শিক্ষক-সহ নানান পরিকাঠামোর অভাবে রাজ্যের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে আসন বাতিলের খাঁড়া ঝুলিয়েই রেখেছে মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া (এমসিআই)। ঘর সামলাতে ত্রাহি ত্রাহি রব। পরিস্থিতি সামাল দিতে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-চিকিৎসকদের ফের নিয়োগের পরিকল্পনা করেছে রাজ্য সরকার।
রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, অবসরপ্রাপ্তদের নিয়োগ করা হবে দু’ভাবে।
• যাঁরা স্বাস্থ্য দফতরেরই চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন এবং বয়স ৬৫-র মধ্যে, তাঁদের স্থায়ী চাকরিতে নতুন করে নিয়োগ করা হবে।
• যে-সব শিক্ষক-চিকিৎসক আগে স্বাস্থ্য দফতরে কাজ করেননি এবং বয়স ৬৫-এর মধ্যে, তাঁদের চুক্তিতে নিয়োগ করা হবে। প্রয়োজনে তাঁদের নিয়োগের বয়ঃসীমা ৭০ বছর পর্যন্ত শিথিল করা হতে পারে।
অবসরপ্রাপ্তদের চুক্তি-নিয়োগের ফাইল সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পাঠানো হয়েছে। নির্বাচনের জন্য ফাইল আটকে ছিল। ভোট পর্ব সাঙ্গ হওয়ায় মুখ্যমন্ত্রী এ বার তাতে সই করবেন বলেই স্বাস্থ্যকর্তাদের আশা। কারণ, সমস্যা মেটাতে সরকারের কাছে এ ছাড়া আর কোনও পথ ছিল না।
শিক্ষক-চিকিৎসকের অভাবে সম্প্রতি রাজ্যের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে মোট ৭৫০টি আসনের অনুমোদন বাতিলের সুপারিশ করেছে এমসিআই। তারা জানিয়েছে, অনুমোদন পেতে হলে অগস্টের মধ্যে পরিকাঠামো ঠিকঠাক করতে হবে। স্বাস্থ্য দফতরের খবর, মেডিক্যালে যথাযথ পঠনপাঠন চালু রাখতে গেলে আরও প্রায় তিন হাজার শিক্ষক-চিকিৎসক দরকার। এবং প্রয়োজনটা ক্রমশ বেড়েই চলবে।
সম্ভাব্য যে-সব পথে শিক্ষক-চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ানো যেতে পারে, তার সবই খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান স্বাস্থ্য (শিক্ষা) অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর মন্তব্য, “অবসরপ্রাপ্তদের পুনর্নিয়োগে কোনও অন্যায় নেই। চুক্তি-নিয়োগের সঙ্গে সঙ্গে এখন যে-সব শিক্ষক-চিকিৎসক রয়েছেন, তাঁদের বছরে দু’বার প্রোমোশন দিয়ে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর, অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর বা প্রফেসরের সংখ্যা বাড়ানো হবে।” স্বাস্থ্য দফতরের খবর, জেলা, মহকুমা বা স্টেট জেনারেল স্তরের হাসপাতালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী যে-সব চিকিৎসক কাজ করছেন, তাঁদের সেখান থেকে তুলে দিয়ে বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে পাঠিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনাও আছে।
রাজ্যে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-চিকিৎসকদের নতুন করে নিয়োগের ঘটনা একেবারে নতুন নয়। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, প্রায় এক যুগ আগে, বাম আমলে প্রথম সারির বেশ কয়েক জন প্রফেসর সরকারি চাকরি ছেড়ে দেওয়ায় আচমকা শূন্যস্থান তৈরি হয়। তখন ‘এমিরেটাস প্রফেসর’ পদ তৈরি করে অবসরপ্রাপ্ত কয়েক জন শিক্ষক-চিকিৎসককে সেখানে ফের নিয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা আংশিক সময়ে কাজ করতেন বলে এমসিআই আপত্তি তোলে এবং কিছু প্রশাসনিক জটিলতা তৈরি হওয়ায় ওই নিয়োগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে সম্প্রতি স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন স্বশাসিত কল্যাণী মেডিক্যাল কলেজে কিছু অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-চিকিৎসককে পুনর্নিয়োগ করা হয়েছে। সেই ফর্মুলা সরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলিতেও ব্যবহার করতে চাইছে স্বাস্থ্য দফতর।
তবে অবসরের পরে ক’জন শিক্ষক-চিকিৎসক পুনর্নিয়োগে আগ্রহী হবেন, তা নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের অনেক কর্তারই সংশয় আছে। পাশাপাশি, অবসরপ্রাপ্তদের ফের নিয়োগের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে বামপন্থী চিকিৎসক সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিসেস ডক্টরস।’
তাদের মতে, এই পরিকল্পনা সফল করতে হলে অবসরপ্রাপ্তদের পেনশনের থেকে বেশি বেতন এবং প্রাইভেট প্র্যাক্টিসের অনুমতি দিতে হবে। সর্বোপরি এতে কর্মরত শিক্ষক-চিকিৎসকদের পদোন্নতি যাতে ধাক্কা না-খায়, সে-দিকে নজর রাখতে হবে।