আলোচনা: সচিব জয় শাহের (বাঁ দিকে) সঙ্গে বোর্ড প্রেসিডেন্ট সৌরভ। পাশে কোষাধ্যক্ষ অরুণ ধূমল। পিটিআই
নির্বাচক কমিটির আগের চেয়ারম্যান এম এস কে প্রসাদের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু কে হবেন নতুন চেয়ারম্যান?
বিখ্যাত সেই ক্রিকেট উপদেষ্টা কমিটি (সিএসি) ভেঙে গিয়েছে। কারা হবেন নতুন প্রতিনিধি? তবে কি সচিন তেন্ডুলকর, ভি ভি এস লক্ষ্মণদের আবার ফেরানো হবে?
মুম্বইয়ে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়দের নতুন বোর্ডের প্রথম বার্ষিক সাধারণ সভায় এ সব নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া গেল না। কারণ? স্বার্থ সংঘাত নিয়ে পরিস্থিতি এমনই জটিল আকার ধারণ করে বসে আছে যে, কারা যে নতুন কমিটিতে আসতে পারবেন বা আদৌ আসতে রাজি হবেন কি না, জানা নেই। যেমন, সচিন বা লক্ষ্মণ। অতীতে সিএসি অর্থাৎ ক্রিকেট উপদেষ্টা কমিটিতে ছিলেন। কিন্তু লোঢা সংস্কারের ‘এক ব্যক্তি এক পদ’ স্লোগানে স্বার্থ সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছেন। সচিন মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের মেন্টর। লক্ষ্মণ যুক্ত সানরাইজার্স হায়দরাবাদের সঙ্গে। লোঢা সংস্কার অনুযায়ী, তাঁদের যদি সিএসি-তে যোগ দিতে হয়, আইপিএলের পদ ছাড়তে হবে। মোটা টাকার সেই পদ ছেড়ে তাঁরা আদৌ বোর্ডের কমিটিতে যোগ দিতে রাজি হবেন কি না, তা নিয়েই সংশয়। লক্ষ্মণ আবার ধারাভাষ্যও দেন। সচিনকে চ্যানেলে বিশেষজ্ঞের ভূমিকায় দেখা যায় মাঝেমধ্যে।
খোঁজ করতে গিয়ে ফাঁপরে পড়ে গিয়েছেন সৌরভরা। যাঁর নামই গুরুত্বপূর্ণ পদে ভাবা হয়, দেখা যাচ্ছে তিনি কোনও না কোনও ভূমিকায় ইতিমধ্যেই সক্রিয়। সচিন গেল, লক্ষ্মণ গেল। অনিল কুম্বলে? তিনি ভারতীয় দলের কোচের পদ থেকে সরে যাওয়ার পরে ফাঁকা ছিলেন। কিন্তু এ বারই প্রীতি জিন্টাদের কিংস ইলেভেন পঞ্জাব তুলে নিয়েছে তাঁকে। তাই কুম্বলেকেও আর পাওয়া যাবে না। ক্রিকেট উপদেষ্টা কমিটির পদ যেমন ফাঁকা পড়ে রয়েছে, তেমনই নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যানের পদও খালি। এম এস কে প্রসাদের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। আরও এক নির্বাচকেরও বিদায় নেওয়ার কথা। কিন্তু কাদের আনা হবে?
সৌরভ বরাবর বড় নামকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। হালফিলে নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যান প্রসাদকে নিয়ে নানা কথা উঠেছে। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁর ক্রিকেটীয় অভিজ্ঞতা নিয়ে। যত দূর শোনা যাচ্ছিল, সৌরভও চাইছিলেন বড় কোনও নামকে নিয়ে আসতে। কিন্তু লোঢা সংস্কারের আওতায় প্রায় সকলেই আটকে যাচ্ছেন। সৌরভের প্রজন্মের কেউ হতে পারবেন না কারণ প্রায় প্রত্যেকেই আইপিএলের সঙ্গে যুক্ত। তারও আগে যাঁরা আছেন, হয় ইতিমধ্যেই নির্বাচক হিসেবে পূর্ণ মেয়াদ কাটিয়ে ফেলেছেন, নয়তো সংস্কারের ধাক্কায় ছিটকে যাচ্ছেন। দিলীপ বেঙ্গসরকরের নাম কেউ কেউ বলছেন। তাঁর দু’বছর বাকি আছে বলে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু তাঁকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সহমত নন বোর্ড কর্তারা। দক্ষিণ থেকে শ্রীনি গোষ্ঠী লক্ষ্মণ শিবরামকৃষ্ণণকে আনার চেষ্টা করছে। এম এস কে প্রসাদের জায়গায় তাঁর নির্বাচক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু তিনি চেয়ারম্যান হওয়ার মতো বড় নাম কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে।
যা দাঁড়াচ্ছে, এখনই নির্বাচক কমিটি বা ক্রিকেট উপদেষ্টা কমিটি চূড়ান্ত করা যাচ্ছে না। সৌরভরা ফের সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছেন নতুন গঠনতন্ত্রের সুপারিশ নিয়ে। সেখানে প্রেসিডেন্ট এবং সচিবের ‘কুলিং অফ’ নিয়ে নিয়ম শিথিল করার আবেদন করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, রাজ্য সংস্থায় দু’টি মেয়াদ অর্থাৎ ছয় বছর কাটিয়ে ফেললেই যেন প্রেসিডেন্ট বা সচিবকে ‘কুলিং অফে’ না পাঠানো হয়। তাঁদের ক্ষেত্রে অন্তত বোর্ডে দু’টি তিন বছরের মেয়াদ কাটাতে দেওয়া হোক। এই আবেদন সুপ্রিম কোর্ট মঞ্জুর করলে সৌরভ মাত্র দশ মাসের জন্য নয়, অন্তত তিন বছর প্রেসিডেন্ট থাকতে পারবেন। এর সঙ্গেই আইপিএলকে স্বার্থ সংঘাতের আওতার বাইরে রাখা যায় কি না, তা নিয়েও আদালতে আবেদন করতে চলেছে বোর্ড। মনে করা হচ্ছে, যদি আইপিএলকে স্বার্থ সংঘাতের বাইরে রাখা যায়, তা হলে বোর্ডের বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ পদে বড় নাম নিয়ে আসা সম্ভব হবে।
সত্তর বছরের সময়সীমা অবশ্য কমানোর কথা বলা হচ্ছে একমাত্র আইসিসি প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে। বোর্ডের মধ্যে সত্তরোর্ধ্বরা আসতে পারবেন না। শ্রীনি যাতে আইসিসিতে যেতে পারেন, সেই কারণে সর্বোচ্চ আদালতের কাছে আবেদন করা হচ্ছে, নিয়ামক সংস্থায় প্রতিনিধিত্ব করার জন্য বয়সসীমাটা তুলে দেওয়া হোক।
যদি শ্রীনি না যেতে পারেন, তা হলেও আকাশ মাথায় ভেঙে পড়ছে না। জয় শাহকে ইতিমধ্যেই আইসিসি এগজিকিউটিভ সভায় প্রতিনিধিত্ব করার ব্যাপারে সবুজ সংকেত দিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিনোদ রাইরা ক্ষমতায় থাকাকালীন যে সভায় যেতেন সিইও রাহুল জোহরি। উচ্চ পর্যায়ের অন্যান্য বৈঠকে সৌরভ যান কি না, সেটাও দেখার। বার্ষিক সাধারণ সভায় জয় শাহের নাম প্রস্তাব করেন সৌরভই। ওয়াকিবহাল মহলের অনুমান, যত দিন যাবে, বোর্ডের মধ্যে শ্রীনির ক্ষমতা খর্ব হতে থাকবে। আর ক্ষমতাশালী হয়ে উঠবে সৌরভ-জয় জুটি। সুপ্রিম কোর্টেও যে ফের যাওয়া হচ্ছে, তার প্রধান লক্ষ্য একটিই। প্রেসিডেন্ট এবং সচিব হিসেবে যথাক্রমে সৌরভ এবং জয় শাহের শাসনকাল ২০২৪ পর্যন্ত অটুট রাখা।