সৌজন্য: হতাশাই সঙ্গী কেনের। তৃপ্ত অধিনায়ক ফিঞ্চ। ছবি রয়টার্স।
দুবাইয়ের সাংবাদিক বৈঠকে বিষণ্ণ মুখে বসে আছেন তিনি। একটু আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনাল। আর নেপথ্যে উঠছে অস্ট্রেলীয়দের গর্জনের পর গর্জন।
আরও একটা ট্রফির খুব কাছে এসেও শূন্য হাতে ফিরতে হচ্ছে কেন উইলিয়ামসনকে। মাথাটা ঘুরিয়ে এক বার শব্দের উৎসের দিকে তাকালেন নিউজ়িল্যান্ড অধিনায়ক। তার পরে হাল্কা হাসির সঙ্গে বলে উঠলেন, ‘‘আপনারা নিশ্চয়ই শুনতে পাচ্ছেন, অস্ট্রেলীয়রা উৎসব করছে।’’ দুবাই থেকে ভিডিয়ো কলেও বোঝা সম্ভব, ওই ছোট্ট হাসিটার মধ্যে কতটা যন্ত্রণা লুকিয়ে আছে। ২০১৯ সালের শাপমোচন ২০২১ সালেও হল না।
এর মিনিট পনেরো পরে অ্যারন ফিঞ্চ যখন সাংবাদিক বৈঠক কক্ষে পা রাখলেন, তখন অস্ট্রেলীয়দের উৎসব একটু স্তিমিত হয়েছে। এসেই শুরুতে ক্ষমা চেয়ে নিলেন দেরি হয়েছে বলে। তার পরে কোনও রাখঢাক না করে অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক স্বীকার করে নিলেন, এই বিশ্বকাপে ভাগ্যের সাহায্যও পেয়েছেন তিনি।
সেটা কী রকম? প্রশ্ন ছিল, এই প্রতিযোগিতায় সাতটা ম্যাচে ছ’টায় টস জিতেছেন আপনি। এটা আপনাদের বিশ্বকাপ জয়ে কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেল? ফিঞ্চ পরিষ্কার বলে দিলেন, ‘‘সাতটার মধ্যে ছ’টা টস জেতা অবশ্যই বিরাট একটা ব্যাপার। আমি আগে টসের গুরুত্ব নিয়ে ইচ্ছে করেই ঠিক কথা বলছিলাম না। মনে করেছিলাম, আমাকে কখনও না কখনও টস হারতেই হবে আর আগে ব্যাট করতে হবে। এখন বলতে বাধা নেই, ভাগ্য আমাদের সাহায্য করেছে।’’ তবে তিনি এও বলতে ভুললেন না, ‘‘পাশাপাশি আমরা কিন্তু দারুণ ক্রিকেটও খেলেছি।’’
পাঁচ বারের ৫০ ওভারের বিশ্বকাপজয়ী দল এই প্রথম টি-টোয়েন্টির সর্বোচ্চ খেতাব ঘরে তুলল। হোটেলে ফেরার পরে যে উৎসব বাঁধ মানবে না, তা অধিনায়কের কথাতেই পরিষ্কার। বলেই দিলেন, ‘‘আমাদের ড্রেসিংরুমের ডিজে হল অ্যাডাম জ়াম্পা এবং কেন রিচার্ডসন। ওরাই মাতিয়ে রাখবে।’’
যেমন এ দিন মাঠ মাতিয়ে রাখলেন তাঁর দুই অস্ত্র— ডেভিড ওয়ার্নার এবং মিচেল মার্শ। প্রথম জন, প্রতিযোগিতার সেরা ক্রিকেটার নির্বাচিত হয়েছেন। দ্বিতীয় জন, ম্যাচের সেরা ক্রিকেটার। এই কিছু দিন আগেই ওয়ার্নার আইপিএল দলেই সুযোগ পাচ্ছিলেন না। কিন্তু বিশ্বকাপে এসে চমকে দিলেন। কখনও কি ভেবেছিলেন, বিশ্বকাপের সেরা ক্রিকেটার হবেন ওয়ার্নার?
প্রশ্নকর্তা দুবাইয়ের সাংবাদিক কক্ষেই ছিলেন। তাঁর দিকে তাকিয়ে ফিঞ্চের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘আপনি ভাবেননি?’’ বলে চলেন, ‘‘একদম সত্যি কথা বলছি। দু’মাস আগে আমি কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গারকে বলেছিলাম, ডেভিকে (ওয়ার্নার) নিয়ে চিন্তা কোরো না। ও বিশ্বকাপের ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট হবে। যখন কোণঠাসা হয়ে পড়ে, তখনই সবচেয়ে বিপজ্জনক ওয়ার্নার। অনেকটা ভালুককে খোঁচা মারার মতো ব্যাপার।’’ তবে প্রতিযোগিতার সেরা ক্রিকেটার হওয়ার দৌড়ে ফিঞ্চ ভেবেছিলেন লেগস্পিনার অ্যাডাম জ়াম্পা পুরস্কারটা নিয়ে যাবেন।
ফিঞ্চ মেনে নিয়েছেন, ফাইনালেও ভাগ্য এবং শিশিরের সাহায্য পেয়েছেন তাঁরা। টস হার কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল? নিউজ়িল্যান্ড অধিনায়ককে এই প্রশ্ন করা হলে উইলিয়ামসন বলে যান, ‘‘টস হারাটা একটু প্রভাব ফেলেছে। শিশিরও পড়েছিল পরের দিকে। কিন্তু তার জন্য অস্ট্রেলিয়ার কৃতিত্বকে খাটো করার কোনও জায়গা নেই। ওরা দারুণ খেলেছে।’’ নিজের ব্যাটিং নিয়ে উইলিয়ামসনের মন্তব্য, ‘‘পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যাট করতে চেয়েছিলাম। স্কোরবোর্ডে রানটা খারাপ ছিল না। প্রথম দিকে কয়েকটা উইকেট ফেলে দিতে পারলে চাপটা তৈরি করা যেত। কিন্তু সেটা হয়নি।’’
এই ম্যাচের মোড় ঘোরানো মুহূর্ত কোনটা? সাংবাদিক বৈঠক শেষ করার আগে মুচকি হেসে ফিঞ্চ বলে গেলেন, ‘‘আমার আউটটা। আমি আউট হওয়ার পরেই মিচ মার্শ এসে বিধ্বংসী ব্যাটিং শুরু করে। ওয়ার্নারের সঙ্গে ওর জুটিটা চাপটা নিউজ়িল্যান্ডের উপরে নিয়ে যায়। ওই সময় যেটা প্রয়োজন ছিল।’’