বার্মি‌ংহাম পৌঁছে গেল ভারত, কাল প্রতিপক্ষ মর্গ্যানরা

কঠিন সময় শিখিয়েছে অনেক কিছু, বলছেন শামি

ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোর পরে শামির পাখির চোখ এখন জো রুটদের রবিবার কম রানে প্যাভিলিয়নে ফেরানো।

Advertisement

সুমিত ঘোষ

বার্মিংহাম শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৯ ০৪:০৮
Share:

উন্মোচন: নতুন জার্সি পরে মহম্মদ শামি ও কে এল রাহুল। শুক্রবার বার্মিংহামে। ইংল্যান্ড ম্যাচে এই জার্সিতে দেখা যাবে বিরাট কোহালিদের। টুইটার

ম্যাঞ্চেস্টারে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে শুক্রবার ভারতীয় দল বার্মিংহাম পৌঁছল। রবিবার বিরাট কোহালিদের প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড।

Advertisement

আফগানিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ পরপর দুই ম্যাচে আট উইকেট নিয়েও ম্যাচের সেরা হননি মহম্মদ শামি। যা নিয়ে ক্রীকেটপ্রেমীরা শুধু অবাক নন, ক্ষুব্ধও। প্রশ্ন তুলছেন, আফগানিস্তান ম্যাচে হ্যাটট্রিক করা সত্ত্বেও শামির বদলে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার কেন দেওয়া হল যশপ্রীত বুমরাকে? ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধেও বাংলার এই পেসারই অন্যতম সেরা অস্ত্র বিরাটের। তাঁকে সামনে রেখেই ইংল্যান্ডকে হারানোর রণনীতি সাজাচ্ছে ভারতীয় শিবির। ভুবনেশ্বর কুমার সুস্থ হয়ে উঠলেও শামিকে বাদ দেওয়ার কথা ভাবতে পারছেন না ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টের কেউ।

ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোর পরে শামির পাখির চোখ এখন জো রুটদের রবিবার কম রানে প্যাভিলিয়নে ফেরানো। ম্যাঞ্চেস্টারের ম্যাচের পরেই শামিকে প্রশ্ন করা হয়েছিল ইংল্যান্ডের ব্যাটিং-গভীরতা সম্পর্কে। আত্মবিশ্বাসী পেসারের জবাব ছিল, ‘‘ওদের শক্তি মূল্যায়ন করে আমার কোন সুবিধা হবে না। তার চেয়ে বরং নিজের দক্ষতা নিয়ে ভাবলে অনেক কাজ হবে। তাই মন দিয়ে সেটাই ঝালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। নিজের পরিকল্পনা ঠিকমতো তৈরি করে তা মাঠে প্রয়োগ করলে বিপক্ষের সামনে পাল্টা চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেটাই করতে হবে। বিপক্ষে কোন দল বা কোন ব্যাটসম্যান রয়েছে, তা নিয়ে ভাবতে চাই না।’’

Advertisement

শেষ আঠারো মাসের সংগ্রাম একেবারেই তাঁর ব্যক্তিগত। পারিবারিক সমস্যা থেকে ফিটনেস কমে যাওয়ার আতঙ্কে তাঁকেই ভুগতে হয়েছে। সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছেন। বিশ্বকাপে দু’ম্যাচে সুযোগ পেয়ে আট উইকেট নিয়ে নাটকীয় প্রত্যাবর্তন ঘটিয়েছেন শামি। সাফল্যের কৃতিত্ব কাকে দিতে চান? ভারতীয় পেসারের স্পষ্ট উত্তর, ‘‘একেবারেই নিজেকে।’’ যোগ করেছেন, ‘‘নিজের উপরে সব সময় আস্থা ছিল। নিজের দক্ষতা নিয়ে আমি সব সময়েই আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। আমি জানি, বিশ্বের যে কোনও উইকেটেই মাথা উঁচু করে বল করতে পারব। যখনই আমার কাঁধে দায়িত্ব চেপেছে, আমি নিজেকে উজাড় করে দিয়েছি। কঠিন সময় শিখিয়েছে অনেক কিছু।’’ বৃহস্পতিবার ম্যাঞ্চেস্টারে ম্যাচ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে মিক্সড জ়োনে শামি আরও বলেছেন, ‘‘সাফল্যের জন্য নিজেকে সব চেয়ে বেশি কৃতিত্ব দেওয়া উচিত। শেষ ১৮ মাস সব সমস্যা মিটিয়ে যে ভাবে ফিরেছি, তার কৃতিত্ব আমি ছাড়া আর কেউ নিতে পারে না।’’ জানাতে ভোলেননি, প্রথম দলে ঢোকার জন্য কতটা মুখিয়ে ছিলেন তিনি। শামির কথায়, ‘‘চূড়ান্ত পর্যায়ের জন্য নিজেকে তৈরি রেখেছিলাম। কেবল অপেক্ষায় ছিলাম, কবে প্রথম একাদশে সুযোগ আসবে। মনে মনে প্রত্যেক দিন বলতাম, সুযোগ এলেই বল হাতে নিজেকে নিংড়ে দিতে হবে।’’

আগমন: বার্মিংহাম পৌঁছে গেলেন ধোনিরা। রবিবার প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড। টুইটার

বৃহস্পতিবার ম্যাঞ্চেস্টারে শামি একাই ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং মেরুদণ্ড ভেঙে দেন। তাঁর শিকার হয়েছেন ‘ইউনিভার্স বস’ ক্রিস গেল, শেই হোপ, শিমরন হেটমায়ার ও ওশেন থমাস। ম্যাচের পরে শামি বলেছেন, ‘‘ক্রিস গেল ও আমি আইপিএলে একই দলে ছিলাম। তাই কিছুটা সুবিধা হয়েছে ওকে আউট করার ক্ষেত্রে। কারণ, এক বার এই ধরনের ক্রিকেটারদের সঙ্গে খেলার সুযোগ পেলে, একটা ধারণা তৈরি হয় সংশ্লিষ্ট ক্রিকেটারের কোন কোনও দুর্বল জায়গাগুলো লক্ষ্য করে বল করতে হবে।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘একটা বিষয় মাথায় রেখেছিলাম, গেলকে যদি হাত খুলে মারতে না-দিই, তা হলে একটা সময়ের পরে অধৈর্য হয়ে যাবে এবং মারার চেষ্টা করবে। তখনই ওকে আউট করার সুযোগ চলে আসবে।’’ এই ম্যাচেই শেল্ডন কটরেল আউট হওয়ার সময় শামি তাঁর ভঙ্গি অনুকরণ করে স্যালুট দেন। যা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় কেউ কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

পারিবারিক সমস্যার জেরে ভারতীয় বোর্ডের বার্ষিক চুক্তির তালিকা থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল শামিকে। ইয়ো ইয়ো টেস্টে ব্যর্থ হয়ে বসতে হয়েছিল আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্টে। শামি বলেছেন, ‘‘ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য ঈশ্বরকে অবশ্যই ধন্যবাদ দিতে চাইব। তিনিই সব রকম লড়াই করার শক্তি ও সাহস দিয়েছেন। এই মুহূর্তে দেশের হয়ে সেরাটা দেওয়াই আমার কাজ। তাতেই মনোনিবেশ করছি।’’ তিনি যোগ করেছেন, ‘‘ইয়ো ইয়ো টেস্টে ব্যর্থ হওয়ার আগে ছন্দ পাচ্ছিলাম না। এখন ফিটনেসের সেই ঘাটতি আর নেই। ওজন কমিয়ে আমি এখন অনেক প্রত্যয়ী। বেড়েছে বলের গতিও।’’

বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আগেই অনেকটা ওজন কমিয়েছেন শামি। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে ওয়ান ডে সিরিজে তাঁকে ছিপছিপে দেখিয়েছে। যার ফলও পেয়েছেন। বলের গতি, বৈচিত্র বেড়েছে। মানসিক ভাবেও অনেকটা পরিণত হয়ে উঠেছেন। তাঁর সাফল্যের মূল কারণ যে ফিটনেস বৃদ্ধি, তা জানিয়ে দেন শামি। বলেছেন, ‘‘ইয়ো ইয়ো টেস্টে ব্যর্থ হওয়ার পরেই জেদ চেপে গিয়েছিল। প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, দলে ফিরব আরও শক্তিশালী হয়ে।’’

শামির সাফল্যের আরও একটা কারণ খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন। কলকাতায় ক্লাব ক্রিকেট খেলার সময় বিরিয়ানি ছিল তাঁর প্রিয়। রোল, কাবাবও বাদ যেত না। কিন্তু এখন তা ছুঁয়েও দেখেন না। ‘‘নিয়মিত ট্রেনিং ও খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন করায় আগের চেয়ে বেশি পরিশ্রম করতে পারছি। বলে গতি বাড়িয়েছি। সচরাচর ক্লান্ত হয়ে পড়ছি না। তা ছাড়া দক্ষতা নিয়ে কখনওই আমার উদ্বেগ ছিল না। যে কোনও উইকেটেই ভাল বল করার ক্ষমতা রয়েছে,’’ বলছিলেন শামি।

বিশ্বকাপের প্রথম চার ম্যাচে সুযোগ না-পাওয়ায় কোনও আক্ষেপ আছে? শামির স্পষ্ট উত্তর, ‘‘১৫ জনের দলে সুযোগ পাওয়াও অনেক বড় ব্যাপার। আমার মধ্যে কিছু দেখেছে বলেই না সুযোগ দিয়েছে। জানতাম সুযোগ আসবেই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement