বুধবার হ্যামিল্টনে ম্যাচ-জেতানো ইনিংস খেললেন রস টেলর। ছবি: এপি।
টি-টোয়েন্টি সিরিজ ৫-০ জেতার পর ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচেই ধাক্কা খেল ভারত। হ্যামিল্টনে চার উইকেটে হারের পর সিরিজের শেষ দুই ম্যাচ এখন জিততেই হবে বিরাট কোহালির দলকে।
এদিন শ্রেয়স আইয়ারের পাল্টা জবাব হয়ে উঠলেন রস টেলর। চার নম্বরে নেমে সেঞ্চুরি করেছিলেন ভারতের শ্রেয়স। চার নম্বরে নেমে সেঞ্চুরি করলেন নিউজিল্যান্ডের টেলরও। তফাত হল, টেলরের শতরান তফাত গড়ে দিল। তাঁর সেঞ্চুরি এল ৭৩ বলে। ১০টি চার ও চারটি ছয়ের সাহায্যে। টেলরের (৮৪ বলে অপরাজিত ১০৯) ইনিংস চার উইকেটে জেতাল নিউজিল্যান্ডকে। একইসঙ্গে এই ম্যাচ অনেক প্রশ্নের সামনে দাঁড় করাল ভারতীয় বোলিংকে। কারণ, প্রায় সাড়ে তিনশো রানের পুঁজি নিয়েও পরাজয় স্বীকার করতে হল টিম ইন্ডিয়াকে।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শ্রেয়সের ১০৩, লোকেশ রাহুলের অপরাজিত ৮৮ ও বিরাট কোহালির ৫১ রানের দাপটে হ্যামিল্টনে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজের প্রথম একদিনের ম্যাচে ভারত চার উইকেট হারিয়ে তুলেছিল ৩৪৭ রান। রস টেলরের ১০৯, হেনরি নিকলসের ৭৮ ও টম লাথামের ৬৯ রানের সুবাদে যা ১১ বল বাকি থাকতেই তুলে নিল নিউজিল্যান্ড (৪৮.১ ওভারে ৩৪৮-৪)। এবং তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ এগিয়ে গেল ব্ল্যাক ক্যাপসরা।
রান তাড়ার শুরুটা ভালই করেছিল কিউয়িরা। ৫৯ বলে এসেছিল পঞ্চাশ। ১৫ ওভারে উঠেছিল ৮৩। তার পরই আঘাত হানল ভারত। শার্দূল ঠাকুরের বলে কেদার যাদবকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছিলেন মার্টিন গাপ্টিল (৪১ বলে ৩২)। ৮৫ রানে প্রথম উইকেট পড়েছিল নিউজিল্যান্ডের। দ্বিতীয় উইকেট পড়েছিল ১০৯ রানে। কুলদীপ যাদবের বলে স্টাম্পড হয়েছিলেন অভিষেককারী টম ব্লান্ডেল (১০ বলে ৯)।
অন্যপ্রান্ত থেকে উইকেট পড়লেও বাঁ-হাতি ওপেনার হেনরি নিকলস টানছিলেন নিউজিল্যান্ডকে। ৬০ বলে হাফ-সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। রস টেলরের সঙ্গে তৃতীয় উইকেটের জুটিতে যোগ করেছিলেন ৬২ রান। যে ভাবে ব্যাট করছিলেন, তা ভারতীয় শিবিরে টেনশন আমদানি করছিল। এই পরিস্থিতিতেই অবিশ্বাস্য ভাবে শরীর ছুড়ে সরাসরি থ্রোয়ে তাঁকে রান আউট করলেন বিরাট কোহালি। ৮২ বলে তাঁর ৭৮ রানের ইনিংসে রয়েছে ১১টি চার।
নিকলস ফেরার পর নিউজিল্যান্ডকে টানছেন রস টেলর ও টম লাথাম। দু’জনে চতুর্থ উইকেটের জুটিতে যোগ করলেন ১৩৮ রান। টেলরের পঞ্চাশ এসেছিল ৪৫ বলে। আর লাথামের পঞ্চাশ এসেছিল ৩৮ বলে। ২০০ থেকে ২৫০, এই পঞ্চাশ রানের জন্য টেলর-লাথাম নিলেন মাত্র ২১ বল। ২৫০ থেকে ৩০০ রানে পৌঁছতে দু’জনে নিলেন ফের ২১ বল। শেষ পর্যন্ত নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক লাথাম যখন কুলদীপ যাদবকে মারতে গিয়ে মহম্মদ শামিকে ক্যাচ দিয়েছিলেন, তখন কার্যত জয়ের দোরদোড়ায় পৌঁছে গিয়েছে দল। ৪৮ বলে তাঁর ৬৯ রানের ইনিংসে রয়েছে আটটি চার ও দুটো ছয়।
৪১.৪ ওভারে কিউয়িদের চতুর্থ উইকেট পড়েছিল ৩০৯ রানে। ৩২৮ রানে পড়ল পঞ্চম উইকেট। মহম্মদ শামিকে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিলেন জেমস নিশাম (১৪ বলে ৯)। সেই ওভারেই দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে রান আউট হলেন কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমি (দুই বলে ১)। ৩৩১ রানে পড়েছিল ষষ্ঠ উইকেট। সেখান থেকে বাকি কাজটা টেলরের সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন সপ্তম উইকেটের জুটিতে অনায়াসেই সারলেন মিচেল স্যান্টনার (নয় বলে অপরাজিত ১২)।
চাপের মুখে ভারতীয় বোলারদের দিশেহারা দেখাল এদিন। কুলদীপ যাদব দুই উইকেট নিলেও দিলেন ৮৪ রান। রবীন্দ্র জাডেজা দিলেন ৬৪ রান। জশপ্রীত বুমরাকে (০-৫৩) বাদ দিলে বাকি দুই পেসার শার্দূল ঠাকুর (১-৮০), মহম্মদ শামিও (১-৬৩) দিলেন রান। পাশাপাশি, আউটফিল্ডও হল সাদামাটা। গলল রান। উঠল নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্নও। মাঝের ওভারে যখন টেলর-লাথামকে থামানো যাচ্ছে না, তখন কেন কেদার যাদবকে আক্রমণে আনা হল না, প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন সুনীল গাওস্কর।
আরও পড়ুন: ফের রেকর্ড, এ বার ক্যাপ্টেন সৌরভকে টপকে গেলেন বিরাট কোহালি
ভারতীয় ইনিংসের নায়ক অবশ্যই শ্রেয়স। এটাই ওয়ানডে কেরিয়ারে তাঁর প্রথম সেঞ্চুরি। যা এল ১০১ বলে, ১১টি চার ও একটি ছয়ের সাহায্যে। ১০৭ বলের ইনিংসে থাকল পরিণতির ছাপ। পঞ্চাশে পৌঁছেছিলেন ৬৬ বলে, পাঁচটি চারের সাহায্যে। চার নম্বরে নেমে শুরুতে খুচরো রানে জোর দিয়েছিলেন। তার পর গতি বাড়ালেন ইনিংসের। প্রথমে বিরাটের সঙ্গে, তার পর লোকেশ রাহুলের সঙ্গে লম্বা জুটি গড়লেন।
পাঁচে নেমে মুগ্ধ করলেন রাহুলও। তাঁর পঞ্চাশ এসেছিল ৪১ বলে, চারটি ছয়ের সাহায্যে। সেই মেজাজেই খেললেন আগাগোড়া। ৬৪ বলে অপরাজিত থাকলেন ৮৮ রানে। যাতে থাকল ছয়টি ছয় ও তিনটি চার। ১৩৭.৫০ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করলেন তিনি। চতুর্থ উইকেটে লোকেশ রাহুল ও শ্রেয়াস আইয়ার যোগ করলেন ১৩৬ রান। শ্রেয়াস ফেরার পর কেদার যাদবও ব্যাট করলেন আগ্রাসনের সঙ্গে। ১৫ বলে ২৬ রানে থাকলেন অপরাজিত। যাতে থাকল তিনটি চার ও একটি ছয়।
টস হারার পর দুই অভিষেককারীর উদ্দেশে অধিনায়ক বিরাট কোহালির পরামর্শ ছিল উপভোগ করার। ২০ বছর বয়সি পৃথ্বী শ ও ২৮ বছর বয়সি ময়াঙ্ক আগরওয়ালের ভাল শুরু করেওছিলেন। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে দু’জনের জুটিতে উঠল ৫০। তবে তার পরই ফিরলেন দু’জনে।
আরও পড়ুন: উইকিপিডিয়ায় ভুল তথ্য ঠিক করতে গুগলের দ্বারস্থ ডেল স্টেন
৬১ বলে হাফ-সেঞ্চুরির পর ফিরেছিলেন বিরাট কোহালিও। দ্বিতীয় উইকেটে শ্রেয়াস আইয়ারের সঙ্গে ১০২ রান যোগ করেছিলেন কোহালি। যে ভাবে খেলছিলেন তাতে বড় রান নিশ্চিত দেখাচ্ছিল। কিন্তু, লেগস্পিনার ঈশ সোধির গুগলি বুঝতে না পেরে বোল্ড হলেন তিনি। ৬৩ বলে ৫১ রানের ইনিংসে ছিল ছয়টি চার। ১৫৬ রানে পড়েছিল ভারতের তৃতীয় উইকেট। আর চতুর্থ উইকেট পড়ল ২৯২ রানে। ততক্ষণে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ফেলেছে ভারত, অবশ্যই শ্রেয়স-রাহুলের দাপটে।
এর আগেও একদিনের ক্রিকেটে ভারতের দুই ওপেনারেরই একসঙ্গে অভিষেকের ইতিহাস রয়েছে। ১৯৭৪ সালে সুনীল গাওস্কর ও সুধীর নায়েক ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে একসঙ্গে ওপেনিং করেছিলেন লিডসে। দু’জনে প্রথম উইকেটে তুলেছিলেন ৪৪ রান। ১৯৭৬ সালে ক্রাইস্টচার্চে পার্থসারথি শর্মা ও দিলীপ বেঙ্গসরকর, জোড়া ওপেনারের অভিষেক হয়েছিল নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে। তাঁরা প্রথম উইকেটে তুলেছিলেন ৭ রান।শেষবার ২০১৬ সালে হারারেতে লোকেশ রাহুল ও করুণ নায়ারও একসঙ্গে অভিষেক ঘটিয়েছিলেন ওপেনার হিসেবে। সে বার প্রতিপক্ষ ছিল জিম্বাবোয়ে। প্রথম উইকেটে উঠেছিল ১১ রান। আর এ বার পৃথ্বী-ময়াঙ্ক যোগ করলেন ৫০ রান।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ধীরেসুস্থে শুরু করেছিলেন পৃথ্বী শ ও ময়াঙ্ক আগরওয়াল। প্রথম ওভার টিম সাউদিকে মেডেন দিয়েছিলেন পৃথ্বী। ধীরে ধীরে হাত খোলেন তিনি। ভারতের পঞ্চাশ আসে ৪৭ বলে। কিন্তু তার পরই পড়ে উইকেট। পৃথ্বী (২১ বলে ২০) ফেরেন কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমির বলে উইকেটকিপার টম লাথামকে ক্যাচ দিয়ে। চার রান পরেই ফেরেন ময়াঙ্ক (৩১ বলে ৩২)। সাউদির বলে তাঁর ক্যাচ ধরেন ব্লান্ডেল। ৮.৪ ওভারে ৫৪ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় ভারত।
আরও পড়ুন: স্ত্রীর ব্যাগ বইছে! স্টুয়ার্ট বিনিকে নিয়ে খোঁচার জবাব দিলেন মায়ান্তি
ভারতীয় দল এই ম্যাচে প্রথম এগারোর বাইরে রেখেছে মণীশ পাণ্ডে, ঋষভ পন্থ, নবদীপ সাইনি, যুজবেন্দ্র চহাল ও শিবম দুবেকে। এর মধ্যে মণীশকে বসিয়ে ছয়ে কেদার যাদবকে খেলানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। ভারতের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ৫-০ জেতার নেপথ্যে অবদান ছিল মণীশের। তাই তাঁকে বসানোর সিদ্ধান্ত মানতে পারছেন না ক্রিকেটপ্রেমীরা।