সৌরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সুদীপ চট্টোপাধ্যায়ের লড়াকু ইনিংস।
একটা বল পড়ে হঠাৎ লাফিয়ে উঠছে। আবার একই জায়গায় পড়ে পরের বলটা গড়িয়ে যাচ্ছে।
বল এবং পিচের চরিত্র বোঝা এককথায় অসম্ভব ব্যাটসম্যানদের পক্ষে। এ রকম পিচে সুদীপ চট্টোপাধ্যায়, ঋদ্ধিমান সাহা, অনুষ্টুপ মজুমদার ও অর্ণব নন্দীর লড়াকু ব্যাটিংয়ে রঞ্জি ট্রফি ফাইনালে অ্যাডভান্টেজ বাংলা।
চতুর্থ দিনের শেষে বাংলার রান ছ’ উইকেটে ৩৫৪। ২০ বছর পরে রঞ্জি ট্রফি ফের ঘরে তুলতে বাংলার দরকার আরও ৭২ রান। হাতে রয়েছে চার-চারটি উইকেট।
বাংলার সমর্থকরা স্বপ্ন দেখতেই পারেন। আর এই ‘অযোগ্য’ পিচে বাংলাকে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন বাংলার ব্যাটসম্যানরা। দিনান্তে ক্রিজে রয়েছেন অনুষ্টুপ (৫৮) ও অর্ণব (২৮)। সপ্তম উইকেটে তাঁরা ৯১ রান জুড়ে বাংলা শিবিরে এনে দিয়েছেন জয়ের গন্ধ। অনুষ্টুপকে আদর করে এখন অনেকেই বলছেন বাংলার ‘ভিভিএস’। অন্য ব্যাটসম্যানরা যেখানে বল পড়তে ও মারতে সমস্যায় পড়ছেন, সেখানে অনুষ্টুপ প্রতিটি বলই ব্যাটের মাঝখান দিয়ে খেলছেন।
আরও পড়ুন: নাটকীয় ফাইনালে সৌরাষ্ট্রকে টপকাতে বাংলার চাই আর ৭২ রান, হাতে চার উইকেট
গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
নক আউট পর্বে অনুষ্টুপই ছিলেন বাংলাকে ফাইনালে তোলার অন্যতম রূপকার। তাসের ঘরের মতো যখন ভেঙে পড়ে ব্যাটিং লাইন আপ, তখন অনুষ্টুপ হাল ধরেন। টেল এন্ডারদের সঙ্গে নিয়ে ইনিংসকে টেনে নিয়ে যান। কোয়ার্টার ও সেমিফাইনালে এই ছবিই দেখা গিয়েছে অনুষ্টুপের ব্যাটিংয়ে। দুটো নক আউট ম্যাচেই হাঁকিয়েছেন সেঞ্চুরি। ফাইনালে এখনও তিনি সেঞ্চুরি করেননি ঠিকই। কিন্তু তাঁর ব্যাট ক্রমশ চওড়া হয়ে উঠছে। তাঁর ব্যাট স্বস্তি ফিরিয়েছে বাংলার সাজঘরে। অনুষ্টুপের সঙ্গী অর্ণবও যোগ্য সঙ্গত করে যাচ্ছেন। উনাদকটের বিষাক্ত ছোবল এসে আছড়ে পড়ল অর্ণবের আঙুলে। যন্ত্রণাক্লিষ্ট অর্ণব ব্যাট ছুড়ে ফেলে দিলেন। তার পরেই আবার উঠে কামড়ে পড়ে থাকলেন পিচে। বোলারের চোখে চোখ রেখে ব্যাট করে গেলেন।
সুদীপ চট্টোপাধ্যায় সেঞ্চুরি মাঠে রেখে প্যাভিলিয়নে ফিরলেন। জাদেজার বলটা হঠাৎ করেই উঠে এল। ঠিকমতো নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেন না শট। ব্যক্তিগত ৮১ রানে ফিরতে হল তাঁকে। এতটাই হতাশ ছিলেন যে প্যাড পর্যন্তও খোলেননি ড্রেসিং রুমে ফিরে। যত বার টিভি ক্যামেরা তাঁকে ধরেছে, তত বারই সুদীপকে হতাশায় মাথা নাড়তে দেখা গিয়েছে।
আরও পড়ুন: করোনা-ত্রাস: ফাঁকা মাঠে ISL ফাইনাল, ODI ।। ডার্বিও তাই?
সুদীপ আউট হওয়ার কিছু পরে আউট হন ঋদ্ধিমান সাহা (৬৪)। বহু যুদ্ধের সৈনিক ঋদ্ধিমান। দক্ষ হাতে সামলাচ্ছিলেন সৌরাষ্ট্রের বোলিং। মাঁকড়ের বলটা ছন্দপতন ঘটিয়ে দিল। এই সময়েই মনে হয়েছিল ম্যাচটা বুঝি বাংলার হাত থেকে বেরিয়ে যেতে চলেছে। কিন্তু অনুষ্টুপ ও অর্ণবের দাপুটে ব্যাটিং ফের বাংলার হাতে ম্যাচের রাশ এনে দেয়। কঠিন কাজ আগেই সেরে ফেলেছেন বাংলার ব্যাটসম্যানরা। শেষ দিনে বাকি কাজটা সেরে ফেললেই মধুরেণ সমাপয়েৎ।