শোকস্তব্ধ মৃত বালকের বাবা। ছবিটি তুলেছেন বিশ্বরূপ বসাক।
‘চিকিৎসায় গাফিলতিতে শিশু মৃত্যুর অভিযোগ নিয়ে উত্তপ্ত হল উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ। মঙ্গলবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের নাম নীলরুদ্র রায়। (৭)। বাড়ি চোপড়ার সোনাপুরে। অভিযোগ, সোমবার অস্ত্রোপচারের পর রোগীকে সঠিক নজরদারিতে রাখা হয়নি। তাকে ওটি-র বাইরে শয্যায় ফেলে রাখা হয়। সেখানে দেখভালের কেউ ছিলেন না। ওই সময় নীলরুদ্র হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাই সঠিক সময়ে চিকিৎসা হয়নি। পরে যখন নজরে আসে তখন চেষ্টা করেও তারা বাঁচাতে পারেননি। ওই অভিযোগ তুলে এ দিন হাসপাতালের সুপারের দফতরে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান পরিবারের লোক। পুলিশে অভিযোগ হলে দেহের ময়নাতদন্ত করানো হয়।
কী ঘটেছে চিকিৎসককে লিখিত ভাবে তা জানানোর দাবি তোলেন পরিবারের লোকেরা। সেই মতো দুই চিকিৎসক অভিষেক বিশ্বাস ও সুদেব সান্যাল কী ঘটেছে তা জানান। নীলরুদ্রের এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে পরিচিতির সুবাদে পরিবারের পাশে দাঁড়ান স্থানীয় গোঁসাইপুর এলাকার তৃণমূল নেতারাও। ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে তাঁরা ময়নাতদন্ত করানোর দাবি করেন। রোগীর বাড়ির লোকদের অভিযোগ, অজ্ঞানের সময় মাত্রাতিরিক্ত ওষুধ প্রয়োগ হয়েছে। সঠিক সময়ে জ্ঞান ফেরেনি নীলরুদ্রর। অ্যানাস্থেসিস্ট নিকিতা মিশ্র বলেন, “পুরো অজ্ঞান করা হয়নি। ‘স্পাইনাল অ্যানাস্থেসিয়া’ পদ্ধতি অজ্ঞান করা হয়েছিল। কোনও সমস্যা হয়নি।” চিকিৎসক অভিষেক বিশ্বাস নীলরুদ্রর অস্ত্রোপচার করেছেন। তিনি বলেন, “অস্ত্রোপচারে ত্রুটি হয়নি। ওয়ার্ডে দেওয়ার আগে ওটির কাছে শয্যায় নজরদারিতে রাখা হয়। সেখানে হৃদরোগে আক্রান্ত হয় নীল।” অস্ত্রোপচারের পর সঠিক নজরদারিতে কেন রাখা হয়নি সে ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ সদুত্তর দিতে পারেননি। হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার শেখররঞ্জন বসু বলেন, “ওটিতে পর পর অস্ত্রোপচার হয়। এক জনের হয়ে গেলে তাকে নজরদারির জন্য ওটি চত্বরেই শয্যায় রাখা হয়। পরে চিকিৎসক জানালে শয্যায় নিয়ে যাওয়া হয়। অভিযোগের ভিত্তিতে বিস্তারিত খতিয়ে দেখা হবে।” হাসপাতাল সুপার নজরদারিতে রাখার কথা বললেও সেখানে চতুর্থ শ্রেণির স্বাস্থ্যকর্মী ছাড়া কেউ ছিলেন না।
সোমবার বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ হাইড্রসিল অস্ত্রোপচারের জন্য ওই বালককে ওটিতে নিয়ে যাওয়া হয়। অভিযোগ, ওষুধ এনে হিমাংশুবাবু দেখেন অস্ত্রোপচার করার পর ছেলেকে ওটির বাইরে শয্যায় ফেলে রাখা হয়েছে। কিছুক্ষণ পর জুনিয়র চিকিৎসক ওটি থেকে বেরিয়ে বালকটিকে অচৈতন্য পড়ে থাকতে দেখেন। তিনি রোগীকে পরীক্ষা করার পর ওটিতে থাকা চিকিৎসকদের খবর দেন। ফের নীলরুদ্রকে ওটির ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘণ্টা দুয়েক পর তাকে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে নিয়ে যাওয়া হয়। হিমাংশুবাবুর অভিযোগ, আইসিইউ’তে কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস চলছিল। তা দেখিয়ে সঠিক চিকিৎসা হচ্ছে বলে তাঁকে লিখে দিতে বলা হয়। ভোর সাড়ে ৩টা তিনি জানতে চান ছেলে কেমন আছে? আইসিইউ’র এক জুনিয়র চিকিৎসক জানান ভাল আছে। তার কিছুক্ষণ পরে জানানো হয় ছেলে মারা গিয়েছে।