প্রতিদ্বন্দ্বী: আই লিগ ম্যাচের আগে প্রস্তুতিতে মগ্ন দুই তারকা। সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্কে প্লাজা। ছবি: শৌভিক দে
সিংহ বনাম নেকড়ে!
এক জন চোট সারিয়ে মাঠে ফেরার জন্য ছটফট করছেন। বিপক্ষের গোলমুখে ক্ষিপ্রতার জন্য ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা তাঁকে তুলনা করতে শুরু করে দিয়েছেন সিংহের সঙ্গে। তিনি, উইলিস প্লাজা।
আর এক জন ভারতীয় ফুটবলে পরিচিতি লাভ করেছেন মোহনবাগান ঘাতক হিসেবে। তিনি, চার্চিল ব্রাদার্সের স্ট্রাইকার অ্যান্টনি উলফ।
আইজল এফসি ম্যাচে কুঁচকিতে চোট পেয়ে সপ্তাহ দু’য়েকের জন্য মাঠের বাইরে চলে গিয়েছিলেন প্লাজা। খেলতে পারেননি বেঙ্গালুরু ও লাজং এফসি-র বিরুদ্ধে। গোলকিপার কোচ অভিজিৎ মণ্ডলের কাছে নীরবে অনুশীলন করে মাঠে ফিরেছেন ১০ ম্যাচে ৬ গোল করা স্ট্রাইকার। আর সোমবার সকালে সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্কে প্লাজা ও রবিন সিংহ-কে অস্ত্র করেই চার্চিল বধের মহ়ড়া দিলেন ইস্টবেঙ্গল কোচ।
প্লাজা-কে নিয়ে স্বস্তি ফেরার দিনেই অবশ্য মর্গ্যানের দুশ্চিন্তা বাড়ালেন গুরবিন্দর সিংহ।। গোড়ালিতে চোট থাকায় এ দিন প্র্যাক্টিসই করতে পারেননি তিনি। তাঁর পরিবর্তে প্রথম দলে খেলার সম্ভাবনা প্রবল আনোয়ার আলির। ক্লান্তির কারণে প্র্যাক্টিস করেননি আর এক ডিফেন্ডার ইভান বুকেনিয়া। দুই প্রধান ডিফেন্ডারকে ছাড়াই প্রস্তুতি! বিকেলে ক্লাব তাঁবুতে সাংবাদিক বৈঠকে মর্গ্যান বললেন, ‘‘সব ম্যাচই কঠিন। কিন্তু ফুটবলাররা তৈরি। তবে একা অ্যান্টনি নয়, ওদের পুরো দলটাকে নিয়েই ভাবছি।’’ মোহনবাগানের হার থেকেও যে তিনি শিক্ষা নিয়েছেন, স্বীকার করলেন মর্গ্যান। বললেন, ‘‘প্রথম লেগে আমরা জিতলেও, এখন চার্চিল যে রকম খেলছে, তাতে সব সময় সতর্ক থাকতে হবে।’’ ক্লাবের শীর্ষ কর্তারাও অনুশীলনে উজ্জীবিত করার চেষ্টা করলেন ফুটবলারদের।
চার্চিল শিবিরে প্রস্তুতির ছবিটা একই রকম। এ দিন বিকেলে ইস্টবেঙ্গল মাঠে অ্যান্টনি-কে কেন্দ্র করেই মশাল নেভানোর রূপরেখা তৈরিতে ব্যস্ত ছিলেন ডেরেক পেরিরা। সাংবাদিক বৈঠকে চার্চিল কোচ বললেন, ‘‘ইস্টবেঙ্গল খেতাবের দৌড়ে আছে। তাই ঘরের মাঠে ওদেরই চাপ বেশি।’’ আর কোচের পাশে বসেই অ্যান্টনির হুঙ্কার, ‘‘২০০৬ বিশ্বকাপে ত্রিনিদাদ ও টোব্যাগো দলে ছিলাম। আমাদের অধিনায়ক ডোয়াইট ইয়র্ক বলত, বড় ম্যাচই হচ্ছে নিজেকে প্রমাণ করার সেরা মঞ্চ। তাই ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান ও বেঙ্গালুরু এফসি-র মতো দলগুলোর বিরুদ্ধে সব সময় উদ্বুদ্ধ হয়ে খেলি।’’ একই দর্শন প্লাজার-ও। শুধু তাই নয়। দুই তারকার উত্থানের কাহিনিতেও আশ্চর্য মিল।
ইস্টবেঙ্গল মাঠে উলফ। নিজস্ব চিত্র
প্লাজা ও অ্যান্টনির স্বপ্ন ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ক্রিকেট বিশ্বকাপে খেলা। শেষ পর্যন্ত ফুটবলকেই বেছে নিয়েছিলেন তাঁরা। কেন? অ্যান্টনি বলছিলেন, ‘‘আমি ব্যাটসম্যান ছিলাম। ত্রিনিদাদ ও টোব্যাগো লিগে ড্রেডনটস ক্রিকেট ক্লাবের একটা ৯৮ রান করেছিলাম। আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তে সেঞ্চুরি হাতছাড়া হয়েছিল। তবে দু’বছর খেলার পর উপলব্ধি করলাম, ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ক্রিকেট বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন অধরাই থাকবে। তার চেয়ে ফুটবলে মনঃসংযোগ করাই ভাল।’’ সুনীল নারিনের প্রিয় বন্ধু প্লাজা-ও ঠিক একই কারণে ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়ে ফুটবলকে বেছে নিয়েছিলেন। কিন্তু এই মুহূর্তে দুই তারকার লক্ষ্য মিলে গেলেও তাতে ফারাকও রয়েছে বিস্তর।
প্লাজার স্বপ্ন তেরো বছর পরে আই লিগে ইস্টবেঙ্গলকে চ্যাম্পিয়ন করা। আর অ্যান্টনি-র লড়াই অবনমনের আতঙ্ক থেকে চার্চিল-কে বার করে আনা।
আজ :ইস্টবেঙ্গল বনাম চার্চিল ব্রাদার্স (বারাসত, বিকেল ৪.৩৫)। ডিএসকে শিবাজিয়ান্স বনাম আইজল এফসি (পুণে, সন্ধে ৭.০৫)। মিনার্ভা এফসি বনাম লাজং এফসি (লুধিয়ানা, সন্ধে ৭.০৫)।