প্র: ঘুরে-ফিরে আবার সেই জ্বর। কী মুশকিল বলুন তো?
উ: সিজন চেঞ্জের সময় একটু আধটু ভাইরাল ফিভার হতেই পারে। তাতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
প্র: বলছেন কী! জ্বর নিয়েই তো আতঙ্ক এখন। এটা পরীক্ষা কর, সেটা পরীক্ষা কর।
উ: না। ঠিক তা নয়। প্রথমেই এত কিছু পরীক্ষা করতে হবে না। শুধু বিশ্রাম নিতে হবে।
প্র: তাতে কি আর জ্বর কমবে?.
উ: জ্বর বাড়লে প্যারাসিটামল খাবেন। দিনে ২-৩ গ্রাম মতো প্যারাসিটামল খেতেই পারেন।
প্র: সদ্য পুজোর ছুটি গেছে। কাজের চাপ প্রচুর। এমন কিছু ওষুধ বলুন যাতে তাড়াতাড়ি জ্বর কমে।
উ: প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোনও ওষুধ খাবেন না। অনেকে মাথা ব্যথার জন্য অ্যাসপিরিন খান। সেটা করবেন না। ডাক্তারের সঙ্গে না পরামর্শ করে প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোনও ওষুধ নিজে নিজে খাবেন না। তবে নিয়মিত প্রেসার সুগারের ওষুধ খেলে সেগুলো বন্ধ করবেন না।
প্র: মানে শুধু প্যারাসিটামলের ভরসায় থাকব?
উ: সে তো জ্বর বাড়লে। এমনিতে বেশি করে জল খাবেন। দিনে অন্তত ৩ থেকে ৪ লিটার। তরল খাবারও খেতে পারেন। তা সে লিকার চা, ফলের রস, স্যুপ, ডালের জল যা ভাল লাগে তাই খাবেন। আর সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে। জ্বর বাড়লে মাথা ধুইয়ে গা মুছিয়ে দেবেন।
প্র: এত কিছু করেও জ্বর যে কে সেই রইল, তখন?
উ: জ্বর না কমলে তখন আর নিজে ডাক্তারি না করে ডাক্তারকে জানাবেন। দরকারে অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হতে পারে। কমপ্লিট হিমোগ্রাম আর ইউরিন রুটিন টেস্টও করতে হবে। দরকারে ডেঙ্গি, চিকুনগুনিয়া, আর ম্যালেরিয়ার জন্য কিছু রক্ত পরীক্ষা করতে হবে। সাত দিনের ওপরে জ্বর থাকলে টাইফয়েডের জন্য রক্ত পরীক্ষা করে নেওয়া দরকার।
প্র: এই যে বললেন ভাইরাল ফিভার। সেখানে অ্যান্টিবায়োটিক খেতে তো ডাক্তাররাই বারণ করেন।
উ: এই ধরনের জ্বরে শরীর খুব দুর্বল হয়ে যায়। তাই পরে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হতে পারে। এ জন্য দরকারে অ্যান্টিবায়োটিকও খেতে হতে পারে। কিন্তু তাই বলে প্রথমেই অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে নেবেন না।
প্র: এত যে রক্ত পরীক্ষার কথা বললেন, তার কি কোনও নিয়ম আছে?
উ: না। যখন তখন করতে পারেন।
প্র: ডেঙ্গি, চিকুনগুনিয়া হলে তো হয়ে গেল...
উ: কিছু ভয়ের না। প্রথম থেকে ঠিক মতো চিকিৎসা করলেই হল। তবে যে কোনও জ্বরে নিজে নিজে চিকিৎসা করাটাই এখন রেওয়াজ। ওষুধ খেয়ে জ্বরকে বাগে আনবার চেষ্টা করেন প্রায় সব্বাই। সেটা না করে জ্বর হলেই আপনার ডাক্তারকে জানাবেন।
প্র: মানে জ্বর হলেই সোজা হাসপাতাল?
উ: তা কেন? বাড়িতেও চিকিৎসা সম্ভব।
প্র: ধরুন ডাক্তার দেখানো সম্ভব হল না। তখন বাড়িতে কী করব?
উ: বেশি করে জল খাবেন। আর জ্বর বাড়লে প্যারাসিটামল। তবে দিন দুই জ্বর থাকলে, সঙ্গে মাথা, পেশি ও গাঁটে গাঁটে প্রবল ব্যথা হলে বা র্যাশ বেরোতে শুরু করলে দেরি না করে অবশ্যই ডাক্তার দেখানো দরকার।
প্র: প্রেগন্যান্ট মহিলা বা বাচ্চাদের হলে?
উ: প্রেগন্যান্ট মহিলারা কোনও রকম অ্যান্টিবায়োটিক খাবেন না। বাড়িতে প্যারাসিটামল খেয়ে দেখতে পারেন। তাতে না কমলে অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলতে হবে। বাচ্চাদের হলে প্যারাসিটামল সিরাপ খাওয়াবেন। সঙ্গে বেশি করে জল খেতে হবে।
প্র: এই জ্বরের পর তো খুব দুর্বল লাগে?
উ: হ্যাঁ। এ জন্য ভাল করে প্রোটিন জাতীয় খাবার খেতে হবে। সে রকম বুঝলে ডাক্তার ভিটামিন খেতে বলবেন।
প্র: জ্বরের মুখে তো কিছু খেতেই ইচ্ছে করে না...
উ: একবারে বেশি করে খেতে হবে না। দুই ঘণ্টা অন্তর অন্তর একটু একটু করে খাবেন। মুখে যা ভাল লাগে। নইলে শরীর আরও দুর্বল হয়ে পড়বে।
প্র: এই জ্বর এড়াতে কী করব?
উ: সিজন চেঞ্জের জ্বর হাঁচি-কাশি থেকে ছড়ায়। তাই আশপাশে কারও হলে একটু সাবধানে থাকতে হবে। মশারি টাঙিয়ে শোবেন। প্রয়োজন মতো মসকিউটো রিপেলার ব্যবহার করবেন। বাড়ির আশপাশে কোনও খোলা পাত্রে বা অন্য কোথাও জল জমে না থাকে, সে দিকে খেয়াল রাখবেন। দিনের বেলায় হাল্কা রঙের সারা শরীর ঢাকা জামা-কাপড় পরার চেষ্টা করবেন।