‘আমায় বিয়ে করবে’? আংটি হাতে এক হাঁটু মুড়ে ফিল্মি কায়দায় প্রেম নিবেদন করেছিলেন এরিক হাচিনসন। উত্তরে মুখ ঢেকে হাসতে হাসতে সামান্থা লেই উত্তর দিয়েছিলেন, ‘হ্যাঁ করব’।
হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে সেই কথাটাই কানে বাজছিল এরিকের। চোখের সামনে ভাসছিল, সামান্থার সেই আনন্দঘন মুহূর্ত যখন তিনি এরিককে বিয়ে করতে সম্মতি জানিয়েছিলেন।
টানা আট দিন পর চোখ খুলেছেন এরিক। চোখ খোলার পর দেখেন, তিনি হাসপাতালে শুয়ে। সারা শরীরে চোট, মাথায় ব্যান্ডেজ। বাঁ হাতের হাড় মাঝখান থেকে দু’টুকরো হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সে দিকে ভ্রূক্ষেপ না করে তাঁর প্রথম প্রশ্ন ছিল, ‘‘সামান্থা কোথায়?’’সকলেই চুপ।
চিৎকার করে এরিক আবার জিজ্ঞাসা করেন একই কথা? এরিকের দ্বিতীয় প্রশ্নে কান্নায় ভেঙে পড়েন সামান্থার মা। ছুটে বেরিয়ে যান ঘর থেকে।
এরিকের বাবা ছেলেকে জানান, সামান্থা আর বেঁচে নেই। ঝড় ওঠে এরিকের বুকে। ঝাপসা হয়ে ওঠে তাঁর দু’চোখ।
ভাগ্যের পরিহাসে বিয়ের দিনই স্ত্রীকে হারিয়েছেন এরিক। বিয়ে করে আসার পথেই দুর্ঘটনার কবলে পড়েন নবদম্পতি। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় সামান্থার। আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এরিককে।
জ্ঞান ফেরার পর সামান্থার মৃত্যুর খবর পেয়ে প্রথমে ফ্যালফ্যাল করে সবার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলেও কয়েক মিনিটের মধ্যে কান্নায় ভেঙে পড়েন এরিক। এরও প্রায় পাঁচ দিন পর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান এরিক। চলাফেরার শক্তি পেতেই তিনি এখন ব্যস্ত সামান্থার শেষকৃত্য নিয়ে।
মধুচন্দ্রিমা করতে সামান্থাকে নিয়ে ইউরোপ ঘুরতে যাওয়ার কথা ছিল এরিকের। কিন্তু তা স্বপ্নই রয়ে গেল।
এরিক জানান, সামান্থা বিয়েতে রাজি হওয়ার পর কম ঝক্কি ছিল না। এর পর পরিবারের সম্মতি, একাধিক নিয়ম-রীতি পেরিয়ে গত ২৮ এপ্রিল বিয়ে সারেন এরিক এবং সামান্থা।
জমকালো অনুষ্ঠান করে ক্যারোলিনার ফোলি সৈকতে বিয়ে করেন যুগল। নবদম্পতিকে অভিনন্দন জানানোর জন্য উপস্থিত ছিলেন দুই পরিবারের সদস্য এবং বন্ধুবান্ধবরা।
বিয়ে শেষে একটি গাড়ি নিয়ে ফোলি সৈকত ছেড়ে বেরিয়ে যান এরিক এবং সামান্থা। গাড়িতে বাজতে থাকা রোমান্টিক গান একসঙ্গে গুনগুন করছিলেন দু’জনেই। দু’চোখে নতুন সংসার পাতার স্বপ্ন দু’জনের চোখেই।
হঠাৎ সজোরে ধাক্কা। উল্টো দিক থেকে ধেয়ে আসা ট্রাকের ধাক্কায় তিন বার পাল্টি খেয়ে রাস্তার ধারে পড়ে যায় গাড়িটি। জ্ঞান হারানোর আগে সামান্থার স্থির চোখের দিকে তাকিয়েছিলেন এরিক। তার পরই চোখের সামনে সব অন্ধকার।
সুস্থ হয়ে স্ত্রীর শেষকৃত্যের কাজ শুরু করেছেন এরিক। এরিকের মা অ্যানেট বলেন, ‘‘এরিককে দেখে ভয় লাগছে। কেমন একটা হয়ে গিয়েছে ছেলেটা। এখন সে সামান্থার পরিবারের সঙ্গে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পরিকল্পনা করছে।’’
অ্যানেট আরও বলেন, ‘‘আমরা বিশ্বাসই করতে পারছি না সামান্থা আর নেই। একে অপরকে খুব ভালবাসত ওরা।’’
এরিকদের গাড়িতে ধাক্কা মারা ওই ট্রাকচালকের নাম জেমি কমোরোস্কি নামে। পুলিশ জানিয়েছে, গাড়ি দুর্ঘটনার সময় তিনি মত্ত অবস্থায় উচ্চগতিতে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। তাঁকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে।