প্রত্যয়ী: অরুণ লালের ‘পেপটক’ তাতাচ্ছে মনোজদের। ফাইল চিত্র
দলগঠন নিয়ে চূড়ান্ত নাটকের পরে আজ বৃহস্পতিবার রঞ্জি ট্রফি অভিযান শুরু করছে বাংলা। এ বারও প্রথম ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ সেই হিমাচল প্রদেশ। গত মরসুমে একই দিনে ঋষি ধওয়নদের বিরুদ্ধেই ইডেনে অভিযান শুরু করেছিল বাংলা। এ বার আমতারে খেলতে হবে মনোজ তিওয়ারিদের।
পাহাড়ঘেড়া ছোট্ট শহরের সঙ্গে কলকাতার পরিবেশের বিস্তর ফারাক। এখনই বেশ ঠান্ডা পড়ে গিয়েছে আমতারে। সকাল ও রাতে তাপমাত্রা থাকছে ১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যার প্রভাব পড়তে পারে পিচেও। বুধবার পিচ দেখেছেন বাংলা অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারি। তাঁর মতে, শুরুর দিকে ঘণ্টা দু’য়েক বল নড়াচড়া করতে পারে। কিন্তু ব্যাটসম্যানরা দাঁড়িয়ে গেলে ব্যাটিংয়ের জন্য আদর্শ এই পিচ। যে কারণে সাত ব্যাটসম্যান, দুই স্পিনার ও দুই পেসার নিয়ে মাঠে নামার পরিকল্পনা অধিনায়কের। সূত্রের খবর, প্রয়াস রায়বর্মণ অথবা শাহবাজ আহমেদের মধ্যে এক জনের অভিষেক হতে পারে বৃহস্পতিবার।
বুধবার আমতার থেকে ফোনে মনোজ বললেন, ‘‘পিচের এক দিকে হাল্কা ঘাস রয়েছে। পরিবেশের জন্য বল সুইংও করতে পারে। কিন্তু এখনই বলা যাচ্ছে না প্রথম একাদশ কী হবে। তবে দুই পেসার, দুই স্পিনার ও সাত ব্যাটসম্যান নিয়ে নামার পরিকল্পনা রয়েছে। সকালে পিচ দেখেই পাকাপাকি সিদ্ধান্ত নেব।’’
বিজয় হজারে ট্রফির ব্যর্থতার পরে অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারি ও কোচ সাইরাজ বাহুতুলেকে দুই ম্যাচের পরীক্ষায় রেখেছে সিএবি। এমনকি দলগঠনের সময়েও মতামত নেওয়া হয়নি অধিনায়কের। অপমানিত হয়ে নেতৃত্ব ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মনোজ। যদিও তার প্রভাব যে দলে ও তার খেলায় পড়বে না, সে আশ্বাস দিচ্ছেন অধিনায়ক।
সিএবি-র অনুরোধে এই ম্যাচে নেতৃত্ব দিতে রাজি হওয়া মনোজ বলছেন, ‘‘মাঠের বাইরে অনেক কিছুই হতে পারে। কিন্তু দলের মধ্যে তা কখনওই প্রভাব ফেলতে পারবে না। আমি অধিনায়ক থাকাকালীন বাংলার ‘টিম স্পিরিট’ খারাপ হতে দিইনি। এই ম্যাচেও তা জারি থাকবে।’’
দুই ম্যাচের পরীক্ষা দিতেও দ্বিধাবোধ করছেন না মনোজ। বলেন, ‘‘আমি সারা জীবন চাপের মধ্যে খেলে এসেছি। চাপ কখনও ভয় পাই না। মাঠে নেমে একটাই চিন্তা মাথায় ঘোরে, রান করে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। একমাত্র পারফরম্যান্সই সবার মুখ বন্ধ করে দিতে পারে। সুতরাং, দায়িত্ব যখন নিয়েছি সেটা পালন করেই মাঠ ছাড়ব।’’
বাংলার বিপক্ষ দলে ঋষি, পঙ্কজ জয়সোয়ালের মতো পেসার রয়েছেন। রয়েছেন বাঁ হাতি স্পিনার মায়াঙ্ক ডাগর, যিনি সম্পর্কে বীরেন্দ্র সহবাগের ভাগ্নে। তাঁদের বিরুদ্ধেই ইডেনে ১৭৬ রানের ইনিংস খেলেছিলেন অভিষেক রামন। সেঞ্চুরি করেছিলেন মনোজ নিজেও। সেই আত্মবিশ্বাস কাজে লাগিয়েই আজ নামছেন তাঁরা। পাশাপাশি, রঞ্জি ট্রফি চ্যাম্পিয়ন দলের অন্যতম কাণ্ডারি এখন তাঁদের মেন্টর। সেই অরুণ লালের মানসিক দৃঢ়তা বাড়ানোর ক্লাস করার পরে অদ্ভুত শক্তি অনুভব করছেন ক্রিকেটারেরা। তবে মনোজের আশঙ্কা, এই মানসিকতা মাঠে নেমে হারিয়ে না যায়। তিনি বলেন, ‘‘অরুণ স্যরের ক্লাস করার পরে ইতিবাচক চিন্তা-ভাবনা করার ক্ষমতা বাড়ছে ছেলেদের মধ্যে। কিন্তু সেটা ম্যাচে কাজে লাগাতে না পারলে কোনও লাভ নেই।’’
রঞ্জি ট্রফির এলিট গ্রুপ ‘বি’-তে রয়েছে বাংলা। যে গ্রুপে দিল্লি, পঞ্জাব, তামিলনাড়ু, হায়দরাবাদ, অন্ধ্রপ্রদেশ, কেরল, মধ্যপ্রদেশের মতো শক্তিশালী দল রয়েছে। তাই হিমাচল প্রদেশের বিরুদ্ধে পুরো ছয় পয়েন্ট নিয়ে শহরে ফিরতে চান অধিনায়ক। পাশাপাশি গত মরসুমে ইডেনে হিমাচলের বিরুদ্ধে ভাল খেলেও ড্র করতে হয়েছিল মনোজদের। এ বার সেই ভুল করতে চান না অধিনায়ক। মনোজের বক্তব্য, ‘‘গত মরসুমে ওদের বিরুদ্ধে ভাল খেলার ফলে, মানসিক ভাবে এগিয়ে রয়েছি। সেটা ম্যাচে কাজে লাগিয়ে জয় দিয়েই শুরু করতে চাই।’’
নজরে বিদর্ভ: মহারাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এ মরসুমের রঞ্জি ট্রফি অভিযান শুরু করছে গত বারের চ্যাম্পিয়ন বিদর্ভ। গত বারের দল থেকে খুব একটা বেশি পরিবর্তন করেনি বিদর্ভ। ফৈয়জ ফজলের নেতৃত্বেই মরসুম শুরু করতে চলেছেন রজনীশ গুরবাণীরা। এ বারও প্রাক্তন ভারতীয় ওপেনার ওয়াসিম জাফরকে রেখেই দল গড়েছে তারা। অন্য দিকে এলিট গ্রুপ ‘বি’-তে অন্ধ্রপ্রদেশের বিরুদ্ধে মরসুম শুরু করছে পঞ্জাব। বাংলার গ্রুপেই রয়েছে তারা। তরুণ ডান হাতি ব্যাটসম্যান শুভমন গিলের কাছে আরও একটি নতুন মরসুম ও নতুন পরীক্ষা। ভারতীয় দলে জায়গা করার জন্য এই মরসুম কাজে লাগাতে চান তিনি।