আউট: এ ভাবেই বিদর্ভের বোলাররা শাসন করলেন শনিবার। —নিজস্ব চিত্র।
ভারতীয় দলে স্টাম্পের পিছনে দাঁড়িয়ে ফ্লাইং সুপারহিরোর তকমা তো পেয়েই গিয়েছেন ঋদ্ধিমান। কিন্তু অন্য দু’জন কি বাংলার ক্রিকেটের মহানায়ক হয়ে উঠতে পারবেন?
এই তিন জনের হাতেই এখন বঙ্গ ক্রিকেটের সম্মান। ঋদ্ধিমানের কথা তো লেখাই হল। বাকি দু’জন মনোজ তিওয়ারি ও সুদীপ চট্টোপাধ্যায়।
অতিথি বাড়িতে ঢুকে গলা টিপে ধরলে কেমন লাগে, তা এখন ভাল মতোই টের পাচ্ছেন মনোজ, সুদীপ, ঋদ্ধিরা। রবিবার দম বন্ধ হয়ে আসা বাংলাকে ব্যাট হাতে বিদর্ভের বিরুদ্ধে ইনিংস হার থেকে বাঁচানোটাই তাঁদের বড় পরীক্ষা। ২০৬ রান তোলার আগে আউট হয়ে গেলে ইনিংসে হারতে হবে বাংলাকে। হার বাঁচাতে না পারলে হয়তো ফের ঝড় উঠবে বাংলার ক্রিকেট মহলে। পারলেও অবশ্য কল্যাণী থেকে এক পয়েন্টের বেশি কিছু আনা সম্ভব নয়।
ঘরের মাঠে পরপর দুটো ম্যাচে ছ’পয়েন্ট তোলার জন্য নেমেও নাকের বদলে নরুন। ইডেনে তিন। আর কল্যাণীতে ত্রিমূর্তির নাটকীয় ইনিংস ছাড়া এক পয়েন্টও সম্ভব নয়।
যা করুণ অবস্থা বঙ্গ ব্যাটিংয়ের, তাতে রবিবার সকালেও প্রথম ইনিংসের মতো ফের ধস নামলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
শনিবার ম্যাচের তৃতীয় দিন যা হল। হঠাৎ ভিতরে ঢুকে আসা বলে মনোজ তিওয়ারির স্টাম্প ছিটকে দেন গুরবানি। ঋদ্ধিমান সাহাকে অনেক লড়াই করতে হয়েছে এ দিন। মনে হচ্ছিল তাঁকে আটকে রাখার জন্য বিশেষ কোনও নীল-নকশা ছকেছিলেন বোলাররা। একবার ড্রাইভ করতে গিয়ে কভারে সহজ ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান ঋদ্ধি। পরে গুরবানির বল ব্যাট ছুঁয়ে কিপারের গ্লাভসে জমা হয়ে যায়। ২৯ বলের ইনিংসে ভারতীয় কিপারের ব্যাটে কোনও রান নেই!
রঞ্জি ট্রফি রাউন্ড-আপ
• আলুরে: গ্রুপ ‘এ’- কর্নাটক ৬৪৯ বনাম দিল্লি ২৭৭-৪ (গৌতম গম্ভীর ১৩৫ ন.আ.)।
• পুণেতে : গ্রুপ ‘এ’-মহারাষ্ট্র ৪৮১ বনাম রেলওয়েজ ৩৩০-৫।
• বর্ষাপাড়ায়: গ্রুপ ‘এ’- উত্তর প্রদেশ ৩৪৯ ও ২২৯-২ (উমঙ্গ শর্মা ১৩১ ন.আ.) বনাম অসম ৩১৫ (সৌরভ কুমার ৫-৫৪)।
• রোহতকে: গ্রুপ ‘বি’- হরিয়ানা ২২৩ ও ১৭৯-৫ বনাম রাজস্থান ১৫০।
• জামশেদপুরে: গ্রুপ ‘বি’- জম্মু ও কাশ্মীর ৩৭৬ ও ২৭৬-৭ বনাম ঝাড়খন্ড ২৯২-৯ ডি.।
• রাজকোটে: গ্রুপ ‘বি’- সৌরাষ্ট্র ৫৭০ বনাম গুজরাত ৩০৪-৪ (প্রিয়াঙ্ক পঞ্চাল ১৪৫)।
• আগরতলায়: গ্রুপ ‘সি’- অন্ধ্র প্রদেশ ৪০২ ও ৫১-১ বনাম ত্রিপুরা ৩১৫।
• মুম্বইয়ে: গ্রুপ ‘সি’- মুম্বই ১৭১ ও ১০২-৪ বনাম বরোদা ৫৭৫-৯ ডি. (স্বপ্নীল সিংহ ১৬৪)।
• কটকে : গ্রুপ ‘সি’- তামিল নাড়ু ৫৩০-৮ ডি. বনাম ওড়িশা ২৮৬-৪ ।
• ধর্মশালায়: গ্রুপ ‘ডি’- হিমাচল প্রদেশ ১৭৫ ও ১৬৭ (শাহনাওয়াজ হুসেইন ৬-৫৩) বনাম ছত্তীসগঢ় ৪৫৬। ছত্তীসগঢ় ইনিংস ও ১৪৪ রানে জয়ী। পয়েন্ট- ছত্তীসগঢ় ৭, হিমাচল প্রদেশ ০।
• পালামে: গ্রুপ ‘ডি’- সার্ভিসেস ২৬৩ ও ১০৮-৩ বনাম গোয়া ২৭০ (সচীদানন্দ পাণ্ডে ৫-৬১)।
ঋদ্ধির মতো কৌশিক ঘোষকেও এ দিন ভাগ্য একবার সাহায্য করে। ললিত যাদবের নো বলে তিনি কট বিহাইন্ড হন নিজের ২২ রানে। শেষে হাফ সেঞ্চুরি করে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে যান। এর পরে ওয়াখড়ের ঘূর্ণিতে এলবিডব্লিউ শ্রীবৎস। তার পর শুধু যাওয়া আসা। ১৩২-৩ থেকে ২০৭-এ অল আউট। ৭৫ রানে সাত উইকেট পড়ে যায় বাংলার। পাঁচশো রান তাড়া করতে নেমে এই হাল যাদের, তাদের তো এক পয়েন্ট অর্জন করতেও লড়াই করতে হবে।
আগের দিন বিকেলে খেলার শেষে বিদর্ভের বোলিং কোচ সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন অশোক ডিন্ডা। প্রাক্তন ভারতীয় বোলারের কাছ থেকে কতটা কী শিখলেন বাংলার প্রধান স্ট্রাইক বোলার, তা তিনিই জানেন। কিন্তু মাঠে দেখে বোঝা গেল, কল্যাণীর এই উইকেটে কী ভাবে বোলিং করতে হয় তা বাংলার বোলারদের শেখাতেই যেন এসেছিলেন ললিত যাদব, রজনিশ গুরবানিরা।
নিখুঁত লাইন, লেংথ। সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ। এই মূল ব্যাপার ঠিক রাখলেই যে এই উইকেটে সফল হওয়া যায়, সাফল্য পেতে যে আক্রম, ম্যাকগ্রা হতে হয় না বা রকেট সায়েন্সও পড়তে হয় না, তা দেখালেন বিদর্ভের বোলাররা। তাও উমেশ যাদব বলে একজন নেই এই দলে। একা ললিত যাদবই ছারখার করে দিলেন।
বিদর্ভের প্রাক্তন ক্রিকেটার ও নির্বাচক জয়ন্তীলাল রাঠৌড়ের কাছ থেকে শোনা গেল, বছরখানেক আগে বোলিং কোচ হিসেবে যোগ দেওয়া সুব্রত শুধু সিনিয়র নন, সেখানকার অনূর্ধ্ব-১৯, অনূর্ধ্ব-১৬ দলের বোলারদেরও প্রশিক্ষণ দেন। এবং তাঁর আসার পর থেকে বিদর্ভের বোলারদের অনেক উন্নতি হয়েছে। বাংলারও একজন বোলিং কোচ আছে বটে। তবে তাঁর অবদান কতটা, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। প্রথম ইনিংসে ২৯২ রানে পিছিয়ে থেকে ফলো অন করে দ্বিতীয় ইনিংসে যখন ব্যাট করতে নামে বাংলা, তখনও অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয়নি। ফের ‘খলনায়ক’ সেই ললিত যাদব। তাঁর অফস্টাম্পের বাইরের বলে ব্যাট ছুঁইয়ে কট বিহাইন্ড হন অভিমন্যু ঈশ্বরন। ললিতের বল ঠিকমতো বুঝতে না পেরে এলবিডবব্লিউ-র ফাঁদে পড়েন অভিষেক রামন। যিনি আবার নিজের আউটে অবাক হয়ে ক্রিজে কয়েক সেকেন্ড দাঁড়িয়েও ছিলেন। কৌশিক স্লিপে ওয়াসিম জাফরকে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান। যখন ক্রিজ কামড়ে পড়ে থাকার সময়, তখন কেন এই শট নেওয়ার প্রবণতা, কে জানে?
তাঁদের ভুলের খেসারত এখন দিতে হচ্ছে মনোজ, সুদীপদের। পরে ঋদ্ধিমান সাহাও নামবেন। কিন্তু মান বাঁচাতে পারবেন কি না, সেটাই দেখার।