গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
৪১ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ‘লোডশেডিং’ লখনউয়ে! কাজে এলেন না সঞ্জীব গোয়েন্কার ২৭ কোটির ‘পাওয়ার প্ল্যান্ট’ ঋষভ পন্থ। বাতিল লোকেশ রাহুলের কাছেই হেরে গেল তাঁর লখনউ সুপার জায়ান্টস। দিল্লি ক্যাপিটালসের জয়ে রাহুলের সঙ্গী হলেন গোয়েন্কার শহরের দুই ক্রিকেটার মুকেশ কুমার এবং অভিষেক পোড়েল। অটল বিহারী বাজপেয়ী স্টেডিয়ামের ভিআইপি বক্সে দাঁড়িয়ে দলের ৮ উইকেটে হার দেখলেন ‘অসহায়’ গোয়েন্কা।
গত বছর আইপিএলে একটি ম্যাচ হেরে যাওয়ার পর মাঠে নেমে এসে তৎকালীন লখনউ অধিনায়ক রাহুলকে ভর্ৎসনা করেছিলেন গোয়েন্কা। সেই ছবি এখনও উজ্জ্বল ভারতের ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে। সেই ঘটনা নিশ্চিত ভাবে ভোলেননি লখনউ সুপার জায়ান্টসের কর্ণধার কলকাতার শিল্পপতি। অবশ্যই মনে রয়েছে রাহুলেরও। আইপিএলের গত নিলামের আগে রাহুলকে দল থেকে ছেঁটে ফেলেন গোয়েন্কা। দেশের অন্যতম সেরা ব্যাটারের উপর ভরসা রাখতে পারেননি। নিলামে রাহুলকে কিনে নেন দিল্লি ক্যাপিটালস কর্তৃপক্ষ। গোয়েন্কা আবার গত বার দিল্লির অধিনায়ক পন্থকে কিনে নেন।
সে দিক থেকে মঙ্গলবার লখনউ সুপার জায়ান্টস এবং দিল্লি ক্যাপিটালসের লড়াই ছিল মর্যাদার। অপমানের জবাব দেওয়ার। লখনউয়ের ঘরের মাঠে ঠিক সেই কাজটাই করলেন রাহুল। গোয়েন্কার ঘরে অন্ধকার নামিয়ে আনলেন। প্রথমে ব্যাট করে লখনউ করেছিল ৬ উইকেটে ১৫৯ রান। এক ওভারে জোড়া উইকেট নিয়ে লখনউয়ের ইনিংসকে দিশাহীন করে দিয়েছিলেন বাংলার জোরে বোলার মুকেশ। পন্থদের ইনিংসের শেষ ওভারেও ২ উইকেট নেন তিনি। ৩৩ রানে ৪ উইকেট নিয়ে দিল্লির রান দলের আয়ত্তের মধ্যে রেখে দেন মুকেশ। জবাবে ১৭.৫ ওভারে ২ উইকেটে ১৬১ দিল্লির।
জয়ের জন্য ১৬০ রান করতে নেমে আবার দিল্লির মঞ্চ তৈরি করে দিলেন বাংলার তরুণ উইকেটরক্ষক-ব্যাটার অভিষেক। ওপেন করতে নেমে চন্দননগরের তরুণ খেললেন ৩৬ বলে ৫১ রানের ইনিংস। মারলেন ৫টি চার এবং ১টি ছক্কা। অভিষেকের সাজিয়ে দেওয়া মঞ্চে রাহুল দেখিয়ে দিলেন, তিনি কী করতে পারেন। যে ২২ গজে লখনউয়ের অধিকাংশ ব্যাটার দাঁড়াতে পারলেন না, সেখানেই সাবলীল ব্যাটিং করলেন রাহুল। ঠান্ডা মাথায় প্রতিটি শটে বুঝিয়ে দিলেন নিজের জন্য নয়, দলের জন্য খেলেন। আইপিএলে নিজের ৪০তম অর্ধশতরান করলেন ৪০ বলে। আইপিএলের ইতিহাসে দ্রুততম ৫০০০ রান পূর্ণ করার নজির গড়লেন একই সঙ্গে। দিল্লিকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়লেন। খেললেন ৪২ বলে ৫৭ রানের অপরাজিত ইনিংস। মারলেন ৩টি করে চার এবং ছক্কা। ধমকের বদলা ধমাকায় নিলেন রাহুল।
সন্তানের জন্মের সময় স্ত্রীর পাশে থাকার জন্য লখনউয়ের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচটি খেলতে পারেনি রাহুল। সম্ভবত দ্বিতীয় ম্যাচটাকে বেছে নিয়েছিলেন তাই। এ দিন ম্যাচের শুরু থেকেই রাহুলের মুখে ছিল সংকল্পের ছাপ। দৃঢ়তার ছবি। উইকেট রক্ষা করার সময় যেমন ভুল করেননি, তেমনই ব্যাট হাতেও নিখুঁত থাকলেন। ফর্মে থাকা সতীর্থ করুণ নায়ারের (১৫) দ্রুত আউট হওয়ার ক্ষতি বুঝতেই দিলেন না দিল্লিকে। অক্ষরও ব্যাট হাতে রাহুলের সঙ্গে ছিলেন ম্যাচের শেষ পর্যন্ত। তিনি করলেন ২০ বলে অপরাজিত ৩৪।
দলের জন্য খেলে এমন ক্রিকেটারদের নিতে চেয়েছিলেন গোয়েন্কা। পন্থের জন্য খরচ করতে দ্বিধা করেননি। সেই পন্থই আইপিএলে অফ ফর্মে। দিল্লির বিরুদ্ধে ম্যাচটা তাঁর জন্যও মর্যাদার ছিল। দিল্লি রাখতে চাইলেও থাকতে চাননি তিনি। নিলামে নাম লিখিয়ে নিজের বাজার দর বুঝতে চেয়েছিলেন। বাজারে দর পেলেও আইপিএলে তাঁর ব্যাজার পারফরম্যন্স অব্যাহত। মর্যাদার লড়াইয়ে নিজেকে লুকিয়ে রাখলেন ব্যাটার পন্থ। ব্যাট করতে নামলেন সাত নম্বরে। দলের ইনিংসের শেষ দু’টি বল খেলে তাঁর অবদান শূন্য!