n মধ্যমণি: ক্রুণাল (বাঁ-দিকে) এবং হার্দিকের সঙ্গে ঈশান। কলম্বোয়। ফেসবুক
দেশের জার্সিতে ওয়ান ডে খেলার স্বপ্ন দেখেন বহু ক্রিকেটার। কারও কাছে তা স্বপ্ন হয়েই থেকে যায়, কেউ তা বাস্তবায়িত করতে পারেন।
কিন্তু অভিষেক ম্যাচের প্রথম বলেই ছয় মেরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট যাত্রা শুরু করার মতো মানসিকতা ক’জনের মধ্যে থাকে? ঝাড়খণ্ডের তরুণ উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান এখানেও ব্যতিক্রমী। রঞ্জি ট্রফির অভিষেকের দিনেও চার মেরে যাত্রা শুরু করেছিলেন। রবিবার প্রথম ভারতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ছয় মেরে ওয়ান ডে যাত্রাও শুরু করলেন। তিনি— ঈশান কিশান।
শ্রীলঙ্কা সফরের দলে তাঁর নাম ঘোষণা হওয়ার পরেই কোচ উত্তম মজুমদারকে ফোন করেছিলেন ঈশান। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টির অভিষেকে হাফসেঞ্চুরি করেছিলেন। ওয়ান ডে ক্রিকেটে সুযোগ পেয়েও সেই কীর্তি গড়ার স্বপ্নই দেখতেন ঈশান। কিন্তু আইপিএল বন্ধ হওয়ার পরে দেশজুড়ে শুরু হয় লকডাউন। অনুশীলন করার কোনও সম্ভাবনা ছিল না। ব্যাট ও বলের যোগাযোগ ক্ষীণ হয়ে পড়ায় আত্মবিশ্বাসও কমে যাচ্ছিল।
প্রতিভাবান ক্রিকেটারের আত্মবিশ্বাস ফেরাতে নতুন উপায় বার করলেন কোচ। উত্তমবাবুর নির্দেশ অনুযায়ী প্রত্যেক দিন কুড়ি মিনিট করে ধ্যান করা শুরু করেন ঈশান। তাঁর সেরা ইনিংসগুলো নিয়েই ভাবতে বলেছিলেন ধ্যানের মধ্যে। কী ভাবে এই জায়গায় পৌঁছলেন, কী স্বপ্ন দেখতেন, কোন কোন স্বপ্ন পূরণ হয়েছে, সে সব মনের মধ্যে দেখার চেষ্টা করতেন চোখ বন্ধ করে। ঈশান দেখতে পেতেন, শ্রীলঙ্কার মাঠে তিনি ম্যাচ জিতিয়ে ফিরছেন ড্রেসিংরুমে। তাঁর উদ্দেশে দাঁড়িয়ে হাততালি দিচ্ছেন সতীর্থরা। সেই স্বপ্নকে সত্যি করার তাগিদ নিয়েই অর্জুন রণতুঙ্গাদের দেশে রওনা দেন এই বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান। যার প্রতিফলন, ৪২ বলে ৫৯
রানের ইনিংস।
ধ্যানের পাশাপাশি দিনে দু’ঘণ্টা যোগব্যায়ামেও সময় দিতেন। সোমবার আনন্দবাজারকে ঈশানের কোচ উত্তম বলছিলেন, ‘‘ধ্যান শুরু করার পরে ওর মধ্যে থেকে সব ভয় দূর হয়ে গিয়েছে। আত্মবিশ্বাসও অনেক বেড়ে গিয়েছে। ছয় মেরে ওয়ান ডে যাত্রা শুরু করার মতো দক্ষতা ওর মধ্যে ছিল। তাই ধনঞ্জয় ডি সিলভাকে স্টেপ আউট করে মারার পরে আমি অবাক হইনি।’’ যোগ করেন, ‘‘রঞ্জি ট্রফির অভিষেক ম্যাচেও প্রথম বলে চার মেরেছিল ও। এ ভাবেই চাপ কাটানোর চেষ্টা করে।’’
শ্রীলঙ্কায় উড়ে যাওয়ার কয়েক দিন আগে থেকে নেটে প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন ঈশান। বড় শট নেওয়ার মহড়াই চলত বেশির ভাগ সময়। শ্রীলঙ্কায় স্পিন সহায়ক উইকেট। তাই স্পিনারদের বিরুদ্ধেই বড় শট নেওয়ার অনুশীলন করতেন তিনি। কোচ বলছিলেন, ‘‘ক্রিকেট এখন অনেক পাল্টে গিয়েছে। ব্যাকরণ মেনে ব্যাট করার সঙ্গেই বড় শট নিয়ে দলের রান এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। প্রথম ম্যাচে পৃথ্বী আর ঈশানের ভয়ডরহীন ক্রিকেটই কিন্তু প্রায় পনেরো ওভার আগে দলকে জেতাতে সাহায্য করেছে। চাইব, আগামী ম্যাচগুলোও যেন এ ভাবেই খেলে যেতে পারে ও।’’