে আটকে রাখার পিছনে ভারতীয় বোলারদের যেমন কৃতিত্ব রয়েছে, তেমনই কিউয়ি ব্যাটসম্যানরাও ‘হারাকিরি’ করে বসেন মিডল অর্ডারে। রান আউট হলেন তাঁরা, উইকেট ছুড়ে দিলেন। পর পর যখন উইকেট যাচ্ছে তখন মাথা ঠান্ডা রাখেন রস টেলর। প্রথম ওয়ানডেতেও সেঞ্চুরি করে নিউজিল্যান্ডকে জিতিয়েছিলেন তিনি। শনিবারের দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে অভিজ্ঞ টেলর মোক্ষম সময়ে ইনিংসের হাল ধরেন। শেষ পর্যন্ত ৭৩ রানে অপরাজিত থেকে যান তিনি। টেলরের চওড়া ব্যাট নিউজিল্যান্ডকে লড়ার মতো জায়গায় পৌঁছে দিয়েছিল।
শনিবার টস জিতে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহালি। ম্যাচে দু’টি পরিবর্তন আনে ভারত। কুলদীপের বদলে যুজবেন্দ্র চাহাল এবং মহম্মদ শামির বদলে নবদীপ সাইনিকে নামানো হয়েছিল। দুই কিউয়ি ওপেনার হেনরি নিকোলস ও মার্টিন গাপ্টিল শুরুটা দারুণ করেন। ৫৯ বলে ৪১ রানে ফেরেন নিকোলস। নিকোলস যখন ফেরেন, তখন স্কোর বোর্ডে ৯৩ রান তুলে ফেলে নিউজিল্যান্ড। ওপেনিং পার্টনারশিপ ভাঙেন যুজবেন্দ্র চহাল।
তিন নম্বরে নামা ব্লান্ডেল অবশ্য বেশি ক্ষণ টিকতে পারেননি। ২২ রানে তাঁকে প্যাভিলিয়নে ফেরান শার্দুল ঠাকুর। মার্টিন গাপ্টিল দুর্দান্ত ব্যাটসম্যান। চলতে শুরু করলে তাঁকে থামানো কঠিন। ৭৯ বলে ৭৯ রান করে রীতিমতো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছিলেন তিনি। কিন্তু শার্দুল ঠাকুরের থ্রোয়ে তাঁকে রান আউট হতে হয়। আটটি বাউন্ডারি ও তিনটি ছক্কায় সাজানো ছিল গাপ্টিলের ইনিংস। তিনি ফেরার পরেই হঠাৎই ভেঙে পড়তে শুরু করে কিউয়িদের মিডল অর্ডার। লাথামকে (৭) এলবিডব্লিউ করলেন জাদেজা। নিশাম (৩) রান আউট হলেন। গ্র্যান্ডহোমি (৫), চ্যাপম্যান (১) ও সাউদি (৩) দ্রুত ফিরে যাওয়ায় চাপ অনুভব করতে শুরু করে দেয় নিউজিল্যান্ড। এই সময়ে টেলর ও জ্যামিসন (২৫) ইনিংসের হাল ধরেন। নবম উইকেটে এই দুই ব্যাটসম্যান ৮.৩ ওভারে ৭৬ রানের পার্টনারশিপ গড়েন। এই পার্টনারশিপই কিউয়িদের ভদ্রস্থ জায়গায় পৌঁছে দেয়।
ব্যাট করতে নেমে দুই ওপেনার শুরুটা ভাল করতে পারেননি। পৃথ্বী শকে বোল্ড করেন জ্যামিসন। ১৯ বলে ২৪ রান করেন তিনি। ছ’টি বাউন্ডারি মারেন তিনি। ময়ঙ্ক আগরওয়াল টেস্টে দারুণ সফল। এ দিন তিনি ব্যাট হাতে ব্যর্থ। মাত্র ৩ রান করে ময়ঙ্ক আউট হন। বিরাট কোহালি ১৫ রানে বোল্ড হন সাউদির বলে। ভারত অধিনায়কের ব্যাট ও প্যাডের মধ্যে হাঙরের হাঁ দেখা যায়। গ্র্যান্ডহোমির বল কাট করতে গিয়ে উইকেটে টেনে আনলেন লোকেশ রাহুল (৪)। শ্রেয়াস আইয়ার প্রথম ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি করেছিলেন। এ দিনও ৫২ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। মিডল অর্ডারে কেদার যাদব (৯) ব্যর্থ। শার্দুল ঠাকুরের ব্যাটিংয়ের হাত ভাল। তিনি ১৮ রান করে ফিরে যাওয়ার পরে চাপ বাড়তে থাকে ভারতের উপরে। এই সময়ে জাদেজা ও নবদীপ লড়াই নিয়ে যান নিউজিল্যান্ডের ক্যাম্পে। সাইনি ৪৯ বলে ৪৫ রানের প্রয়োজনীয় ইনিংস খেলেন। সাইনি ও জাদেজা যখন লড়াই করছেন, তখনও মনে হচ্ছিল ভারত ম্যাচটা হয়তো বের করে নেবে। সাইনি ফেরার পরে জাদেজা ও চহাল লড়ছিলেন। চহাল (১০) অন্ধের মতো দৌড়তে গিয়ে রান আউট হলেন। জাদেজা (৫৫) ফিরতেই ভারতের ভক্তদের স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়।
আরও পড়ুন: কোহালির আকর্ষণেই তিনি ক্রিকেটভক্ত, বলছেন গঞ্জালেস
টি টোয়েন্টি সিরিজে নিউজিল্যান্ডকে যেমন ছন্দহীন দেখিয়েছে, ওয়ানডে-তে ঠিক ততটাই গোছানো লাগছে। সিরিজে ১-০ এগিয়ে থাকায় আত্মবিশ্বাসী কিউয়িরাই। তাঁদের ব্যাটিংয়ে সেই ছাপ দেখা যাচ্ছে। ওয়ানডে সিরিজে ভারতের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গিয়েছে এখন। অতীতে এই রকম পরিস্থিতি থেকে বিরাট কোহালিরা ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। সিরিজও জিতে নিয়েছিল। এ বার আর পারল না।