শামিকে খেলার ক্ষমতা ছিল না ক্যারিবিয়ানদের

ভারতের করা ২৬৮-৭ এই উইকেটে খুব বড় রান ছিল না। কিন্তু মহম্মদ শামি ও যশপ্রীত বুমরাদের ঝড়ের কাছেই বেহাল হয়ে যায় ক্রিস গেলদের ব্যাটিং। ৩৪.২ ওভারেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ আউট হল ১৪৩ রানে। 

Advertisement

এরাপল্লি প্রসন্ন

শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৯ ০৩:৪৭
Share:

উচ্ছ্বাস: শামির শুরুর ধাক্কাতেই শেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ।—ছবি পিটিআই।

ম্যাঞ্চেস্টারে বৃহস্পতিবার বিশ্বকাপে ভারত বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজের ম্যাচটা দেখতে বসে ছত্রিশ বছর আগের তিরাশির বিশ্বকাপ ফাইনালের কথা মনে পড়ছিল। সে বার ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছিল ফেভারিট। বৃহস্পতিবার ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের ম্যাচটায় এগিয়ে থেকে খেলতে নেমেছিল বিরাট কোহালির ভারত। প্রত্যাশা মতোই জিতল ১২৫ রানে।

Advertisement

ভারতের করা ২৬৮-৭ এই উইকেটে খুব বড় রান ছিল না। কিন্তু মহম্মদ শামি ও যশপ্রীত বুমরাদের ঝড়ের কাছেই বেহাল হয়ে যায় ক্রিস গেলদের ব্যাটিং। ৩৪.২ ওভারেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ আউট হল ১৪৩ রানে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজে এখন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটারদের রমরমা। আসুরিক শক্তি দিয়ে তারা বাজিমাত করছে বিশ্বের বিভিন্ন টি-টোয়েন্টি লিগে। কিন্তু ওয়ান ডে ক্রিকেটে আমার মতে টেস্টের মতোই টেকনিক ও জুটি তৈরি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সেই মানসিকতা ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটারদের মধ্যে থেকে হারিয়ে গিয়েছে বলেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই হাল।

Advertisement

আমার কাছে এই ম্যাচের নায়ক দু’জন। ব্যাটে বিরাট কোহালি। আর বল হাতে মহম্মদ শামি। বাংলার হয়ে রঞ্জিতে খেলা শামি গত কয়েক মাসে নিজেকে দারুণ ভাবে তৈরি করেছে। বিশ্বকাপে দুই ম্যাচে আট উইকেট হয়ে গেল ওর। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ৬.২ ওভার বল করে ১৬ রানে চার উইকেট শামির। ক্যারিবিয়ানরা ওকে মোকাবিলা করতেই পারেনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের তিন ব্যাটিং ভরসা ক্রিস গেল (৬), শেই হোপ (৫) ও শিমরন হেটমায়ারকে (১৮) ফিরিয়ে আসল কাজটা করেছে শামিই। লাইন ও লেংথটা ঠিক ছিলই। তার সঙ্গে আগের চেয়ে এখন অনেক বুদ্ধি করে বলটা করছে শামি। কব্জিটাকে সুন্দর ব্যবহার করে সিম পজিশন সোজা রেখে বলটাকে ছাড়ছে। ব্যাটসম্যান বলটা বুঝতেই পারছে না। আগে যে ভাবে জ়াহির খান ব্যাটসম্যানদের নাজেহাল করতো, এখন সেটাই করছে শামি। চোট থেকে সেরে ওঠা ভুবনেশ্বরকে না খেলিয়ে শামিকে নামানো বিরাটের সেরা সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে একটা।

ক্রিস গেল তো শামিকে খেলতেই পারছিল না। তার সঙ্গে অ্যাঙ্গেলটাও দারুণ ব্যবহার করছে উত্তর প্রদেশের ছেলে। গেলকে ওভার দ্য উইকেটে বেশ কয়েকটা ডেলিভারি করার পরে রাউন্ড দ্য উইকেটে চলে গিয়েছিল শামি। এতে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে ও। বলটা বুদ্ধি করে রাখছিল চতুর্থ স্টাম্পে। সেখান থেকে বল কখনও বাইরে যাচ্ছে বা ভিতরে ঢুকে আসছে। এতেই বিভ্রান্ত হয়ে কেদার যাদবের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যায় গেল। শেই হোপও বলের সুইং বুঝতে পারেনি।

ওর সঙ্গে বুমরাও (২-৯) সুইংয়ের সঙ্গে গতি মিশিয়ে এমন বল করছিল যে ওখানেই কেঁপে গিয়ে ম্যাচটা থেকে হারিয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তার পরে কুলদীপ যাদব (১-৩৫) ও যুজবেন্দ্র চহালের (২-৩৯) বাকি কাজটা সারতে কোনও অসুবিধা হয়নি।

টস জিতে বিরাটের ব্যাট করার সিদ্ধান্ত একদম ঠিক। ভারতীয় ইনিংসের শুরুতে ‘শর্ট বল’ করে সমস্যা বাড়াতে চেয়েছিল দুই পেসার শেল্ডন কটরেল (২-৫০) ও কেমার রোচ (৩-৩৬)। কিন্তু ভারতের দুই ওপেনার রোহিত শর্মা (২৩ বলে ১৮ রান) ও কে এল রাহুল (৬৪ বলে ৪৮ রান) শর্ট বল খেলতে দক্ষ। তাই ওদের সমস্যা হচ্ছিল না। কিন্তু কেমার রোচের বলে রোহিতের আউটের সিদ্ধান্তটা আমার মতে ঠিক নয়। রিপ্লে দেখে তো তাই মনে হয়েছে। যদিও মাঠের ভিতরে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তই আমার কাছে চূড়ান্ত।

এই ভারতীয় দলের অধিনায়ক একজন চনমনে ফিট ক্রিকেটার, যে নিজের দক্ষতাতেই ক্যারিবিয়ান বোলারদের সাধারণ পর্যায়ে নামিয়ে এনেছিল। বিরাট এতটাই ফিট যে, ব্যাক ফুটে খেলেও দুই রান নিতে ওর কোনও সমস্যাই হয় না। পায়ের ভারসাম্য অসম্ভব ভাল নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। বিরাটকে (৮২ বলে ৭২ রান) শর্ট বল করে কাবু করা যায়নি। মাঠের চার দিক দিয়েই শট নিয়েছে ও। সবচেয়ে লক্ষ্য করার মতো বিষয় হল ওর ধারাবাহিকতা। বিশ্বকাপের চারটি ইনিংসেই এ বার অর্ধশতরানের ইনিংস খেলে নিজের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ রেখেছে ভারতের অধিনায়ক। এ দিনই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে লারা ও সচিনকে টপকে দ্রুততম ২০ হাজার রান পূর্ণ করে ফেলল ও। কিন্তু যখন মনে হচ্ছিল, বিরাটের শতরান আসা সময়ের অপেক্ষা, তখনই বলের অসমান বাউন্স চকিতে বুঝতে না পেরেই জেসন হোল্ডারের বলে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যায় ও।

এ দিনও বিজয় শঙ্কর ব্যর্থ। ১৯ বল খেলে ওর অবদান মোটে ১৪ রান। ধোনি ৬১ বলে ৫৬ রান করলেও শুরুতে স্পিনারদের সামনে দ্রুত রান বাড়াতে পারেনি। কিন্তু পরের দিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেসাররা আসতেই ও সেটা সামাল দিয়ে রানটাকে ভদ্রস্থ জায়গায় নিয়ে গিয়েছে।

ধোনি পরিস্থিতি অনুযায়ী অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে খেলছে। আমার মতে মিডল অর্ডারে বিজয় শঙ্কর চলছে না। ওর জায়গায় খেলানো হোক ঋষভ পন্থকে। আর কেদার যাদবের জায়গায় খেলুক রবীন্দ্র জাডেজা। ইংল্যান্ডে গ্রীষ্মের দ্বিতীয় পর্যায় আসছে। সেখানে পিচ কিন্তু ভারতীয় উপমহাদেশের মতো হবে। ফলে কাপ জয়ের জন্য আরও সহায়ক পরিবেশ পাবে কোহালির ভারত। এ বার তা কাজে লাগানোর পালা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement