প্র্যাক্টিসেই ইয়র্কার শিখেছেন বুমরা

রোহিতই ওয়ান ডে-তে সেরা, বলছেন কোহালি

বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যান যাঁকে ভাবা হচ্ছে, তিনি সতীর্থকে বেছে নিচ্ছেন সেরা হিসেবে। এর চেয়ে বড় শংসাপত্র আর কী হতে পারে!

Advertisement

সুমিত ঘোষ

বার্মিংহাম শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৯ ০৬:০১
Share:

উপহার: রোহিতের মারা ছয়ে আঘাত পেয়েছিলেন এই মহিলা। ম্যাচের পরে নিজের স্বাক্ষরিত টুপি তাঁর হাতে তুলে দিলেন ম্যাচের নায়ক। মঙ্গলবার। টুইটার

চতুর্থ সেঞ্চুরি করে দলকে জেতানো, সেমিফাইনালের টিকিট নিশ্চিত হওয়া। নিজে ফের ম্যাচের সেরা নির্বাচিত হওয়া। তার পরেও রোহিত শর্মাকে কাতর দেখাচ্ছিল কিছুক্ষণের জন্য। তাঁর ছক্কায় আহত হয়েছিলেন এক মহিলা। ইনিংস শেষ করেই তাঁকে দেখতে ছুটলেন রোহিত। উপহার দিলেন টুপি। তিনি ভাল আছেন শুনে আশ্বস্ত হলেন।

Advertisement

এজবাস্টন অবশ্য রো‘হিট’শর্মায় উচ্ছ্বসিত। ‘ভারত আর্মি’ তাঁর নামে গান গাইছে। ভাংড়ার তালে তালে নাচছে। রাজকীয় ব্যাটিং ভঙ্গি দেখে বিরাট কোহালি থেকে কে এল রাহুল, সকলে মুগ্ধ। তাঁর ওপেনিং পার্টনার রাহুল বলে গেলেন, ‘‘রোহিতকে দেখে উত্তেজিত হয়ে পড়ব, পাগল নাকি? ও যে দিন নিজের ছন্দে থাকবে, বিশ্বের সেরা। কেউ ওকে অনুকরণ করতে পারবে না। কেউ ওর মতো ব্যাট করতে পারবে না।’’

কোহালি বলে দিলেন, ‘‘বিশ্বের সেরা ওয়ান ডে ব্যাটসম্যান রোহিত। আমরা সকলে ওকে নিয়ে অভিভূত।’’ বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যান যাঁকে ভাবা হচ্ছে, তিনি সতীর্থকে বেছে নিচ্ছেন সেরা হিসেবে। এর চেয়ে বড় শংসাপত্র আর কী হতে পারে! কোহালি যোগ করলেন, ‘‘বছরের পর বছর ধরে আমি রোহিতের এই ব্যাটিং দেখে আসছি। নতুন করে আর কী বলব!’’

Advertisement

এ দিন ফের আম্পায়ারের সঙ্গে তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়েন কোহালি। মহম্মদ শামির বলে সৌম্য সরকারের বিরুদ্ধে এলবিডব্লিউয়ের আবেদন তৃতীয় আম্পায়ার নাকচ করে দেন। তার পরে কোহালিকে দেখা যায় আম্পায়ারের সঙ্গে উত্তেজিত ভাবে কথা বলতে। এর আগে আফগানিস্তান ম্যাচে একই ভাবে আম্পায়ারের সঙ্গে তর্কাতর্কিতে জড়িয়েছিলেন কোহালি। যে কারণে তাঁর জরিমানাও হয়েছিল। কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন, এই ঘটনার পরে আবার না তাঁকে ম্যাচ রেফারির কক্ষে যেতে হয়।

ক্রিকেট অনুরাগীরা আবার অন্য এক রেকর্ডের সাক্ষী থাকলেন এ দিন। প্রথম একাদশে তিন জন উইকেটকিপার খেললেন ভারতীয় দলে, যা কখনও দেখা যায়নি। ধোনি, পন্থ এবং দীনেশ কার্তিক। এর সঙ্গে স্কুল এবং কলেজ জীবনে কিপিং করা কে এল রাহুলকে ধরলে সংখ্যাটা চার হবে। আইপিএলেও কিপিং করেছেন রাহুল।

একই বিশ্বকাপে চারটি সেঞ্চুরি করে কুমার সঙ্গকারাকে ছুঁলেন রোহিত। যাঁর দুর্দান্ত সব শট দেখে উচ্ছ্বসিত বিশেষজ্ঞেরাও। ধারাভাষ্য দিতে দিতে বারবার তাঁকে ব্যাখ্যা করা হল, ওয়ান ডে ক্রিকেটের সব চেয়ে দৃষ্টিনন্দন ব্যাটসম্যান হিসেবে। এই নিয়ে দু’টি বিশ্বকাপে রোহিতের পাঁচটি সেঞ্চুরি হল। সামনে সচিন তেন্ডুলকরের রেকর্ড। বিশ্বকাপে মোট ছ’টি সেঞ্চুরি আছে তেন্ডুলকর ও পন্টিংয়ের। যাঁকে ঘিরে উত্তাল ভারতীয় ক্রিকেট ভক্তরা, তিনি অবশ্য আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করে গেলেন। বুঝতেই পারছেন, এখনও কাজ বাকি। মিশন বিশ্বকাপের প্রথম ধাপ পেরনো গিয়েছে মাত্র। ‘‘সকালে মাঠে আসা থেকেই দারুণ একটা অনুভূতি হচ্ছিল। কেন জানি না খুবই আত্মবিশ্বাসী লাগছিল আজ,’’ যখন বলছেন রোহিত, গ্যালারি থেকে তখনও জয়ধ্বনি দিয়ে যাচ্ছেন ভারতীয় সমর্থকেরা। ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যাওয়া নিয়ে বললেন, ‘‘ভাগ্য সাহসীদেরই সহায় হয়।’’

এজবাস্টনের এক দিকের ছোট বাউন্ডারি নিয়ে আগের দিন প্রশ্ন তুলেছিলেন কোহালি। সেই দিকেই জনি বেয়ারস্টোরা বেশি ছক্কা মেরেছিলেন ভারতীয় স্পিনারদের। এ দিন রোহিত প্রথম ছক্কা মেরেছিলেন সেই বাউন্ডারির দিকেই। যদিও ব্যাট করার সময়ে মাথায় অত কিছু থাকে না বলেই জানাচ্ছেন তিনি। বলছেন, ‘‘আমার খেলাটা অন্য রকম। ফিল্ডিংয়ের মধ্যে ফাঁক খুঁজে রান করার চেষ্টায় থাকি আমি। তাই ছোট বাউন্ডারির ব্যাপারটা আমার ক্ষেত্রে অতটা গুরুত্বপূর্ণ হয় না।’’ চারটি সেঞ্চুরি করে কেমন লাগছে? রোহিত যা বললেন, মনে হল বুধবারেই নতুন করে ক্রিজে দাঁড়িয়ে পড়তে চান। ‘‘যে ম্যাচটা হয়ে গিয়েছে, সেটা অতীত। আমার মন্ত্র হচ্ছে, অতীতে পড়ে থেকো না। যে ফর্মে আছে, তাকেই তো বেশি করে অবদান রাখতে হবে। টিমকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’’

রোহিত রোশনাইয়ের আরও একটা দিনে আরও এক জনের কথা না বললে অন্যায় হবে। তিনি— যশপ্রীত বুমরা। কারও কারও মনে হচ্ছে, ক্রিকেটে চিরকালের মতোই সেই অনুচ্চারিত থেকে যাচ্ছেন বোলাররা। রোহিতের ব্যাটিংয়ের পরেও ভারতের পক্ষে জেতা কঠিন হত যদি বুমরার দুর্দান্ত শেষ স্পেল না থাকত। বুমরার ইয়র্কার এই বিশ্বকাপে আক্রম, ইউনিসদের কথা মনে করাচ্ছে। যুগ্ম ম্যাচের সেরা বাছলে ভাল হত, এমন কথাও শোনা গেল অনেকের মুখে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে চার উইকেট নিয়েও ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হননি মহম্মদ শামি। সেই পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল কোহালিকে। এ দিন ফিল্ডিং করার সময় চোট পেয়ে কিছু সময়ের জন্য মাঠ ছেড়েছিলেন বুমরা। পরে অবশ্য ফিরে দুই উইকেট তুললেন। তা সত্ত্বেও ম্যাচের সেরার পুরস্কার ফের নিয়ে গেলেন এক জন ব্যাটসম্যান। বুমরা যদিও তা নিয়ে কাতর বলে মনে হল না। ইয়র্কারের রহস্য কী জানতে চাওয়ায় বলে গেলেন, ‘‘নেট প্র্যাক্টিসে ইয়র্কার করেই আমি নিয়ন্ত্রণ এনেছি। রহস্য কিছুই নয়, প্র্যাক্টিসে মন দিয়ে জিনিসটা অভ্যাস করা।’’

নেট প্র্যাক্টিসে এ রকম একটি ইয়র্কারেই তিনি বিশ্বকাপ শেষ করে দিয়েছেন সতীর্থ বিজয় শঙ্করের। তবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে ‘নো বল’ করে আক্রান্ত হয়ে পড়া এক বোলারকে যে বিশ্ব মঞ্চে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার ব্যাপারে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ দেখাচ্ছে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। খুব বেশি দিন আগের কথা নয়, বুমরার ‘নো বল’ করার প্রবণতা তাঁকে বারবার পিছিয়ে দিচ্ছিল। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনাল পাকিস্তানের ফখর জমানকে তিনি আউট করার পরেও তা বাতিল হয়ে গিয়েছিল ‘নো বল’ করায়। এর পর জমান ঝোড়ো সেঞ্চুরি করে শেষ করে দিয়ে যান ভারতকে। এমনই আক্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন বুমরা যে, জয়পুর পুলিশ তাঁর সেই বোলিং ক্রিজ ছাড়িয়ে যাওয়ার ছবি দিয়ে বিজ্ঞাপন বের করে, ‘‘লাইন না মানলেই বিপদ!’’

কী করে সেই রোগ দূর হল? জানা গেল, তার পিছনেও প্র্যাক্টিসে বাড়তি সময় দেওয়া। বোলিং কোচ বি অরুণ এই কাজ করিয়েছেন তাঁকে দিয়ে। নেট প্র্যাক্টিসের সময় আম্পায়ারের জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকেন অরুণ। তিনি বুমরাকে বলে দিয়েছেন, প্র্যাক্টিসেও ‘নো বল’ করা চলবে না। বলে না ‘প্র্যাক্টিস মেক্‌স আ ম্যান পারফেক্ট’। কিছু কিছু প্রবাদ কখনও পুরনো হয় না!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement